দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবার ‘নন্দীগ্রাম দিবস’। দিনের শুরুতেই এই নিয়ে টুইট করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের প্রার্থী হয়ে তিনি যে গর্বিত সে কথাও লিখলেন। ‘নন্দীগ্রাম দিবসে’র স্মৃতি উস্কে তিনি টুইট করেছেন, ‘২০০৭ সালের আজকের দিনে নন্দীগ্রামে গুলিতে মৃত্যু হয় নিরীহ গ্রামবাসীদের। অনেকের দেহ পাওয়া যায়নি। রাজ্যের ইতিহাসে আজকের দিনটি একটি কালো দিন। নন্দীগ্রামে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’

মমতার টুইটে আরও বলা হয়েছে, ‘নন্দীগ্রামের আন্দোলনে যাঁরা প্রয়াত হয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণে রেখে প্রতি বছর আমরা ১৪ মার্চ কৃষক দিবস পালন করি। সেই দিনই দেওয়া হয় ‘কৃষকরত্ন সন্মান’। কৃষকরা আমাদের গর্ব। তাঁদের উন্নতির জন্য আমাদের সরকার সব সময় চেষ্টা করছে।’ টুইটে তাঁর সংযোজন, ‘নন্দীগ্রামে আমার ভাই-বোনদের শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাঁদের উৎসাহে আমি ২০২১ সালের নির্বাচনে এই ঐতিহাসিক জায়গা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’ এদিন নন্দীগ্রামের গোকুলনগরে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এদিন মাল্যদান করেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পূর্ণেন্দু বসু, রাজ্যসভার সদস্য দোলা সেন ও বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন।

নন্দীগ্রাম আন্দোলনের গোড়ার কথা মনে পড়ে। পূর্ব মেদিনীপুরের এই জনপদে ভূমিরক্ষার জন্য আন্দোলন দানা বাঁধার পর কলকাতা থেকে তৃণমূলের নেতারা যাওয়া শুরু করেছিলেন নন্দীগ্রামে। সেই আন্দোলনে তৃণমূলের পাশে থেকেই ব্রাত্য বসুদের হাতেখড়ি হয়েছিল জোড়াফুলে।


কিন্তু শেষ কবে ব্রাত্য বসু ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গিয়েছিলেন? মনে পড়ছে কি! শেষ কবে সেখানে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘উই মাস্ট লিভ উইথ দিস মেমরি!’ শুধু ব্রাত্য বসু কেন, যে নন্দীগ্রামের আন্দোলন থেকে গ্রাম বাংলায় তৃণমূলের ভিত শক্ত হতে শুরু করেছিল, সেখানে ১৪ মার্চ শহিদ দিবসে শেষ কোন বছর তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতার নেতারা গিয়েছিলেন তাও মনে করে বলা শক্ত! তবে বরাবর দেখা যেত শুভেন্দু অধিকারীকেই। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা হিসাবে যাঁর পরিচিতি ঘটেছিল রাজ্য রাজনীতি।

শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এবার নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর আজ ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে শহিদ বেদিতে মালা দিতে কলকাতা থেকে উজিয়ে গেলেন ব্রাত্য বসু। আর সোনাচূড়ায় শহিদ বেদিতে মালা দিতে গেলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হল শুভেন্দু অধিকারীকে!
ব্যতিক্রম নয়!


যদিও শেষমেশ শুভেন্দু এদিন সোনাচূড়া, গোকুলনগরে শহিদ বেদিতে মালা দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নন্দীগ্রামের প্রায় সমস্ত শহিদ পরিবার। তার পর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় শুভেন্দু বলেন, “গত বছরও যাঁরা ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে আসেননি, আগামী বছর যাঁরা নন্দীগ্রামে আসবেন না, তাঁরা আজ মালা দিতে এসেছেন শহিদ বেদিতে। আর গেটের সামনে চারটে গুন্ডা দিয়ে নোংরা কথা বলিয়ে আমাকে আটকাতে চায়ছে। আমাকে সিপিএমই সেদিন আটকাতে পারেনি।”

শহিদ পরিবারের সদস্যদের পাশে নিয়ে শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রামের মানুষ আমার আত্মীয়স্বজন। আমার বাড়ির লোক। কাউকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। নন্দীগ্রামের সব মানুষ নিজের ভোট নিজে দেবেন। গণতন্ত্রের জয় হবে।”


সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে বারবার তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিন শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রামে গুলি চলেছিল ১৪ মার্চ। পুলিশ তো বটেই সিপিএমের হার্মাদরা এলাকায় কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না। ১৯ মার্চ আমরা ঢুকতে পেরেছিলাম। কিন্তু কাদের সঙ্গে ঢুকেছিলাম? তৎকালীন বিরোধী দলনেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, প্রয়াত সুষমা স্বরাজ, ধর্মেন্দ্র প্রধান, সুরিন্দরজিৎ সিং আলুওয়ালি-সহ বিজেপি সংসদীয় প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাঁদের সঙ্গে আমরা ঢুকেছিলাম।”

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এদিন শুভেন্দুকে নন্দীগ্রামে বাধা দেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন শেখ সুফিয়ান, শেখ সামাদরা। অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠদের দাবি, জোর করে কিছু লোককে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু ভোটের দিন অন্য ‘খেলা হবে’। সবাই নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে সংখ্যালঘু এলাকা থেকেও ভাল সমর্থন পাবেন শুভেন্দু অধিকারী।


অন্যদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, স্থানীয় লোকজন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই শুভেন্দুকে বাধা দিয়েছেন। কারণ, বিশ্বাসঘাতকদের আর ভরসা করছেন না তাঁরা। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, দল বদল করলেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দুর ভূমিকাকে কি অস্বীকার করা যাবে! তার অবশ্য স্পষ্ট জবাব মেলেনি।

এবার রীতিমতো ব্যাটলফিল্ড নন্দীগ্রাম। নন্দীগ্রামে এবার তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার সেখানেই প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তাঁরই একদা বিশ্বস্ত সৈনিক শুভেন্দু। মমতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হুঁশিয়ারির সুরে শুভেন্দু বলেছেন, ‘নন্দীগ্রামে হাফ লাখের বেশি ভোটে মাননীয়াকে হারাতে না পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’পালটা আক্রমণ শানিয়েছেন মমতাও। নন্দীগ্রামের কর্মিসভা থেকে শুভেন্দুকে নাম না করে মমতার আক্রমণ, ‘আমি বহিরাগত হলে তো মুখ্যমন্ত্রীই হতে পারতাম না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here