দেশের সময় ওয়েবডেস্ক:

পৃথিবীর দিকেই তেড়ে আসছে সেই গ্রহাণু। কমছে দূরত্ব। চাঁদের চেয়েও কাছাকাছি চলে এসেছে পৃথিবীর। কিন্তু না, ধাক্কা মারার পরিস্থিতি এখনও ঠিক তৈরি হয়নি। আছড়ে পড়বে বলে মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। কী মনে করে সে দূর থেকেই যেন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে সে চলে যেতে চাইছে মহাশূন্যের অন্ধকারে।

বুধবার ভোর ৫ টো ৫৫ মিনিট নাগাদ (ইস্টার্ন টাইম)পুয়ের্তো রিকোর অ্যারেসিবো অবজারভেটরি জানায় এই গ্রহাণুর কক্ষপথ চিহ্নিত করে বলেন প্রায় ৩০ লক্ষ মাইলের মধ্যে চলে এসেছিল এই গ্রহাণু। তবে কাছ ঘেঁষেই বেরিয়ে যাচ্ছে সে। আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। টক্কর এখনই লাগবে না। পৃথিবীর টান উপেক্ষা করেই চলে যাবে। বিপদ কাটছে, বলেছে নাসা।

একটি গ্রহাণু বা অ্যাস্টেরয়েড ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে, এ কথা জানিয়েছিল অ্যারেসিবো অবজারভেটরি। যদিও এই গ্রহাণুকে সেই ১৯৯৮ সালেই চিহ্নিত করেছিল নাসা। তখন অবশ্য সে পৃথিবীর কাছাকাছি ছিল না। নাম দেওয়া হয়েছিল (৫২৭৬৮)১৯৯৮ ওআর২ (1998 OR2)। পাথুরে বিশাল মাপের এই গ্রহাণুর পরিধি ২ কিলোমিটার। গতি ঘণ্টায় ১৯,৪৬১ মাইল।

৫২৭৬৮)১৯৯৮ ওআর২ গ্রহাণুকে পৃথিবীর কাছাকাছই দেখেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল বিজ্ঞানীদের। একেই করোনা আতঙ্কে ভুগছে বিশ্ব, তার উপর গ্রহাণু চলে এসেছে পৃথিবীর কাছাকাছি। এই ধরনের মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীর কাছে এলেই জোরালো অভিকর্ষের টানে ছুটে আসে পৃথিবীর দিকে। যদি টান উপেক্ষা করতে পারে তাহলে মুখ ঘুরিয়ে অন্য পথে চলে যায়। না হলে আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে। এই গ্রহাণুর মতিগতি সে দিকেই যাচ্ছিল। আতঙ্কের মধ্যেই একটা বিষয় কৌতুক তৈরি করেছিল বিজ্ঞানীদের মনে, সেটা হল এই গ্রহাণুর বিশেষ আকার। অন্ধকারে গ্রহাণুর যে ছবি অ্যারেসিবো অবজারভেটরি সামনে এনেছিল, সেটা দেখে মনে হচ্ছিল গ্রহাণু মুখে মাস্ক পরে আছে। করোনা জর্জরিত পৃথিবীর দিকে গ্রহাণুও মাস্ক পরে ছুটে আসছে এমন মিমও ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

নাসা জানিয়েছে সেই ১৯৯৮ সাল থেকেই নজরে রাখা হয়েছিল এই গ্রহাণুকে। নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরিতে এই গ্রহাণুর গতিপথ চিহ্নিত করা হয়। নাসার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই গ্রহাণুর কক্ষপথ দেখে বোঝা যাচ্ছে আগামী ২০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সঙ্গে এই গ্রহাণুর টক্কর লাগবে না। তবে ২০৭৯ সালে ফের একবার পৃথিবীর কাছাকাছি আসতে পারে এই গ্রহাণু।

অ্যারেসিবো অজারভেটরির প্ল্যানেটারি রাডার সিস্টেমের প্রধান ডক্টর অ্যানে ভিরকি বলেছেন, এই গ্রহাণু একটা দিক পাথুরে, রুক্ষ, বন্ধুর। একে বলা হচ্ছে পিএইচও (potentially hazardous object) । কারণ ১৪০ মিটারেরও বড় আকারের এমন মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীর এত কাছে চলে আসার ঘটনা বিরল। অবজারভেটরির আরেক বিজ্ঞানী ফ্ল্যাভিয়েন ভেনদিতি বলেছেন, যদিও এখনকার মতো বিপদ কেটেছে তবে এই গ্রহাণুর উপর থেকে নজর সরবে না। ভবিষ্যতে এর অবস্থান কোথায় এবং পৃথিবী থেকে কতদূরে হবে সেটা নজরে রাখা হবে।

পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসা এমনই একটি গ্রহাণু ‘বেন্নু’-তে জলের খোঁজ পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেটা ২০১৮ সালে। দেড়শো বছর পর এই গ্রহাণুটিই ছুটে এসে পৃথিবীকে ধাক্কা মারতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। তাই একে রুখতে ও এই গ্রহাণুর গঠন জানতে ‘ওসিরিস-রেক্স’ নামে একটি মহাকাশযানকে ‘বেন্নু’-তে পাঠিয়েছে নাসা। এই মহাকাশযানই হদিশ দিয়েছে বেন্নুতে প্রচুর পরিমাণে জল রয়েছে। আগামী দু’বছর ধরে বেন্নুকে প্রদক্ষিণ করতে করতে নাসার মহাকাশযানটি উড়ে যাবে গ্রহাণুর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু এবং বিষূবরেখা ও তার লাগোয়া এলাকাগুলির উপর দিয়ে। পরে গ্রহাণু থেকে মাটি তুলে পৃথিবীতে ফিরবে ৫ বছর পরে।

গ্রহাণুর মুখে মাস্ক?
পুয়ের্তো রিকোর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের র‌্যাডারে ধরা পড়েছে সুবিশাল গ্রহাণুর ছবি। যার সামনের অংশে উঁচু রেখার মতো আগুন দেখা যাচ্ছে। ছবিতে একেই দেখলে মনে হচ্ছে, যেন মাস্ক পরা। করোনাভাইরাস আবহে সহজেই মাস্ক পরা গ্রহাণুর ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।

ভারত থেকে কখন ও কীভাবে দেখা যাবে গ্রহাণু?
আকাশ পরিষ্কার থাকলেও সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে ইউটিউবে লাইভ ভার্চুয়াল টেলিস্কোপ প্রোজেক্টের মাধ্যমে দেখা যেতে পারে। পাঠকদের জন্য যার লিংক নীচে দেওয়া রয়েছে। লাইভ টেলিকাস্টের সময় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নজর রাখতে হবে লাইভে। তবে দুপুর ৩টে থেকে রাত ১১.৩০টার মধ্যেই সম্ভাবনা বেশি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here