দেশের সময়: বাংলার গর্ব মমতা’‌ কর্মসূচিতে সাড়া পড়ে গেছে জেলায় জেলায়। ব্যাপক উৎসাহে মাঠে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তাঁরা শুনলেন মানুষের অভাব–অভিযোগ। মানুষকে বোঝালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা।পশ্চিম বঙ্গ জুড়ে তারই সুফল পেতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।

আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি পাওয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী প্রকল্পের কারনে উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত অঞ্চল বাগদা বিধানসভা এলাকায় বর্তমানে নাবালিকা বিয়ে অনেকটাই কমে গেছে। দরিদ্র পরিবারের কর্তারা যেখানে একসময় তাঁদের বাড়ির নাবালিকা মেয়েদের অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বিয়ে দিয়ে দেবার কথা ভাবতেন, এখন সেখানে সেই পরিবারের মেয়েরা কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ সাহায্য পেয়ে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছে।

পরিবারের কর্তাদের মানসিকতারও বদল ঘটেছে। ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গত শনিবার সাংবাদিকদের সামনে এমনই দাবি করলেন বাগদা বিধানসভা এলাকার তৃণমূল নেতানেতৃরা।

একই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সীমান্ত শহর বনগাঁ সহ গোটা বনগাঁ উত্তর বিধানসভা এলাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরনায় এবং সহযোগিতায় সাংস্কৃতিক মঞ্চ নীলদর্পন, অসহায় বৃদ্ধ–বৃদ্ধাদের থাকা–খাওয়ার জন্য শরণ্য আবাসন, বৈদ্যুতিক চুল্লি, স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য স্বাস্থ্যদ্বীপ, সিটি স্ক্যান, ডায়েলিসিস সেন্টার, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাস, অত্যাধুনিক বিনোদন পার্ক সহ বহু উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের সমস্তরকমের প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ, এদিন তারই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বনগাঁর তৃণমূল নেতারা।

পাশাপাশি তাঁরা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জনবিরোধী পদক্ষেপের সমালোচনা করেন।

এদিন বাগদার কর্মসূচিতে তৃণমূল নেতানেতৃরা বলেন, বাগদার মতো একটি অঞ্চলে এখন কোথাও কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। এই বিধানসভা এলাকায় ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে একটি আইটিআই কলেজ। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এবং পরিচালনায় রাজ্যে প্রথম দিল্লি বোর্ডের ইংরাজি মাধ্যম স্কুল চালু করার জন্য পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে।

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা এবং তাঁদের পরিবার সহ বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, তপশিলি জাতি থেকে আদিবাসী সমস্ত শ্রেণীর মানুষদের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে প্রকল্প রুপায়িত করেছেন, যার জন্য বলাই যায় তিনি বাংলার গর্ব।

মুর্শিদাবাদের লালবাগ শহরের মতিঝিল পার্কে ‘‌বাংলার গর্ব মমতা’‌ কর্মসূচিতে উঠে এল মুর্শিদাবাদের পর্যটনের উন্নয়নে নানা প্রস্তাব। বিধায়ক শাওনি সিংহরায়, তৃণমূল নেতা মহম্মদ আলি ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ছিলেন। মুর্শিদাবাদ বাংলার পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র। ‘‌বাংলার গর্ব মমতা’‌ কর্মসূচিতে এবার স্থানীয় বাসিন্দাদের পুর পরিষেবা দিতে পথে নামলেন দুর্গাপুরের মেয়র পারিষদ এবং ব্লক সভাপতিরা।গত বৃহস্পতিবার সকালে এলাকার বস্তিবাসীদের অভাব–অভিযোগ শুনলেন মেয়র পারিষদ। অভাব–অভিযোগ দ্রুত সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেন তাঁরা।

আরামবাগ মহকুমা জুড়েও চলছে এই কর্মসূচি। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হলেন রাজ্যের সংশোধনাগার মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। এই কর্মসূচিতে অভিনবত্ব আনলেন বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস। টাকির ইছামতী নদীর বুকে লঞ্চে তিনি সাংবাদিকদের জানালেন, বসিরহাটের উন্নয়নের খতিয়ান। জলপথে ‘‌জলযোগে যোগাযোগ’‌ কর্মসূচিতে দীপেন্দুর সঙ্গে ছিলেন টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখার্জি, উপপুরপ্রধান আজিজুল গাজি, কর্মাধ্যক্ষ সাহানুর মণ্ডল প্রমুখ।

বাংলার গর্ব মমতা

এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে জেলা জুড়ে জলযোগে যোগাযোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গত শুক্রবার শহর পূর্ব বর্ধমানের বাদামতলায় বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক রবিরঞ্জন চ্যাটার্জি জনপরিষেবা কেন্দ্রে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলা মনে আড্ডা দিলেন। হুগলির পুরশুড়াতেও হল একই কর্মসূচি। সেখানেও ভাল সাড়া পাওয়া গেছে।

বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা, বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা এবং বর্ধমান পুরসভা ত্রিমুখী উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ গোটা শহরে হয়ে থাকে। এদিন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বিধায়ক রবিরঞ্জনের কাছে সাংবাদিকরা উন্নয়নের খতিয়ান সম্পর্কে জানতে চান। উত্তরে দু’বারের বিধায়ক রবিবাবু পাল্টা প্রশ্ন করে সাংবাদিকদেরই তাঁর উন্নয়নের খতিয়ান জানতে চাইলেন।

