আর ব্র‌্যাবোণ রোডের পর্তুগীজ গির্জায় মানুষের জন্য প্রার্থনায় যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিভেদের রাজনীতি নিয়ে যখন সরগরম গোটা দেশ, তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই ফিরে এল ‘‌ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’‌। তাই তো দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে অক্সিজেন নিতে দেখা গেল আবালবৃদ্ধবনিতাকে ক্রিসমাস ইভের পার্ক স্ট্রিটে। আলোয়, হাসির কলরবে সান্তা ক্লজের কাছে যেন শান্তি চাইছে মহানগর। যীশুর জন্মদিন। তাই রাত থেকেই গির্জায় গির্জায় পুন্যার্থীদের ঢল নামল। গোটা দেশজুড়েই একই ছবি ধরা পড়ল।আজ বড়দিন। ২৫ ডিসেম্বর সন্ধে থেকেই কলকাতা থেকে সীমান্ত শহর বনগাঁ রাজপথে নেমেছে মানুষের ঢল। আমজনতাকে নিরাপত্তা দিতে তৈরি ছিল কলকাতা সহ জেলা পুলিশও। উদ্দেশ্য একটাই, উৎসবের দিনে শহরে যেন শান্তি বজায় থাকে।

কেবলমাত্র পার্কস্ট্রিট চত্বরের দায়িত্বে রয়েছেন ৫ জন ডিসি। এছাড়াও সারা শহর জুড়ে বিশেষ করে পার্কস্ট্রিট এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টিম। রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ এবং মহিলা পুলিশের বিশেষ টিমও। পার্কস্ট্রিট এলাকায় বসানো হয়েছে ১১টি ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে ক্রমাগত নজরদারি চালাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিকরা। এছাড়াও সিসিটিভি বসানো হয়েছে পার্কস্ট্রিটের আনাচে-কানাচে। কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখে প্রতি মুহূর্তে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ।

সব মিলিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারে আঁটসাঁটো। উৎসবের মরশুমে শহরে যাতে কোনওরকম অশান্তি বা অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে তার জন্য তৎপর পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ১৭২৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত অবধি শহর জুড়ে চলেছে এই ধরপাকড়। নানাভাবে আইনবিরুদ্ধ কাজ করেছেন গ্রেফতার হওয়া ১৭২৬ জন। কেউ মদ্যপান করে গাড়ি চালিয়েছেন। কেউবা হেলমেট ছাড়া বাইক। অভব্য আচরণের জন্যও গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ১৭২৬ জনের মধ্যে ১৪৩ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় রুজু হয়েছে মামলাও। জুয়া-সাট্টা খেলার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছেন ৯ জন। বড়দিনের আগে রাতে কলকাতার রাস্তায় অবভ্য আচরণের জন্য ৫৫৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাইকে দু’জনের বেশি সওয়ার হওয়ার ফলে গ্রেফতার হয়েছেন ২৬২ জন।হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোয় গ্রেফতার হয়েছেন ৪৯৬ জন। মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ১০৬ জন। নির্দিষ্ট গতির থেকে বেশি গতিতে গাড়ি চালানোয় গ্রেফতার হয়েছেন ৬৬৬ জন। এছাড়াও অন্যান্য আরও অনেক অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মোট ৮৬ জন। সীমান্ত শহর বনগাঁতেও নিরাপত্তা বিশেষ নজর দিয়েছে প্রশাসন, সাথে বনগাঁ পুরসভার পক্ষ থেকে আলোয় সাজানো হয়েছে শহর৷বনগাঁ ছয়ঘরিয়া চার্চ,বেঙ্গালুরুর সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ, গোয়ার আওয়ার লেডি অব দ্য ইমাকুলেট কনসেপশন চার্চ, দিল্লির গোল ডাকখানার স্যাক্রেড হার্ট চার্চ থেকে কলকাতার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে মানুষের ভিড়। শিশুরা অনেকেই মাথায় লাল–নীল আলো জ্বলা সান্তা টুপি পড়েছিল। পার্ক স্ট্রিটে রাত বা‌ড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি কেকের দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সান্তা দাদুকে ঘিরেও শিশুদের উন্মাদনা দেখা যায়। সব শিশুর সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন তিনি। কচিকাঁচাদের কাছে লোকটার ধর্ম তখন আলোর রোশনাইয়ে মিশেছে।বড়দিনের আগের রাতে যীশু জন্য প্রার্থনা করাই নিয়ম। ক্যারল, কয়ার, স্তোস্ত্রে মুখর হয়ে উঠল অধিকাংশ গির্জা। বেঙ্গালুরুর সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স ক্যাথিড্রালে হাজির হয়েছিলেন বহু মানুষ। সেখানে হয় বিশেষ প্রার্থনা। গোয়ার পঞ্জিমের আওয়ার লেডি অব দ্যা ইমাক্যুলেট চার্চের প্রার্থনা মানুষের ঢল।তিরুঅনন্তপুরমের সেন্ট যোসেফ ক্যাথিড্রালে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা। কলকাতায় সেন্ট পলস ক্যথিড্রালের প্রার্থনায় যোগ দেন বহু মানুষ। সবাই যেন মানুষের জীবনের শান্তি কামনায় ব্যস্ত। মুখে কেউ কিছু না বললেও নাগরিকত্ব আইন নিয়ে জ্বলন্ত দেশটাকে যেন শান্ত করার আর্তি জানাচ্ছে সবাই।
এখানে আর একটা দৃশ্য চোখে পড়ল। বড়দিনের পার্ক স্ট্রিটে এসএফআই–ডিওয়াইএফআইয়ের উদ্যোগে মার্ক্সীয় সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ক বইয়ের স্টল। আগাগোড়া সাজানো ক্রিস্টমাসের তারা, রঙিন রিবনে। ২১ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত বই বিক্রির অঙ্ক প্রায় ৩১ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকার। ইংরাজি–বাংলা–হিন্দি–উর্দু ভাষার বই রয়েছে স্টলে। আসলে সবাই শান্তি চায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here