দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সিবিএসই এবং আইসিএসই ও আইএসসি পরীক্ষা এ বছরের জন্য বাতিল করার ঘোষণা ইতিমধ্যেই হয়েছে। বাংলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সম্ভবত পৃথক ফল হবে না।

সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি যে রিপোর্ট চূড়ান্ত করেছে তাতে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে পরীক্ষা না হলেও ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে তা নিয়ে একাধিক সুপারিশ থাকতে পারে কমিটির রিপোর্টে।

রাজ্যে এ বছর স্কুলে বসে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সম্ভবত হচ্ছে না। স্কুলশিক্ষা দপ্তরের নিয়োগ করা বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাবিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে করোনা অতিমারী পরিস্থিতিতে রাজ্যের ১০ হাজার মাধ্যমিক ও ৭ হাজার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে পড়ুয়াদের সশরীরে পরীক্ষার আয়োজন এখন সম্ভব নয়।

কেন্দ্র বোর্ডের পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে নবান্ন জানিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক হবে। কিন্তু অনেকের মতে, সিবিএসই বাতিলের পর রাজ্য চাপে পড়েছে। কেন্দ্র সরকার যখন বলছে, এই মুহূর্তে পরীক্ষা নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তখন রাজ্য সেই ঝুঁকি দেখালে সমালোচনা হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।

সরকারের এক আমলার কথায়, বস্তুত কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক বোর্ডের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সময়েই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে বাংলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে না। সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে একটা ‘কমিটির আবরণ’ দেওয়া হয়েছে মাত্র। তবে হ্যাঁ ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানা দরকার ছিল। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা তো এবার কলেজে ভর্তি হবে। সুতরাং তাদের মূল্যয়ন করা অপরিহার্য।

জানা গিয়েছে কমিটির সদস্যদের বেশিরভাগের মতে, পরীক্ষা নেওয়া এখন ঠিক হবে না। যে বয়সের ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তাদের টিকাকরণ হয়নি। তাই পরীক্ষা নেওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। সে ক্ষেত্রে
উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের বাড়িতে বসিয়ে হোম অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়নের প্রস্তাব রয়েছে।

বিজ্ঞান বিভাগে ৩০ নম্বর প্র্যাকটিক্যাল এবং কলা ও বাণিজ্যে ২০ নম্বরের প্রজেক্টের নম্বর জমা পড়েছে সংসদের কাছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক অসম্পূর্ণ পরীক্ষার বিবেচনা করা হতে পারে। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ১০ নম্বরের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন এবং নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার ফল বিবেচনা করা হতে পারে।

মূল্যায়ন হবে কী ভাবে? সূত্রের খবর, ছ’সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি জানিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে হোম অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা হতে পারে। অর্থাৎ বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্র স্কুলের মাধ্যমে পড়ুয়াদের বাড়িতে পাঠিয়ে, তার ভিত্তিতে লেখা উত্তর আবার স্কুলেই জমা করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দ্রুত ফলপ্রকাশ সম্ভব। কারণ, স্কুলের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই তার মূল্যায়ন করবেন। অথবা ইতিমধ্যে ল্যাবভিত্তিক বিষয়ে যে ৩০ নম্বর ও নন-ল্যাবভিত্তিক বিষয়গুলিতে ২০ নম্বরের প্রজেক্টে পড়ুয়াদের প্রাপ্ত নম্বর স্কুলের মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে জমা পড়েছে, প্রয়োজনে রেজাল্ট তৈরির ক্ষেত্রে সেগুলোও বিবেচনা করা যেতে পারে। সবটাই অবশ্য নির্ভর করছে, রাজ্য প্রশাসনের চূড়ান্ত সম্মতির উপর।

মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কী হবে? মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ২০১৯ সালের নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট বিবেচনা করে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ কমিটির মত। অথবা নবমের প্রথম সামেটিভ, ষাণ্মাসিক এবং বার্ষিক পরীক্ষার গড় করে ৫০ শতাংশ ওয়েটেজ আর এ বছর মাধ্যমিকের প্রজেক্টে বরাদ্দ ১০ নম্বরকে ভিত্তি করে পড়ুয়াদের যে নম্বর দেওয়া হয়েছে, তার উপরে ৫০ শতাংশ ওয়েটেজ দিয়ে একযোগে রেজাল্ট তৈরি করা যেতে পারে। তবে সবই চূড়ান্ত সম্মতির জন্য প্রস্তাবিত রিপোর্টে পেশ করা খসড়া মাত্র।

সরাসরি স্কুলে এসে পরীক্ষায় সমস্যা কোথায়? এই প্রশ্নে পড়ুয়াদের পক্ষে একাধিক পয়েন্ট উঠে এসেছে। প্রথমত, করোনা পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে সিবিএসই এবং সিআইএসসিই দশম ও দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করেছে। তারা বাড়ি বসে গত এক বছরে অনলাইনে স্কুলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমেই পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের পথে হাঁটতে চলেছে। একই পথ ধরে দেশের আরও সাতটি রাজ্য দশম ও দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করেছে। ফলে বহু রাজ্যেই মাসের পর মাস ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বোর্ড পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে তাদেরও হাতের পাঁচ বলতে সেই স্কুলের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া।

দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্ট সিবিএসই এবং সিআইএসসিই-র বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে সিলমোহর দিয়েছে। ফলে দেশের কোনও রাজ্য বোর্ড সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে এসে পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিলে সেই পরিস্থিতিতে একজনও পড়ুয়া সংক্রামিত হলে, গোটা বিষয়টি জটিল আকার নিতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।

তৃতীয়ত, করোনা অতিমারীর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশ বা বিশ্বজুড়ে যে টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে, তাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বড় অংশই ১৮ বছরের কম বয়সি হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে তাদের টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। এই সব পরিস্থিতি বিচার করেই রাজ্য সরকারের স্কুলশিক্ষা দপ্তর নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি আপাতত ক্যাম্পাসে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে বলে খবর।

এদিকে, সিবিএসই-সিআইএসসিই দশম ও দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষা বাতিল করায় সর্বোচ্চ আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা দুই জাতীয় বোর্ডের লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার মূ্ল্যায়ন কী ভাবে করা হবে, সে বিষয়েও কোর্ট জানতে চেয়েছিল। আইএসসি-র তরফে চার সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ দু’সপ্তাহের মধ্যে মূল্যায়ন পদ্ধতি জানাতে বলেছে। তার প্রেক্ষিতে সিবিএসই শুক্রবার দশ সদস্যের মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেছে। তাদের দশদিনের মধ্যেই বোর্ডকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সে দিকেও নজর থাকবে এ রাজ্যের কমিটির অন্তর্গত পর্ষদ ও সংসদ কর্তাদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here