দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ বাংলায় গত পনেরো দিন ধরে লাগাতার কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে। কোনওদিন ১০ হাজার পজিটিভ কেস তো পরের দিন ১১ হাজার, তার পরের দিন ১২ হাজার।

কিন্তু এই বৃদ্ধির হার গত দু-তিন দিনে কিছুটা থমকেছে। মোটামুটি ভাবে তা ১৭ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। ১ মে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭৫১২। ২ মে ১৭৫১৫টি নতুন পজিটিভ কেস পাওয়া গিয়েছে। ৩ মে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭৫০১। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৭৬৩৯ জনের শরীরে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি। দুই জেলায় প্রায় চার হাজার জন করে মানুষের শরীরে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। এই দুই জেলায় অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যাও প্রায় ৫০ হাজার। অন্যদিকে গোটা রাজ্যে কোভিড অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২১ হাজার।

মঙ্গলবারও মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ পেরিয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ১০৭ জনের। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার একদিনে কোভিডে মৃতের সংখ্যা একশ পেরোল।

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নয়া স্ট্রেন । মাত্র তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই নয়া স্ট্রেনের থাবায় গুরুতর অবস্থা হচ্ছে রোগীদের। অন্ধপ্রদেশের কুর্ণুলেই মূলত হদিশ মিলেছে এই নয়া কোভিড স্ট্রেনের। নাম দেওয়া হয়েছে N440K। সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি সংস্থা আবিষ্কৃত এই স্ট্রেন আরও ১৫ গুন বেশি ভয়ঙ্কর ক্ষতি করতে পারে বলেই অনুমান বিশেষজ্ঞদের।

জানা গিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্ণুল জেলাতেই এই নয়া স্ট্রেনের হদিশ মেলে প্রথম। এই রাজ্যের মধ্যেই আপাতত সীমাবদ্ধ থাকায় নাম দেওয়া হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ স্ট্রেন। যদিও বিশেষজ্ঞদের অনুমান, খুব দ্রুতই এই স্ট্রেনের দেশের অন্য অংশেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের প্রথম দুই স্ট্রেন, B1.617 এবং B1.618 স্ট্রেনগুলির থেকেও ভয়ঙ্কর এই নতুন স্ট্রেন। আগের তুলনায় ১৫ গুন বেশি সংক্রামকও বটে।

জেলা কালেক্টর ভি বিনয় চাঁদ বলেন, ‘আমাদের এখনও এই স্ট্রেন সম্পর্কে ধারনা তৈরি করতে হবে। এই স্ট্রেনই ছড়িয়ে পড়েছে কিনা, তা নিয়েও পর্যালোচনা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে।’ মনে করা হচ্ছে, বিশাখাপত্তনমেই এই স্ট্রেনে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। তাঁদের সকলের মধ্যেই নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। যা আগের তুলনায় একেবারেই আলাদা। মাত্র তিন থেকে চার দিনের মধ্যে বিশাখাপত্তনমের একাধিক কোভিড আক্রান্তের পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করেছে।

কুর্ণুল জেলার কোভিড স্পেশ্যাল অফিসার পিভি সুধাকর বলেন, ‘ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন খুব দ্রুত কাবু করছে রোগীদের। শরীরের প্রভাব পড়ছে অনেক বেশি। এর আগের স্ট্রেনে আক্রান্ত হওয়ার সপ্তাখানেক পর রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যেত। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে মাত্র তিন থেকে চার দিনেই গুরুতর অবস্থায় চলে যাচ্ছেন রোগীরা। এর জেরেই অক্সিজেন এবং ICU বেডের হাহাকার শুরু হয়েছে।’ চিকিৎসকরা আরও জানাচ্ছেন, মূলত তরুণদের মধ্যেই এই স্ট্রেনের প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে।

এদিকে বাংলায় সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে গত শুক্রবারই একগুচ্ছ বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল বাংলার সরকার। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাজ্যে বড় কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে, অন্নপ্রাশন,শ্রাদ্ধানুষ্ঠান জলসা ইত্যাদি বন্ধ রাখা হবে। শনিবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সংক্রান্ত নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিয়েবাড়ির ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৫০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে। শুধু বিয়েবাড়ি নয়, অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য থাকবে। বিয়েবাড়়িতে করোনা সংক্রান্ত বিধি মেনে চলা যেমন মাস্ক পরা, স্যানিটাইজারের ব্যাবহার এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফের শনিবার নতুন নির্দেশিকায় ছাড় দেওয়া হয়েছে বেশকিছু বিষয়কে। যদিও বাজার খোলা-বন্ধের ব্যাপারে যে নির্দেশিকা শুক্রবার জারি করা হয়েছিল, তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

গত শুক্রবারে রাজ্যের মুখ্যসচিব এক নির্দেশিকা জারি করে জানান, আপাতত রাজ্যের সর্বত্র সকাল ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত বাজার, হাট খোলা থাকবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মুদি দোকান এবং ওষুধের দোকানের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনি কে এই নির্দেশিকার বাইরে রাখা হয়েছিল।

