দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ নন্দীগ্রামে প্রচার শেষ হয়েছে মঙ্গলবার বিকেল ৫টায়। তার সওয়া ঘন্টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। তাদের অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুমকি দিচ্ছেন, ভোট মিটলেই দেখে নেবেন।

রাত পোহালেই নন্দীগ্রামে ভোট। তার আগে বুধবার হুগলির গোঘাটের সভামঞ্চ থেকে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে বেনজির আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । নাম না করে শুভেন্দুকে বিঁধে মমতা এদিন বলেন, ‘খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছি। দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি। কেউটে সাপ পুষেছি, গোখরো সাপ পুষেছি।’ এরপরই মমতা বলেন, ‘তুইও নির্বাচনে লড়ছিস, আমিও লড়ছি, মানুষ যাকে পছন্দ করছে ভোট দেবে, যাকে পছন্দ করবে না, ভোট দেবে না।’ এদিনও মমতার গলায় শোনা গিয়েছে গদ্দার শব্দ।

এদিন গোঘাটের সভায় মমতা বলেন, “আমি সব বহিরাগত গুণ্ডাদের ভিডিও দিয়ে রেখেছি। ইলেকশনটা হয়ে যাক, তার পরে দেখব কত ধানে কত চাল। দেখব কোন গদ্দার তোমাদের কতটা শেল্টার দিতে পারে। কোথায় যাবে দিল্লি? না কোথায় যাবে বিহার? কোথায় যাবে উত্তরপ্রদেশ? যেখানেই যাও…রবিন মান্নাকে খুন করে যদি মনে করো ছাড়া পাবে, কান ধরে টেনে নিয়ে আসব।”


এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আরও অনেক কেস আছে। কেস খুলে বের করব। করিনি ভদ্রতা করে। অত বেশি বাড়াবাড়ি করতে যেও না।”

গতকাল নন্দীগ্রামের একাধিক জায়গায় মমতার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছিল। কোথাও কোথাও দেখা গিয়েছিল দিদির গাড়ি ঘিরে জয়শ্রীরাম স্লোগান উঠছে। তবে কাল দিদি ঘাটালের মতো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং টেঙ্গুয়ার সভায় বলেছিলেন, “মাথা ঠান্ডা রাখুন। ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল, জিততে হবে তৃণমূল।”

কিন্তু ভিতরে ভিতরে যে তিনি বদলা নেওয়ার কথা ভাবছেন, তা এদিন বোঝা গেল গোঘাটে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে নন্দীগ্রামের ফলাফল অনিশ্চিত। কী হবে কেউ বলে দিতে পারে না। এ হেন হুমকির কারণে আগামী দিনে নন্দীগ্রামের তৃণমূল কর্মীরা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

মমতা বলেন, “আমি যদি একটা জায়গায় যাই, আমি কারও গায়ে হাত দিই না। কেউ যদি আমার গায়েও হাত দেয়, আমি ক্ষমা করে দিই অনেক সময়ে। আমাকে আমার দলের লোকেরা বলেন, দিদি আপনি একটু দুর্বল আছেন। যারা শয়তান তাদের বিরুদ্ধে আপনি কিছু করেন না।”


এর পরেই মমতা বলেন, “আমি বলি করি করি। কিছু কিছু লোক আছে বেশি ভালবেসে ফেলেছিলাম, কী আর করব! তা না হলে ওই গদ্দারদের এত বড় সাহস। খাইয়ে পড়িয়ে মানুষ করেছি, শালা দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি। সরি, এই ওয়ার্ডটা আমি উইথড্র করছি। দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছি, কেউটে সাপ পুষেছি আর গোখরো সাপ পুষেছি।”

নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তাঁর কথায়, আমার গাড়ি ঘিরে তাণ্ডব করছে। নির্বাচন কমিশনকে বলে বলে আমার মুখ ব্যথা হয়ে গেল। কোনও অ্যাকশন নেই। সঙ্গে মমতা এও বলেন, “আমি যদি আমার দলের ছেলেদের বলি না তাড়া কর, তাহলে ল্যাজ তুলে পালাবে। ওসব বাবা ঠাকুরদা জ্যাঠামশাইদের দেখা আছে।”


মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্য নিয়ে বিজেপি কমিশনে যাবে কিনা তা জানা যায়নি। তবে মমতার এই রেগে যাওয়া নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী গতকাল বলেছিলেন, “বেগমের মাথার ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।”

প্রসঙ্গত, একুশের নির্বাচনের আবহে শুভেন্দু অধিকারীকে প্রায় রোজদিনই নিশানা করছেন তৃণমূলনেত্রী। সোমবার নন্দীগ্রামে বয়াল পঞ্চায়েতের সভা থেকে মমতা অভিযোগের আঙুল তোলেন শুভেন্দুর দিকে। তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের সময় তুই আমার পা জখম করিয়েছিস। আমি চেপে গেছি ভদ্রতা করে। আজও আমায় পা ভাঙা নিয়ে হুইলচেয়ারে বসে মিটিং করতে হচ্ছে। এটা যে কত কষ্টের!’ এখানেই শেষ নয়, এদিনের বক্তব্যে তিনি আবারও স্পষ্ট করেন কোনও নন্দীগ্রামের মানুষ নয়, বহিরাগত গুণ্ডাদের দিয়ে একাজ করানো হয়েছে। মমতার অভিযোগ, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর নির্দেশেই একাজ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তোমার নির্দেশ ছাড়া এ সব হতে পারে না। কোনও নন্দীগ্রামের লোক এ সব করতে পারে না। বহিরাগত গুন্ডাদের দিয়ে এ সব করিয়েছ তুমি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here