ঘটনা প্রসঙ্গে শহরের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে উঠে আসে। রবিবাবুর কথায়, ‘‌শহরের বুক চিরে বেরিয়ে যাওয়া জিটি রোডের পূর্বে উল্লাস ও পশ্চিমে নবাবহাট পর্যন্ত ফোর লেন করা হয়েছে। ক্রমে সৌন্দর্যায়নেও হাত দেওয়া হয়েছে। এই বিধানসভা এলাকার কোথাও কাঁচা রাস্তা নেই।

দু-একটি ক্ষেত্র ছাড়া রাস্তাঘাটের সর্বত্র আলোয় উজ্জ্বল হয়ে আছে। নবনির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজের নীচের অংশ উন্নয়ন করা হবে। আলমগঞ্জের জীর্ণ সেতু পুনঃসংস্কার করা হয়েছে। বিরহাটার পুরনো সেতুটিও পুনঃসংস্কার করে মানুষের চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। গোলাপবাগের রাস্তা চওড়া করে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে। সর্বমঙ্গলা মন্দির সংস্কার হয়েছে।

ম্যান্ডেলা পার্কে আন্ডার গ্রাউন্ড পার্কিংও সাজানো হয়েছে। এই ভাবে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মানুষের উন্নয়ন করা হয়েছে।’‌ পাশাপাশি তিনি হকার্স নিয়ে সমস্যার সমাধান হয়নি এবং শহরের মধ্যে দিয়ে জিটি রোডে ক্রিসক্রস পদ্ধতিতে বাস চালানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
‘‌বাংলার গর্ব মমতা’‌ কর্মসূচিতে পুরশুড়া বিধানসভা এলাকায় গত শুক্রবার ‘‌জলযোগে যোগাযোগ’‌ কর্মসূচি পালিত হল। ছিলেন হুগলি জেলা সভাধিপতি মেহেবুব রহমান, প্রাক্তন বিধায়ক পারভেজ রহমান, প্রবীণ তৃণমূল নেতা জয়দেব জানা, হুগলি জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি গোপাল রায় প্রমুখ। স্থানীয় নেতা কিঙ্কর মাইতির উদ্যোগে এই কর্মসূচি হয়। এ বিষয়ে কিঙ্কর মাইতি বলেন, ‘‌দল আমাকে আবার দায়িত্ব দিয়েছে, দলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি সংগঠনকে আবার শক্তিশালী করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’‌ উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার জয়লাভ করলেও এই পুরশুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে পিছিয়ে ছিলেন।

‌জলযোগে যোগাযোগ কর্মসূচিতে শনিবার বাইপাসে বোট ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী ও কসবার বিধায়ক জাভেদ খান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে কাউন্সিলর ফৈয়াজ খান। বৈঠকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকরা। তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে মন্ত্রীর মুখে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরে কী কী কাজ হয়েছে তার সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‌যখনই কোথাও কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দুর্যোগ হয় আমাদের দপ্তর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকে।’‌

এদিকে, এদিন সকাল থেকে একেবারেই অন্য মেজাজে ছিলেন রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ও চন্দননগরের বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন। জলযোগে যোগাযোগ কর্মসূচিতে এদিন তিনি কোনও গুরুগম্ভীর মেজাজে ছিলেন না। এর আগে তিনি যখনই চন্দননগরে এসেছেন সব সময়েই হাতে ঠাসা কাজ নিয়ে। সাংগঠনিক সভায় বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি দলীয় কার্যালয়ে শুনেছেন সাধারণ মানুষের অভাব–অভিযোগের কথা।

কিন্তু এদিন চন্দননগর রবীন্দ্রভবনের জ্যোতিরিন্দ্র সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটান মন্ত্রী। আলাপচারিতায় উঠে আসে বিধায়ক থাকাকালীন গত কয়েক বছরের নানা অভিজ্ঞতা এবং কাজের প্রসঙ্গ। একইসঙ্গে ফুরফুরে মেজাজে চলে জমিয়ে আড্ডা।

অন্যদিকে, জলযোগে যোগাযোগ কর্মসূচিতে উঠে এল খড়দাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রসঙ্গ। খড়দা রেলগেটে হওয়া নিত্য যানজটে জেরবার এখানকার মানুষ। আর তা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায়, আর তা হল, রেললাইনের ওপর দিয়ে ওভারব্রিজ। শনিবার স্থানীয় ‘‌শিল্পী’‌ অনুষ্ঠানবাড়িতে সাংবাদিক ও তৃণমূল নেতৃত্বের মুখোমুখি আলোচনায় জানানো হল এই ওভারব্রিজের দাবি।

প্রকৃতপক্ষে জমিজটে আটকে পড়েছে ওভারব্রিজ তৈরির কাজ। তবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে কাজ শুরু করার আশ্বাস দিলেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। সঙ্গে ছিলেন তাপস পাল, সুকণ্ঠ বণিক, কাজল সিন্‌হা, দিব্যেন্দু চৌধুরি, সুকুর আলি–সহ তৃণমূল নেতা–‌কর্মীরা। পাশাপাশি বজবজের বিধায়ক অশোক দেব বজবজ ঘোষ প্যালেসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here