দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আরও একবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিস পাঠাল নির্বাচন কমিশন। জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ এবং ৭ এপ্রিল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছিলেন, তার প্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর কথা বলা হয়েছে নোটিসে। এই নিয়ে চলতি ভোট মরসুমে দু’বার নোটিস দেওয়া হল মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রথম নোটিসটি ছিল, সাম্প্রদায়িক লাইনে কথা বলার অভিযোগে।

সূত্রের খবর, আজ, শুক্রবার সকালে দ্বিতীয়বার পাঠানো সাম্প্রতিকতম এই নোটিসটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে মমতার মন্তব্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’। কেন তিনি এই ধরনের মন্তব্য করলেন, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে তৃণমূলনেত্রীকে। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছে উত্তর দেওয়ার।

গত ৭ এপ্রিল কোচবিহারের সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোট প্রভাবিত মহিলা ভোটাররাও যেন পাল্টা জবাব দেন। নেত্রীকে বলতে শোনা যায়, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা অশান্তি করতে এলে একদল ওদের ঘিরে ফেলুন। আর এক দল ভোট দিতে যান। কারা এই কাজ করছে, তাদের নাম লিখে রাখুন।”


কমিশনের দাবি, ২৮ মার্চের ভোট প্রচারেও একই রকম মন্তব্য করেছিলেন মমতা। এই নিয়েই আপত্তি তুলেছে কমিশন। তাঁদের দাবি, তৃণমূলনেত্রীর এই মন্তব্য ‘দুর্ভাগ্যজনক’। দ্রুত তাঁকে এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

দু’দিন আগেই তারকেশ্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মোখতার আব্বাস নকভি। তার ভিত্তিতে মমতাকে প্রথম নোটিসটি পাঠিয়েছিল কমিশন। তারকেশ্বরের সভায় মুসলমানদের একজোট হওয়ার কথা বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


কমিশনের নোটিসে স্পষ্ট লেখা ছিল, ধর্ম বা জাতের ভিত্তিকে কখনও ভোট চাওয়া যায় না। ভোটের জন্য মন্দির বা মসজিদের কাছেও আবেদন করা যায় না। তারকেশ্বরের সভায় আপনার বক্তব্য, কমিশন খতিয়ে দেখেছে। তাতে স্পষ্ট যে আপনি আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। তা ছাড়া তাতে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৩ (৩) এবং ৩(এ) ধারাও লঙ্ঘিত হয়েছে।

আজই সেই প্রথম নোটিসের জবাব দেওয়ার শেষদিন। এই নোটিস প্রসঙ্গে গতকাল ডোমজুড়ের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, “নরেন্দ্র মোদী তো সবসময় হিন্দু-মুসলমান করেন, তাঁকে ক’টা নোটিস পাঠিয়েছে কমিশন!” তবে এই দু’টি নোটিসেরই কী উত্তর মুখ্যমন্ত্রী দেন কমিশনকে, সেটাই এখন দেখার।

উল্লেখ্য, গত ৩ এপ্রিল নির্বাচনী সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সংখ্যালঘু ভাইবোনদের কাছে হাত জোড় করে বলছি, বিজেপি-র কাছ থেকে যে শয়তানরা টাকা নিয়েছে, তাদের কথা শুনে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করবেন না। মমতার মন্তব্যের জেরে নির্বাচন কমিশনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির নেতৃত্বে অভিযোগ জানায় প্রতিনিধি দল। তারপরই কমিশনের এই পদক্ষেপ।

সম্প্রতি হুগলির চুঁচুড়ার সভায় হুঁশিয়ারির সুরে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেছেন, ‘কেন আট দফায় নির্বাচন করা হচ্ছে। বিজেপি-র মণ্ডলরা ঠিক করে দিচ্ছে নির্বাচনের দিন। বলবে, কোভিড হয়েছে বলে নির্বাচন বন্ধ করে দাও! এসব চলবে না। ভোট যখন শুরু হয়েছে, শেষ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে কি ভোটটা ৩-৪ দফায় করা যেত না?’ কমিশনকে নিরপেক্ষ হওয়ারও বার্তা দেন তৃণমূলনেত্রী। এই আবহে মমতাকে কমিশনের নোটিশ নয়া মাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here