দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃগতকালের থেকে আক্রান্তের সংখ্যা সামান্য কমেছে। মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বুলেটিনে দেখা গেল, দেশে একদিনে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৪৯৮ জন। গতকাল, সোমবার এই সংখ্যাই ছিল ২৯ হাজার।

দেশে এখন মোট কোভিড আক্রান্ত ৯ লাখ ছাড়িয়েছে। কোভিড অ্যাকটিভ কেস অর্থাৎ করোনাভাইরাস সক্রিয় ৩ লাখ ১১ হাজার মানুষের শরীরে। একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৫৫৩ জনের। সেই সঙ্গে দেশে কোভিড সংক্রমণে মোট মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৩ হাজার ৭২৭ জনে।

রাজ্যগুলির মধ্যে মহারাষ্ট্রের করোনা আক্রান্ত বেড়েই চলেছে। আজকের হিসেবে সংক্রামিতের সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার ৯২৪। মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৪৮২ জনের। মহারাষ্ট্রে কোভিড সংক্রমণের বেশিরভাগই মুম্বইতে। সেখানে কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৮৫ হাজার ছুঁতে চলেছে। করোনা আক্রান্ত মহারাষ্ট্রে স্বস্তি দিচ্ছে ধারাভি ও ওরলি বস্তির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বলছেন, হটস্পট থেকে ক্রমেই করোনা-মডেল হয়ে উঠছে ধারাভি। বৃহন্মুম্বই পুরনিগমের (বিএমসি) রিপোর্ট বলছে এপ্রিলেই ধারাভিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ধারাভিতে এখন কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির হার দিনে ১.৫৭%, যেখানে মুম্বইতে এই বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশের কিছু বেশি। ডাবলিং রেট অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হওয়ার সময়ও বেড়েছে ধারাভিতে। সুস্থতার হার প্রায় ৫০%।

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলি থেকেও নতুন করে আক্রান্তের খবর আসছে:

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেনন উত্তর২৪পরগনার বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। সোমবার তাঁর রিপোর্ট বোরোয়। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কৃষি কর্মাধ্যক্ষ করোনা পজিটিভ হয়েছেন। তিনি বুধবার শেষ সমিতিতে এসেছিলেন। সোমবার সমিতির অফিস স্যানিটাইজ করা হয়েছে। আমি নিজেও লালারস পরীক্ষা করিয়েছি।’’ 

বনগাঁ ব্লকের কালুপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা এক পরিযায়ী শ্রমিকের  করোনা পজি়টিভ হয়েছেন। তাঁর রিপোর্ট এসেছে রবিবার। পঞ্চায়েত প্রধান মুক্তি সরকার বলেন, ‘‘রবিবার একজনের পজি়টিভ রিপোর্ট এসেছে। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সোমবার পর্যন্ত মোট ৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে সাত দিনের জন্য এলাকার বাজার হাট বন্ধ রাখা হবে।’’  স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে,  বনগাঁ ব্লকের রোজই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সোমবার পর্যন্ত ব্লকে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৮ জন। রবিবার পাল্লা এলাকার এক পরিযায়ী শ্রমিকও করোনা পজি়টিভ হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।  

হাবড়ায় নতুন করে এক মহিলা-সহ ২ জন করোনা আক্রান্ত হলেন। হাবড়া পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানাগিয়েছে, ‘‘সোমবার ১ মহিলা-সহ ২ জনের লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। তাঁরা করোনা পজি়টিভ। হাবড়া শহরে এদিন পর্যন্ত করোনা পজি়টিভের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৭। তার মধ্যে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২৩ জন।’’ 

করনা সংক্রমন রুখতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে বনগাঁ প্রশাসন৷ সোমবার বনগাঁ পুরসভার চন্দ্রিকা সভা গৃহে এক বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুর প্রশাসক শংকর আঢ্য, মহকুমা শাসক কাকলি মুখার্জি, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অশেষ বিক্রম দস্তিদার, এছাড়াও বনগাঁর বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা৷

এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আগামী বুধবার সকাল ছয় টা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত খোলা থাকবে বনগাঁর বিভিন্ন মাছ ও সবজি বাজার গুলি, বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে অন্যান্য সমস্ত দোকান। পাশাপাশি যাত্রীবাহী অটোরিকশাতে দুজনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না বলেও এদিন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি অটো তে যাত্রী ও চালকের মাঝে প্লাস্টিকের আস্তরণ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাস্ক পড়া না থাকলে পেট্রোল পাম্প থেকে যাতে তেল না দেওয়া হয় এবং পাশাপাশি কোন দোকানদার মাস্ক বিহীন অবস্থায় যাতে কোনো গ্রাহকের কাছে কোন দ্রব্য বিক্রি না করেন সে দিকে কড়া নজর রাখা হবে৷

এই সমস্ত বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়৷ বনগাঁ মতিগঞ্জ সুতিবস্ত্র হাটে ব্যবসায়ীরা যাতে চার ফুট দূরত্ব মেনে ব্যবসা করেন সে বিষয়েও এদিন জানানো হয় ব্যাবসায়ী মহলকে৷পুরসভার সূত্রের খবর, বুধবার থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত এই নিয়ম বলবৎ থাকবে৷ আগামী ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ফের আলোচনায় বসবেন প্রশাসনিক কর্তারা।

আজকের হিসেবে রাজধানীতে কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৪০। তবে সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থও হয়েছেন প্রায় ৯১ হাজার রোগী। গুজরাট ও তামিলনাড়ুতেও কোভিড সংক্রমণ চিন্তার কারণ। গুজরাটে আক্রান্ত ৪২ হাজার ৭২২। তামিলনাড়ুতে ইতিমধ্যেই কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা দেড় লাখ ছুঁতে চলেছে। কেরলে এখনও অবধি সংক্রামিত ৮ হাজার ৩২২। করোনা কার্ভ নিয়ন্ত্রণে রাখতে একাধিক আগামী এক বছরের জন্য পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকার।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও সুস্থতার হারও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সারিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ৯৮৮ জন। দেশে মোট সুস্থ হয়ে ওঠাদের সংখ্যা ৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৫৯।  স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে দেশে কোভিড রিকভারি রেট ৬৩.০২%।  ১২ জুলাই অবধি দেশে মোট কোভিড টেস্টিং হয়েছে ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৬ হাজার ২৫৬। ৮৫২টি সরকারি ও ৩৪৮টি বেসরকারি ল্যাবে চলছে করোনা পরীক্ষার কাজ।

করোনায় ‘আর নম্বর’তথা ‘এফেকটিভ রিপ্রোডাকশন নম্বর’ কমেছে। গত ২৬ জুন থেকে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে এক ধাক্কায় আর নম্বর ১.১১ থেকে ১.১৯ পয়েন্টে উঠে এসেছিল।  চেন্নাইয়ের ইনস্টিটিউট অব ম্যাথেমেটিক্যাল সায়েন্সের গবেষকরা বলেছিলেন, সুস্থতার হার বাড়লেও করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার হার তথা ‘কোভিড ট্রান্সমিশন রেট’ মার্চের পরে সামান্য কমলেও দ্বিতীয় আনলক পর্যায়ে ফের এক লাফে বেড়ে গেছে। ইতিবাচক দিক হল গতকাল সোমবারের হিসেবে দেখা গেছে এই আর নম্বর আবারও কমে ১.১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আর নম্বর কমলে দেশে অ্যাকটিভ করোনা রোগীর সংখ্যাও কমে যাবে। পাশাপাশি, একজন আক্রান্তের থেকে বেশিজনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর হারও কমবে। ট্রান্সমিশন রেটও একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে আসবে। যে মুহূর্তে দেশের কোভিড ট্রান্সমিশন রেট স্থিতিশীল হবে, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিও কমতে থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here