আজ বড়দিন।সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হচ্ছে যীশুখ্রীষ্টের জন্মোৎসব আর আমাদের সবার বড়দিন। বড়দিন মানেই আলোয় ঝলমলে পার্কস্ট্রীট, ফ্লুরিস, নাহুমস কিংবা মল্লিক এর কেক, পেস্ট্রি, কুকিজ, গরম প্যাটিস এর কথাই খাদ্যরসিকদের আগে মনে পরে যায়।তবে বাঙালীর বড়দিন এখানেই শেষ নয়, খ্রীষ্ট ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্বয়ং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও, তাই ১৯১০ সালের ২৫ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনে তিনি শুরু করেন খ্রীষ্ট উৎসব। তাই আজও সেই রীতি মেনে সন্ধ্যা নামতেই মোমবাতির আলোয় সেজে ওঠে উপাসনা গৃহ, প্রার্থনা ও গানের মধ্য দিয়ে শান্তিনিকেতনে পালিত হয় কবির প্রবর্তিত খ্রীষ্ট উৎসব। তাই এবারের দেশের রান্নাঘরে বড়দিনের মেনু সাজানো হল ঠাকুর বাড়ির মেয়েদের রেসিপি থেকে।

মাংসের পাই –

উপকরণঃ মাটন অথবা চিকেনের কিমা ৫০০ গ্রাম, চর্বি ১২৫ গ্রাম, ময়দা ৫০০ গ্রাম, সুজি ২৫০ গ্রাম, মাঝারি সাইজের আলু ৪ টে, বড় পিঁয়াজ ৩ টে, আদা ১ ইঞ্চি, তেজপাতা ১ টা, গরম মশলার গুঁড়ো ১ চামচ, নুন ২ চা চামচ, ঘি বড় ১ চামচ, ভিনিগার ১ চা চামচ, উস্টার সস ২ চা চামচ, ডিম ১ টা, গোলমরিচ ১/২ চামচ।
প্রণালীঃ কিমা ও চর্বি ধুয়ে নিতে হবে। সুজি, ময়দা, নুন ও জল দিয়ে মেখে নিতে হবে।মণ্ড বানিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে হবে। আলু ও পিঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। আদা ও দুটো পিঁয়াজ বেটে নিতে হবে। কড়ায় ঘি গরম করে আলু ও গোটা পিঁয়াজ ভেজে তুলে নিতে হবে।এবার কিমায় আদা ও পিঁয়াজ বাটা মাখিয়ে গরম ঘিয়ে ছাড়তে হবে মিনিট দশেক কষে এতে ১ চামচ ময়দা মেশাতে হবে। কিছুক্ষন পরে আড়াই কাপ জল দিয়ে ভেজে রাখা আলু দিতে হবে। আলু একটু নরম হয়ে জল ফুটতে শুরু করলে ভাজা পিঁয়াজ দিয়ে চাপা দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে।সবকিছু সিদ্ধ হয়ে নরম হয়ে গেলে নুন, গোলমরিচ, ভিনিগার ও উস্টার সস দিতে হবে। সবকিছু একসাথে ঘেঁটে মিশিয়ে গ্রেভি থাকতে থাকতে নামাতে হবে। নামিয়ে গরম মশলা মিশিয়ে ঠাণ্ডা করতে দিতে হবে। এবার ময়দার মন্ড দুটো ভাগ করে আলাদা আলাদা ভাবে বড় করে বেলে নিতে হবে। জল ঝরানো চর্বি সমান করে বেলে রাখা ময়দার একটা ভাগে রেখে ময়দার আর একটা ভাগ দিয়ে চর্বি চাপা দিতে হবে ও চারপাশ ভাল করে মুড়ে দিতে হবে যেন চর্বি বেরিয়ে না যায়। এবার একটা বড় জায়গায় এটাকে রেখে বেলন দিয়ে চৌকো করে বেলতে হবে। এবার এর থেকে ২ আঙ্গুল চওড়া ও যতটা লম্বা সম্ভব ক্রাস কেটে নিতে হবে। বাকি ময়দা চার ভাগ করে পাই ডিশে রেখে গুঁড়ি দিয়ে ভাল করে তিন পরতে বেলে নিতে হবে। এবার পাই ডিশ এনে এর চারদিকে একটু জল লাগিয়ে নিতে হবে; এবার গুঁড়ি দিয়ে বেলে রাখা ময়দা পাই ডিশের ভিতর বসিয়ে দিতে হবে, এর ওপর ঠাণ্ডা মাংসের স্টু কিছুটা ঢালতে হবে তারপর পাই ডিশের ময়দার চারদিকে জল বুলিয়ে আর একটা ময়দার চাকতি চাপা দিয়ে আটকে দিতে হবে; এরমধ্যে বাকি মাংসের স্টু ঢেলে আর একটা ময়দার চাকতি দিয়ে একই ভাবে চাপা দিতে হবে। এবার এর চারদিকে কেটে রাখা ক্রাস যতটা সম্ভব পাতলা করে বেলে বসিয়ে দিতে হবে।পাইডিশের চারদিকে বাকি থাকা ময়দা ফুল কেটে সাজিয়ে নিতে হবে। ডিম ফেটিয়ে তুলির সাহায্যে আলতো করে ময়দার উপর বুলিয়ে দিতে হবে। প্রি-হিটেড ওভেনে ১৫-২০ মিনিট এটিকে বেক করতে হবে। লাল রঙ ধরলে বের করে নিতে হবে। গ্যাসেও পাই বেক করা যেতে পারে।

