দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রীর জনৌষধি কেন্দ্রগুলি থেকে মাত্র ১ টাকাতেই পাওয়া যায় স্যানিটারি ন্যাপকিন। ‘সুবিধা’ ব্র্যান্ডের আওতায় গত বছর থেকেই কম দামে স্যানিটারি প্যাডের সুবিধা পাচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার মহিলারা। এবার এই প্রকল্পকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় নারীস্বাস্থ্য ও স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রসঙ্গ তুলে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সামাজিক ট্যাবু ভেঙে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর মুখে খুব সহজেই চলে এসেছিল স্যানিটারি প্যাডের কথা। মহিলাদের ঋতুস্রাব নিয়ে এখনও যে দেশে নানা ছুঁৎমার্গ আছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রশংসা কুড়িয়েছিল নানা মহলেই। মোদী বলেছিলেন, দেশের মা-বোনদের স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার।

তাই সরকারি উদ্যোগেই দেশের ছ’হাজার জনৌষধি কেন্দ্র থেকে এক টাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের সুবিধা পেয়েছেন পাঁচ কোটি মহিলা। আগামী দিনে মা-বোনদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই আরও বড় পরিকল্পনা নেওয়া হতে পারে। এবার সে পথেই নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

নারী স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্পে সুবিধা ব্র্যান্ড চালু হয়েছিল ২০১৮ সাল থেকেই। সে সময় আড়াই টাকায় স্যানিটারি প্যাড পাওয়া যেত। গত বছর থেকে সেই দাম কমিয়ে ১ টাকা করে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভারতীয় জনৌষধি পরিযোজনার আওতায় দেশের প্রায় ছ’হাজার জনৌষধি কেন্দ্র থেকে ১ টাকায় স্যানিটারি প্যাডের সুবিধা পাচ্ছিলেন মহিলারা। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সুবিধা ব্র্যান্ডের প্রকল্পকেই আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হবে দেশের কোণায় কোণায়। সে জন্যই বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে সরকার।

এই প্রকল্পে গতি আনতে আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সার ও রাসায়নিক মন্ত্রকের দুই শীর্ষ কর্তাকে এই বিষয়ে তত্ত্বাবধানের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের অধীনস্থ ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রী জনৌষধি পরিযোজনার আওতায় স্যানিটারি প্যাড বিক্রি করা হবে ১ টাকায়। এই প্যাড হবে পরিবেশবান্ধব অক্সো-বায়োডিগ্রেডেবল। ব্যবহারের পরে পরিবেশ দূষণ ঘটাবে না এবং বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে ছোট ছোট টুকরোয় ভেঙে সহজেই মাটিতে মিশে যাবে।

সূত্রের খবর, গত দু’সপ্তাহ ধরেই এই প্রকল্পের বাস্তব রূপায়ণের জন্য ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগ ও কেন্দ্রীয় সার ও রাসায়নিক মন্ত্রকের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে আলোচনা চলছে। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডক্টর হর্ষ বর্ধন, পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মনসুখ মানদাভিয়া রয়েছেন এই প্রকল্পের নেতৃত্বে। কেন্দ্রীয় ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগের সচিব পি ডি ভাঘেলা জানিয়েছেন, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এই প্রকল্পে অংশ নিতে বলা হয়েছে। কম দামে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে কম দামে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে এই সংস্থাগুলিকে।

ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা নিয়ে এমনিতেই গ্রামাঞ্চলে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তবে শুধু প্রত্যন্ত এলাকা নয় শহরাঞ্চলেও ঋতুস্রাব ও স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে অনেকের মধ্যেই। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারেন না বেশিরভাগ মহিলাই। ঋতুস্রাবের সময় আদিবাসী গরিব মেয়ে, বৌয়েদের ভরসা এক টুকরো কাপড় অথবা ছাই। ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষা দেখিয়েছিল দেশের  মাত্র ৫০ শতাংশ মেয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারেন।

ও দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা প্রসারের পরে। ঋতুকালীন সময় মেয়েদের স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতার প্রচার করতে ইতিমধ্যেই নানা কর্মসূচী নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগে বলেছিলেন, বাজার চলতি স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সঙ্গতি নেই যাদের তারা পাটের তৈরি স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে পারেন। পাট দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন পরীক্ষামূলক ভাবে চালানোর প্রস্তাবে জুট বোর্ড অনুমোদনও দিয়েছিল।

তবে সেই প্রস্তাব নিয়ে নানা টানাপড়েন শুরু হওয়ায় ২০১৮ সাল থেকে সুবিধা ব্র্যান্ড চালু করে মোদী সরকার। জানানো হয়, একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করতে আড়াই টাকা খরচ পড়ে। কোনও লাভ না রেখে সেই টাকাতেই প্যাড বিক্রি করা হবে। গত বছর থেকে সেই সুবিধা প্যাডেরই দাম কমিয়ে ১ টাকা করে দেওয়া হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here