দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অবশেষে পেট্রাপোল স্থল বন্দর দিয়ে অত্যাবশ্যক পণ্য রফতানির কাজ শুরু করার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করল প্রশাসন । মঙ্গলবার পেট্রাপোলে বৈঠক করলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী, বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার, রাজ্য সরকার নিযুক্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নোডাল অফিসার সঞ্জয়কুমার থাড়ে, বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায়। ছিলেন শুল্ক দফতর ও বিএসএফের কর্তারা। এদিনের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের প্রতিনিধি এবং পণ্য রফতানি ও আমদানিকারী সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও। বাংলাদেশ,নেপাল, ভুটান, সীমান্তের সমস্ত বাণিজ্য করিডর দিয়ে অত্যাবশ্যক পণ্য চলাচল শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তার প্রেক্ষিতে এ দিনের বৈঠক বলে জানা গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পেট্রাপোল  স্থলবন্দর এলাকায় প্রায় দু’হাজার পণ্য ভর্তি ট্রাক আটকে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই সমস্ত পণ্য রফতানির জন্য বাংলাদেশে যাওয়ার কথা। ট্রাকে পাটবীজ, মাছের খাবার তৈরির উপকরণের মতো অত্যাবশ্যক পণ্যও রয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে আটকে থাকা পণ্য কী ভাবে দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানো সম্ভব, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানানন, ‘‘আটকে থাকা ট্রাকগুলির মধ্যে প্রায় ৪০০টি ট্রাকে অত্যাবশ্যক পণ্য রয়েছে বলে কেন্দ্রের দেওয়া তালিকা থেকে জানা গেছে। বৈঠকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, অত্যাবশ্যক পণ্য নিয়ে ট্রাক চালকেরা যাবতীয় সুরক্ষা নিয়ে তবেই বেনাপোল প্রবেশ করুক। দিনের দিন সেখানে পণ্য খালি করে ফের ফিরে আসুক। চালকেরা ফিরে এলে তাঁদের যেন ১৪ দিনের কোয়রান্টিনে পাঠানো না হয়।’’

আবার অন্য পরামর্শ দিয়েছেন পেট্রাপোল এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের  সভাপতি পরিতোষ বিশ্বাস। তাঁর কথায় , ‘‘বৈঠকে বলেছি, সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এ দেশের ট্রাক থেকে বাংলাদেশের ট্রাকে পণ্য তুলে নেওয়া হোক।’’ যদিও জিরো পয়েন্টে পণ্য ওঠানো-নামানো কাজের পরিকাঠামো কতটা রয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ঠ সংশয় প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহল।  সীমান্তের স্থানীয় মানুষও বিশেষ ভাবে চিন্তিত,যে যদি এখন সীমান্ত খুলে দেয় ওদেশের মানুষ এদেশে প্রবেশ করবে আর তাতেই বিপদ বাড়বে, কারণ সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারছেন সে দেশের করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ, তাই তাঁরা চাননা কোন ভাবে ওপারের শ্রমিকরা এ পারের শ্রমিকদের সঙ্গে এই মুহুর্তে কাজ করুক।

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, এই সমস্ত বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তারপরে দু’দেশের মধ্যে আলোচনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ‘‘কী ভাবে বাণিজ্যের কাজ শুরু করা যায়, তা নিয়ে এ দিন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’’ রফতানিকারীরা আগেই অত্যাবশ্যক পণ্য রফতানির দাবি তুলেছেন।  আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,  আটকে থাকা ট্রাকের মধ্যে মালপত্র নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন ট্রাক আটকে থাকায় ট্রাকগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখনই ট্রাকগুলি বেনাপোলে পাঠাতে না পারলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পরবর্তী সময়ে তা নিতে অস্বীকার করতে পারেন।  তা ছাড়া, পার্কিংয়ে ট্রাক থাকায় রোজ ট্রাক প্রতি ফি বাবদ ১৪০০-১৫০০ টাকা করে রফতানিকারীদের দিতে হবে।

লকডাউন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য বন্ধের কেন্দ্রের কোনও নির্দেশ ছিল না। কেন্দ্রের লকডাউন নির্দেশিকায় সীমান্ত দিয়ে অত্যাবশ্যক পণ্যের যাতায়াত চালু রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে কার্যত বন্ধ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি, রাজ্য সরকার কোনও রকম আইনি বিজ্ঞপ্তি জারি না করে একতরফা সীমান্ত বন্ধ করেছে। 

এক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের যুক্তিও যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সীমান্তের ও পারে বাংলাদেশের জেলাগুলিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বাণিজ্য চালু থাকলে এ দেশের ট্রাক চালকদের বাংলাদেশে পণ্য খালি করতে গিয়ে কয়েক দিন থাকতে হবে। কোনও ভাবে চালক সংক্রামিত হলে এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়বে। বিষয়টির গুরুত্ব উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জটিলতা কাটিয়ে উঠে কবে ফের রফতানি স্বাভাবিক হবে সে দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে দু’দেশের আমদানিকারী রফতানিকারীরা। অন্যদিকে লকডাউনের জেরে বন্ধ এই পেট্রাপোল স্থল বন্দরের কয়েক হাজার শ্রমিকরাও কাজ ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here