কোপ্তা পেস্ট্রি –

উপকরণঃ মাটন কিমা ৬০ গ্রাম, চিকেন কিমা ২৫০ গ্রাম, ময়দা ২৫০ গ্রাম, ঘি ৩ বড় চামচ, মাখন ১০০ গ্রাম, জায়ফল আধখানা গুঁড়ানো, নুন ২ চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চামচ, বড় কাঁচালঙ্কা ৪-৫ টা।
প্রণালীঃ মাখনের ময়ান দিয়ে ময়দা মেখে নিতে হবে। সব রকম কিমা একসাথে মিশিয়ে ধুয়ে নিয়ে হবে। কাঁচালঙ্কা বেটে নিতে হবে। কড়ায় ঘি গরম করে কিমা দিতে হবে; একটু ভেজে নিয়ে নুন, কাঁচালঙ্কা বাটা, গোলমরিচ, জায়ফল দিয়ে কষতে হবে। মাংস নরম হয়ে এলে নামিয়ে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। মেখে রাখা ময়দার ১৪-১৫ টা লেচি কেটে পাতলা চারকোণা করে বেলে নিতে হবে। এবার প্রতিটা চাকতির ভিতর মাংসের পুর ভরে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। এগুলকে গরম ঘিয়ে ভেজে একটা পরিস্কার কাপড়ের মধ্যে রাখলে অতিরিক্ত ঘি শুষে নেবে।

চিংড়ির পাফ –

উপকরণঃ খোসা ছাড়ানো কুচো চিংড়ি ২৫০ গ্রাম, মাঝারি পিঁয়াজ ১২৫ গ্রাম, গুঁড়ো হলুদ ১ চা চামচ, নুন হাফ চা চামচ, কাঁচালঙ্কা ৪-৫ টা, ঘি ১ চামচ, গোলমরিচ গুঁড়ো ১ চামচ, ২৫০ গ্রাম ময়দা।

