দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ উমফানের ক্ষতিপূরণ থেকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা—বিরোধীরা যে ভাবে হইচই করছে তেমন কিচ্ছু ঘটেনি বলে বুধবার দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি বলেন, ‘দু’একটি ঘটনা ঘটছে। তাই নিয়ে কেউ কেউ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাচ্ছে’।

এদিন নবান্ন সভাঘরে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকের শেষে ভিডিও কনফারেন্স করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেন, “ডার্টি পলিটিক্স করবেন না। এখন ডার্টি পলিটিক্স করার সময় নয়।” এদিন আরও একবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “উমফানের টাকা আমরা তাড়াতাড়ি দিয়েছি বলে দু’একটি জায়গায় ভুল-ত্রুটি হয়েছে। সেটা শুধরেও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের রাজ্যে গণতন্ত্র বেশি বলে কেউ কেউ এক দু’পার্সেন্টটাকেই বড় করে দেখাচ্ছে। ৯৯.৯৯ পার্সেন্ট যে ভাল হচ্ছে সেটাকে বলছে না।”

বিরোধীরা ছাড়াও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর নিশানা ছিল একাংশ সংবাদমাধ্যমের দিকে। মমতা এদিন বলেন, “আমরা মিডিয়াকে বিজেপির মতো অ্যাডভাইজারি পাঠাই না। মিডিয়ার দরজায় গিয়ে তালাও লাগাই না।”

গত কয়েক দিনে বিরোধীদের সমালোচনার মূল বর্শাফলক ছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ইছাপুরের তরুণ শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও জয়নগরের যুবক অশোক রুইদাসের মৃত্যু নিয়ে বিজেপি, বাম, কংগ্রেস—প্রায় সব দলই রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে। দুই মৃতের পরিবারও অভিযোগ করেছে, একাধিক হাসপাতাল চিকিৎসা পরিষেবা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার কারণেই দুটো তরতাজা প্রাণ চলে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টার ছড়িয়ে পড়েছে ‘শুভ্র-অশোক আমার ভাই, ওদের মৃত্যুর বিচার চাই।’

এদিন মুখ্যমন্ত্রী সেই প্রসঙ্গ নির্দিষ্ট করে উল্লেখ না করলেও ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “কে একজন কোথায় বেড পেল না, ওষুধ পেল না, কিছু লোক সেটাকে নিয়ে একেবারে আসন পেতে বসে পড়ছে। আর এত লোক যে ভাল হচ্ছে সেটা বলছে না।” একাংশের সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মিডিয়ার কেউ কেউ আর্টিফিশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি করছে! এটা কিন্তু ঠিক না। আপনাদেরও একটা সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে।”

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, “গণতন্ত্র আছে বলেই তো পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীদের বিরুদ্ধে এত মিথ্যা মামলা, পার্টি অফিস দখল হয়ে যাওয়া, খুনখারাপি হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “চিটফান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলায় বিধানসভার ভিতরে বিরোধী বিধায়কদের উপর হামলা হয়েছিল। কয়েক দিন আগে সিইএসসি-র বিরুদ্ধে আমি শেওড়াফুলি ফাঁড়ির মোড়ে অবরোধ করেছিলাম। একজন পুলিশ অফিসার আমার সঙ্গে যা নয় তাই ব্যবহার করলেন। আমার ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এমন ঘটনা ঘটেনি। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে সেটা চিঠি লিখে জানালাম। একটা সৌজন্য নেই যে, আমায় ফোন করে জিজ্ঞেস করবেন কী হয়েছিল! উনি আবার গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলছেন।”

মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের এই মন্তব্য নিয়ে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের রাজ্যে কেমন গণতন্ত্র রয়েছে তা রাজ্যের মানুষ ভালই জানেন। মুখ্যমন্ত্রী মিছি মিছি সাংবাদিক বৈঠক করে এত শব্দ বলে সময় নষ্ট করছেন। কারা উমফানের টাকা পেয়েছে সেই তালিকা সরকারি ওয়েবসাইটে দিয়ে দিন না। তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। কিন্তু সরকার সেটা করছে না। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।”

বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে এমন গণতন্ত্র দিয়েছেন যে বিধায়ক খুন হয়ে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মুখে গণতন্ত্র শব্দ শুনলে বাচ্চা ছেলেও খিলখিল করে হেসে উঠবে।” তিনি আরও বলেন, “কেউ কোনও নেগেটিভ কথা বলছে না। যা সত্যি তাই বলছে। রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চোখের সামনে সবাই দেখতে পাচ্ছেন। কলকাতা শহরে যদি চিকিৎসা ব্যবস্থার এই দশা হয় তাহলে গ্রামে কী হচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। আর মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে তাঁর পক্ষে কথা বলানোর চেষ্টা করছেন।”

কয়েকদিন আগেই বাম রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান এবং বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল – সাধারণ মানুষ কোথায় টেস্ট করাবেন বা কোন হাসপাতালে ভর্তি হবেন তার একটা গাইডলাইন সরকার স্পষ্ট করুক। মানুষ না হলে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিনের ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে মান্নান-সুজনের সেই চিঠির প্রসঙ্গ না তুললেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোথায় কারা কী ভাবে ভর্তি হবেন, কোথায় টেস্ট হবে সে ব্যাপারে সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করছে। কিছু দিনের মধ্যেই তা জানানো হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কে কোথায় ভর্তি হবেন সেটা স্বাস্থ্য ভবন ঠিক করবে। কার কী ধরনের সংক্রমণ সেটা বুঝেই স্বাস্থ্য ভবন হাসপাতাল ঠিক করে দেবে। হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে কোনও লবি চলবে না বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here