দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একুশের ভোট সময়ে হলে আর সাত মাসের মতো বাকি। কিন্তু দেরি না করে আজই প্রশ্নটা পেড়ে ফেললেন দিদি। জানতে চাইলেন, বিধানসভা ভোটে আপনারা কে কে ফের টিকিট পেতে চান হাত তুলুন দেখি! স্ক্রিনে দেখা গেল প্রায় সবাই হাত তুলেছেন। দিদির পাশে বসে থাকা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও হাত তুলেছেন। কয়েক জন অবশ্য ইতস্তত করছিলেন। দিদি বললেন, এই দেখুন আমিও হাত তুলছি। যে যেখানে বিধায়ক রয়েছেন, সেখানেই প্রার্থী হবেন।

উপরের সম্পূর্ণ তথ্যই দেশের সময়-এর প্রতিনিধিরা শাসক দল সূত্রে জেনেছেন। কারণ, শুক্রবার দলের সমস্ত বিধায়ক ও জেলা সভাপতিদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ভিডিও কনফারেন্স প্রত্যক্ষ করার অনুমতি সাংবাদিকদের ছিল না। কলকাতায় এক সঙ্গে বসেছিলেন দিদি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকিরা ছিলেন যে যাঁর এলাকায়। তাঁদের ইনস্ট্রুমেন্টে অবশ্য মাইক্রোফোন মিউট করা।

এ বার যে একুশে জুলাইয়ের মহা সমাবেশ হবে না তা আগেই জানিয়েছিলেন দিদি। ভোট বছরে ওই মঞ্চ থেকেই দলকে উৎসাহ উদ্দীপনা যোগানোর চেষ্টা করেন তিনি। ঠিক যেমন আঠারো সালের সমাবেশে বলেছিলেন, ৪২ এ ৪২ চাই। কিন্তু কোভিডের কারণে এ বার সেই সুযোগ নেই। এদিনের ভিডিও কনফারেন্সে দিদি জানিয়েছেন, এ বার একুশে জুলাই বুথে বুথে পালিত হবে। তিনিও একটি বুথে থাকবেন। তা ছাড়া পেট্র পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, কয়লা ও রেলের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে দলকে কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামতে বলেছেন। কিছুটা ধমকের সুরে নাকি এও বলেছেন, বিজেপি রাস্তায় আপনারা ঘরে বসে কেন!

তবে গোটা বৈঠকের মূল আকর্ষণ ও তাৎপর্যের বিষয় ওই টিকিট প্রসঙ্গই হয়ে উঠেছিল বলে ঘরোয়া ভাবে অনেকে জানিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরাও একাংশের মতে, দিদির ওকথা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একুশের ভোটে টিকিট পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন। যে হেতু তৃণমূলের ভোট কৌশল সাজানোর নেপথ্যে এখন পেশাদার নিয়োগ হয়েছে, এবং আম ধারনা তৈরি হয়েছে যে সবটাই প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ ও ফর্মুলা মোতাবেক হচ্ছে। তাই বহু বিধায়কের টিকিট কাটা হতে পারে বলে রাজ্য রাজনীতিতে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে।

কারণ, বিধানসভা এলাকাওয়াড়ি দলের মধ্যে তলে তলে সমীক্ষা চলছে বলে খবর। বিকল্প মুখও বাছার কাজ চলছে বলে রটে গিয়েছে। পর্যবেক্ষকদের এও মত, হতে পারে এই কারণেই বহু বিধায়ক বা মন্ত্রী এলাকায় খুব বেশি সক্রিয় নন কিংবা সমস্ত ঢেলে কাজ করছেন না। তাই টিকিটের কথা বলে, সবাইকে অক্সিজেন যোগাতে চেয়েছেন দিদি। হতে পারে এটাও প্রশান্ত কিশোরেরই পরামর্শ।

এ ব্যাপারে কলকাতা পুরসভার দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন অনেক পর্যবেক্ষক। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড সংকট না থাকলে কলকাতা পুরসভায় এতদিনে ভোট হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তখনও চাউর হয়ে গিয়েছিল যে সব কাউন্সিলর টিকিট পাবেন না। হয়তো সেই কারণেই আমফানের পর কাউন্সিলরদের অনেককেই ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে বিশেষ সক্রিয় দেখা যায়নি।

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়ক সব্যসাচী দত্তর কথায়, এ সব টুপি পরানোর কৌশল। এখন হাত তুলতে বলা হচ্ছে। ভোটের আগে অনেকেই দেখবেন টিকিট ভোকাট্টা হয়ে গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা ভোটে দলের তৎকালীন বিধায়কদের মধ্যে মাত্র ১২ জনকে টিকিট দেননি দিদি। অনেকের ক্ষেত্রে অবশ্য শারীরিক অসুস্থতা নেপথ্য কারণ ছিল।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান বিধায়কদের টিকিট দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে একেকটি দল একেক রকমের অবস্থান নিয়ে চলে। বিজেপি বা সিপিএমের মতো ক্যাডার ভিত্তিক দল এ ব্যাপারে খুবই সোজাসাপ্টা। কিন্তু কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতিতে আবার বরাবরই দ্বিধা কাজ করে। হয়তো শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছে থাকে অপারদর্শী বিধায়ককে সরিয়ে নতুনদের টিকিট দিতে, কিন্তু আবার পরক্ষণেই বিক্ষুব্ধ রাজনীতির ভয় পায়।

এ ব্যাপারে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে অবশ্য মাইলফলক তৈরি করে রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০০৭ সালে গুজরাতে বিধানসভা ভোটের সময় সৌরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি বিধায়ককে তিনি টিকিট দেননি। কারণ, তিনি মনে করেছিলেন প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা রয়েছে স্থানীয় স্তরে। অর্থাৎ রাজ্যের সরকারের উপর মানুষের রাগ নেই। কিন্তু স্থানীয় বিধায়কের অপদার্থতা নিয়ে মানুষ রুষ্ট। তাই বিধায়কের টিকিট কেটে দিলে সেই অসন্তোষের হাওয়া বেরিয়ে যাবে। সেই ফর্মুলা কার্যত সোনা ফলিয়েছিল। উল্টো দিকে বেকুব বনেছিল কংগ্রেস। বিজেপিতে টিকিট না পাওয়া বিধায়কদের কংগ্রেস টিকিট দিয়েছিল। হেরে গোভূত হয়েছিলেন তাঁদের প্রায় সকলেই। ফাইল চিত্র:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here