দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুক্রবার লাদাখে দাঁড়িয়ে চিনের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছিলেন, “সাম্রাজ্য বিস্তারের জমানা খতম হয়ে গিয়েছে। এখন উন্নয়নের জমানা। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হয় পরাস্ত হয়েছে, কিংবা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে”।

মোদীর সেই হুঁশিয়ারি শুনে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চিন। ভারতে চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র জি রং বলেন, “চিনকে বিস্তারবাদী বলে মন্তব্য করার কোনও কারণ নেই”।

মজার ব্যাপার হল, প্রধানমন্ত্রী বেজিংয়ে উদ্দেশে বার্তা দিলেও চিনের নাম মুখে আনেননি। কিন্তু ঠাকুর ঘরে কে-র মতই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চিনা মুখপাত্র। তিনি এও বলেন, “প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাদ বির্তকে অরিরঞ্জিত করে বা কারসাজি করে দেখানো ঠিক না।” তাঁর কথায়, ১৪টি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ১২টির সঙ্গে চিন আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত চূড়ান্ত করেছে। তা শান্তিপূর্ণ ভাবেই করেছে। এবং তার মাধ্যমে স্থল সীমানাকে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে”।

যদিও ভারতীয় কূটনীতিকদের কথায়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে চিনের ব্যবহার কেমন তা তারাই জানে। অন্যের ভূখণ্ড কব্জা করার ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট চিনের জুরি নেই।

লাদাখ সীমান্তে ভারত-চিন উত্তেজনার পারদ উঁচু তারেই বাধা ছিল। শুক্রবার কৌশলগত ভাবে তা আরও চড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন সকালে আগাম ঘোষণা না করেই লাদাখে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত। লেহ-র নিমোতে সেনা জওয়ান ও অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুর্বল কখনও শান্তি কায়েম করতে পারে না। তার পারে একমাত্র সাহসীরাই।”

চিনা আগ্রাসনের মুখে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে আরও জেদ ও উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ভারতের এই পবিত্র মাটির আপনারা বীর সন্তান। আপনাদের অসীম সাহস ও ভিতরের আগুন দেখেছে শক্রপক্ষ। ভারতের প্রতিটি মানুষ সে তিনি দেশেই থাকুন বা বিদেশে—বিশ্বাস করেন দেশকে নিরাপদ ও মজবুত রাখতে আপনারা ভীষণ ভাবে সক্ষম। গোটা দেশ আপনাদের পাশে রয়েছে।” মোদীর কথায়, “আপনারা যে উচ্চতায় মোতায়েন রয়েছেন, আপনাদের সাহস তার থেকেও উঁচু। আপনাদের বাহুর বল এই পর্বতমালার থেকেও বেশি। আর আপনাদের আত্মবিশ্বাস, প্রত্যয় ও আস্থা এই পর্বত শিখরের থেকেও অটল।” প্রধানমন্ত্রী যখন এই বক্তৃতা দেন তখন জওয়ানদের মধ্যে থেকে ‘ভারত মাতার জয়’ ও ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি ওঠে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রী আজ যে বার্তা দিয়েছেন তাকে বেজিংয়ের উদ্দেশে কার্যত হুঁশিয়ারি বলা যায়। এই কঠোর বার্তার প্রয়োজন যে ছিল তা দেশের কূটনীতিকরা সমস্বরেই বলছিলেন। তা কেন জরুরি তাও বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলতে চেয়েছেন, ভারত শান্তির পক্ষে। কিন্তু দুর্বল মনোভাব দেখালে শান্তি স্থাপন সম্ভব নয়। তখন অপর পক্ষ পেয়ে বসে। বরং যারা সাহস দেখাতে পারে তারাই শান্তি কায়েম করতে পারে। অর্থাৎ বেজিং চোখ রাঙালে ভারতও চোখ রাঙাতে জানে। সুতরাং বেয়াদপি বন্ধ করে চিন আলোচনার টেবিলে আসুক। সমানে সমানে কথা হোক। সমঝোতা সূত্র উভয়েই পালন করুক। সীমান্তে শান্তি কায়েম হোক। নইলে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের জবাব ভারত ভালই দিতে জানে।

প্রধানমন্ত্রীর লাদাখ সফর নিয়ে বেজিং থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “উত্তেজনার পারদ নামাতে ভারত ও চিনের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনা চলছে। এই অবস্থায় কোনও পক্ষের এমন কিছু করা উচিত হবে না যার ফলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here