প্রণালীঃ পিঁয়াজ গোল করে কেটে নিতে হবে, কাঁচালঙ্কা মিহি করে কুচিয়ে নিতে হবে। কড়ায় ঘি দিয়ে পিঁয়াজ, নুন হলুদ দিয়ে চিংড়ি মাছ ভেজে নিতে হবে। ভাজা হলে কাঁচালঙ্কা কুচি ও গোলমরিচ গুঁড়ো ছড়িয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। মাছের পুর নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। ময়ান দিয়ে ময়দা মেখে নিতে হবে। এবার লুচির মতো লেচি কেটে গোল চাকতির মতো বেলে নিতে হবে। প্রতিটা চাকতির ভিতর পুর ভরে চারপাশে জল লাগিয়ে অর্ধ চন্দ্রাকারে মুড়ে মুখ বন্ধ করে দিতে হবে। এবার প্রি হিটেড ওভেনে ১০-১৫ মিনিট বেক করতে হবে অথবা চর্বি দিয়েও ভাজা যেতে পারে। সোনালি রঙ ধরলে বের করে নিতে হবে।

কুইনস টি কেকস –

উপকরণঃ মাখন ১০০ গ্রাম, চিনি ২৫০ গ্রাম, ময়দা ২৫০ গ্রাম, ডিম ২ টো, নুন ১/২ চা চামচ, গোটা পাতিলেবু ১টা, গোলাপজল ১চা চামচ।

প্রণালীঃ মাখন ফেটিয়ে নিতে হবে। ডিম ভাল করে ফেটিয়ে আলাদা করে রাখতে হবে। কুরুনি দিয়ে পাতিলেবুর গা ঘসে নিতে হবে যতক্ষন এর গায়ের হলুদ রঙ উঠে আসে। এবার এটিকে চিনি অ মাখনের সাথে মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হবে; এবার এতে নুন, ময়দা, ডিম দিয়ে মাখতে হবে। গোলাপ জল দিয়ে আবার মাখতে হবে। এবার এটিকে গোল করে আধ ইঞ্চি পুরু করে বেলে নিতে হবে। এবার কাটার দিয়ে কেটে এর থেকে গোলাকার চাকতি বের করে নিতে হবে। প্রি হিটেড ওভেনে আধ ঘন্টা বেক করতে হবে।

ক্রিসমাস কেক –

উপকরণঃ কিসমিস ২৫০ গ্রাম, কমলালেবু ও পাতিলেবুর খোসা ২৫০ গ্রাম, কমলালেবুর মোরব্বা ২৫০ গ্রাম, আদার মোরব্বা ২৫০ গ্রাম, কালো কিসমিস ২৫০ গ্রাম, কাজুবাদাম ২৫০ গ্রাম, আমন্ড বাদাম ২৫০ গ্রাম, মাখন ৫৫০ গ্রাম, সুজি ২৪০ গ্রাম, চিনি ২৫০ গ্রাম, ময়দা ২৫০ গ্রাম, ডি ১২ টা, জায়ফল ১ টা, দারচিনি ২ টো, ব্র্যান্ডি ৩/৪ কাপ।

প্রণালীঃ তিন চারদিন আগে মেওয়াগুলো বেছে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। লেবুর খোসা, বাদাম ও মোরব্বা কুচিয়ে রাখতে হবে। দারচিনি ও জায়ফল মিহি করে গুঁড়িয়ে রাখতে হবে।

মাখনের সাথে চিনি ফেটিয়ে ক্রিমের মত করে নিতে হবে, এবার এর মধ্যে ডিমের কুসুম দিতে হবে ও সাদা অংশ আলাদা রাখতে হবে। ৫-৭ মিনিট কাঠের হাতা দিয়ে এটিকে ফেটিয়ে যেতে হবে; এবার এতে আসতে আসতে সুজি মেশাতে হবে ও নেড়ে যেতে হবে। মিনিট কুড়ি একে ফেটে হবে; এরপর সবরকম মেওয়া ও গুঁড়ো মশলা এতে মেশাতে হবে ও ফেটাতে হবে। ক্রমে ব্র্যান্ডি মেশাতে হবে। সবশেষে ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে ফেনা উঠে এলে মেশাতে হবে। এরসঙ্গে অল্প অল্প করে ময়দা ঢেলে ফেটিয়ে যেতে হবে। এটিকে ফয়েলের ছাঁচে ঢেলে প্রি হিটেড ওভেনে ১ ঘন্টা বেক করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here