ফের শনিবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আরেকটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, মুদি দোকান, ওষুধের দোকানের পাশাপাশি মিষ্টির দোকান, মাংসের দোকান, মোবাইল রিচার্জের দোকান বন্ধের বাইরে থাকছে অর্থাৎ এই দোকানগুলি খোলা থাকবে।

এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে যে, বিয়ে বাড়ি বা এইরকম সামাজিক অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি লোক একত্রিত হতে পারবে না। সেখানেও মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে। যদিও এই নির্দেশিকার বাস্তব প্রতিফলন আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে যদি নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়, তা দেখার দায়িত্ব কার তা নিয়েও চিন্তায় সাধারণ মানুষ। শুক্রবারের নির্দেশিকা অনুযায়ী শপিং মল, সিনেমা হল, সুইমিংপুল, বিউটি পার্লার ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলি আপাতত বন্ধ থাকবে।

এদিকে, রাজ্য সরকারের এই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের একাংশের মতামত, সকালে দোকান খোলার যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়। কারণ, দোকান খুলে গুছিয়ে উঠতে উঠতেই দোকান বন্ধের সময় চলে আসছে। এর পাশাপাশি বনগাঁর ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের এই নির্দেশিকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে লিখিত আকারে কিছুই দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র পুলিশ এসে মুখে সেই নির্দেশিকার কথা বলে যাচ্ছে। এতে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

অন্যদিকে নবান্ন জানিয়েছিল, শর্তসাপেক্ষে খোলা থাকবে বাজার। সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা যাবে দোকান। শনিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, ষুধের দোকান, ওষুধের সরঞ্জাম কেনার দোকান, মুদি দোকান, মাংসের দোকান, যানবাহন চলাচল, বিদ্যুৎ, টেলিকম ইত্যাদি এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক।

এই অবস্থায় দেশে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নয়া স্ট্রেন৷আসতে পারে তৃতীয় ঢেউ, কাজ হবে না সপ্তাহান্তিক লকডাউনে, জানালেন এমস প্রধান৷

সঙ্কটের মেঘ কাটার কোনও ইঙ্গিত নেই এখনও। এই আবহে নতুন আশঙ্কার কথা শোনালেন ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’(এমস)-এর ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপর্যস্ত ভারতবাসীকে তাঁর বার্তা, অদূর ভবিষ্যতেই তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে দেশে।

অতিমারির মোকাবিলায় সপ্তাহান্তিক লকডাউন, আংশিক লকডাউন বা রাত্রীকালীন কার্ফুর মতো দাওয়াইয়ে কোনও কাজ হবে না বলেও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে দীর্ঘকালীন লকডাউনের পথে হাঁটতে হতে পারে।

গুলেরিয়া মঙ্গলবার বলেন, ‘‘৩ টি বিষয়ে আমাদের নজর দেওয়া উচিত। প্রথমত, হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে জোর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সংক্রমণ ঠেকাতে অতিসক্রিয়তা দেখাতে হবে। তৃতীয়ত, টিকাকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে।’’ অক্সিজেন সরবরাহের মতো আপৎকালীন বিষয়গুলিতে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

দীর্ঘমেয়াদী পূর্ণ লকডাউন জারি করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন এমস প্রধান। পাশাপাশি, মানুষের জীবিকা এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও পরিষেবার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগেই গুলেরিয়া সতর্ক করেছিলেন, করোনার ভারতীয় প্রজাতি অন্যগুলির চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। শুধুমাত্র দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়ানো নয়, ভাইরাসের ভারতীয় রূপ ক্ষেত্র বিশেষে বেশি বিপজ্জনক বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।

কলকাতার এ্যাপোলোর চিকিৎসক শ্যামাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের সময় – এর প্রতিনিধি রতন সিনহা কে একটি সাক্ষাতকারে জানান অদূর ভবিষ্যতেই তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে দেশে , আমাদের কে তার আগেই আরও বেশি সচেতনহতে হবে তৃতীয় ঢেউ আসতে দেবনা এই প্রত্যয় নিয়ে এই মুহুর্ত থেকে নিজেদেরকে তৈরী হতে হবে৷ মনে রাখতে হবে বাইরে থেকে কাজ শেষ করে ঘরে ফিরেই গরম জলে স্নান করতে হবে , ভাল ভাবে হ্যান্ড ওয়াশ করে তবেই কোন খাবার খেতে হবে৷ প্রয়োজনে কোন চিকিৎসকের সঙ্গে শারীরিক কোন সমস্যা থাকলে পরামর্শ নিতে হবে৷যতটা সম্ভব বাড়ীতে থাকতে হবে এবং বদ্ধ জায়গায় না থাকাই ভাল৷ অবশ্যই মাস্ক ব্যাবহার করতে ভুলবেন না৷

সীমান্ত শহর বনগাঁয় আইএনটিটিইউসি এর পক্ষ থেকে লাইট বোর্ডের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা সংক্রান্ত সচেতনতার প্রচার চলছে জোরকদমে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here