দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একদিকে যখন মস্কোতে ভারত ও চিন দু’দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠকে বসে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন, অন্যদিকে তখন উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে লাদাখ। একদিকে যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং শান্তি ও বিশ্বাসের বার্তা দিচ্ছেন, তখন লাদাখের দক্ষিণ প্যাঙ্গংয়ে ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে এগোচ্ছে লাল ফৌজ। পাল্টা সেনা বাড়াচ্ছে ভারতও।

শুক্রবার রাশিয়ার মস্কোয় সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বার্ষিক সম্মেলনে চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। চিনের তরফেই এই বৈঠকের আর্জি জানানো হয়েছিল। নৈশভোজের আমন্ত্রণে সম্মতি জানায় ভারত। 

ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ শুরু হওয়া এই বৈঠকে প্রতিরক্ষাসচিব অজয় কুমার এবং রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ডি বি ভেঙ্কটেশ বর্মাও উপস্থিত ছিলেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক।

সেখানেই চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে রাজনাথ সিং বার্তা দেন, সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে গেলে সবচেয়ে আগে দরকার বিশ্বাস। দুই দেশই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে তখনই আসবে যখন বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা হবে। আগ্রাসন দেখিয়ে জবরদস্তি অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে, আন্তর্জাতিক নীতির সম্মান রক্ষিত হবে এবং বিশ্বাস রেখেই দুই দেশ শান্তির শপথ নেবে।

সামরিক স্তরে দফায় দফায় বৈঠকের পরেও সীমান্ত সমস্যার সমাধানে এসে পৌঁছতে পারেনি ভারত ও চিন দুই দেশই। বরং সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে শান্তি বজায় রাখার যে আলোচনা হয়েছিল দুই দেশের মধ্যে তার মর্যাদা ভেঙেছে চিনই। নতুন করে আগ্রাসনের চেষ্টা দেখিয়েছে তারা। যার কারণে রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে লাদাখ সীমান্তে। 

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলএসি-তে কীভাবে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা যায় সেই নিয়েই মুখোমুখি বৈঠকে বসেন রাজনাথ সিং ও চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সীমান্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য আলোচনা চলছে দু’তরফেই। এই বৈঠকেই চিনকে বার্তা দিয়ে রাজনাথ এমন কথা বলেছেন।

একদিকে যখন এই বৈঠক চলছে, অন্যদিকে উত্তাপের আঁচ বাড়ছে পূর্ব লাদাখের প্যাঙ্গং রেঞ্জে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা তথা এলএসি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে প্যাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণে যুদ্ধট্যাঙ্ক নামিয়েছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে কালা টপের নীচ দিয়ে চুসুল, থাকুং এলাকার দিকে এগোচ্ছে তারা। ভারতীয় সেনা সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।

প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণে কালা টপ সহ একাধিক পাহাড়ি এলাকা এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, কালা টপের দখল নিতে না পেরে চিনের বাহিনী এখন পাহাড়ি পাদদেশগুলোতে নিজেদের যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজাচ্ছে। মলডো থেকে হেভি ওয়েট ট্যাঙ্ক, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থাকুং-এর দিকে এগোতে দেখা গেছে তাদের।

প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণ প্রান্ত স্প্যানগুর গ্যাপের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় চিন ও ভারত দুই দেশের বাহিনীই টহল দেয়। গত শনিবার চুমার এলাকা দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসার চেষ্টা করেছিল লাল ফৌজ। তাদের লক্ষ্য ছিল কালা টপ ও হেলমেটের দখল নিয়ে নেওয়া। চেপুজি ক্যাম্প থেকে কয়েকটি আর্মড ভেহিকলকে বের হতে দেখেই সতর্ক হয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী। 

চিনের চেষ্টা রুখে দেওয়া হয়। এরপরেই চুসুলের কাছে ভারতের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট প্রস্তুত হয়ে যায়। নিশানা স্থির করে বসে টি-৯০ যুদ্ধট্যাঙ্ক। এইসব দেখেই ফের নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে যায় চিনের বাহিনী। ভারতীয় সেনা জানাচ্ছে, এই স্প্যানগুর গ্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই রেঞ্জের মুকপারি, মগর হিল, চুসুল থেকে থাকুং পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকা এখন ভারতীয় সেনার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই পাহাড়ি উপত্যকায় এখন নিজেদের সামরিক বহর বাড়াচ্ছে চিন।

লাদাখ সফরে গিয়ে ভারতের সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে বলেছেন, চীনকে আটকাতে সবরকমভাবে প্রস্তুত ভারতের বাহিনী। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় উত্তেজনা রয়েছে ঠিকই, তবে ভারত তার নতুন সামরিক কৌশল নিয়েছে। বায়ুসেনা প্রধান আর কে এস ভাদুরিয়া গতকালই গোটা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে উত্তর-পূর্ব এয়ার ফোর্স বেসে গিয়েছিলেন। জানা গেছে, আকাশসীমাকে সুরক্ষিত করতে ইতিমধ্যেই এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম মোতায়েন করেছে ভারত। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চক্কর কাটছে ভারতীয় বায়ুসেনার একাধিক কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here