দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: তমলুক স্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছে তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস। সে ট্রেনের যাত্রীরা কিন্তু সবাই খুদে। আর জানলার ধারে বসে শুধু বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকা নয়, ট্রেনের কামরার ভিতর রীতিমতো ব্যস্ততা। কেউ পড়ছে, কেউ লিখছে। মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের ইট বা পুরুলিয়ার মুখোশ নেড়েচেড়ে দেখছে কেউ।

আসলে গোটা ক্লাসঘরটাই যে সেজে উঠেছে ট্রেনের কামরায় মতো। আর বাইরের বারান্দা যেন স্টেশন।

তমলুকের পদুমবসান হারাধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা পাপিয়া জানান, একদম তলানিতে এসে ঠেকেছিল স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা। এলাকার হতদরিদ্র পরিবারগুলিতে পড়াশোনার ব্যাপারে কোনও সচেতনতা না থাকায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর কোনও তাগিদ নেই। জোর করে যাদের ধরে আনতেন তাঁরা, তারাও পালাত মিডডে মিল খেয়েই। এই পরিস্থিতিতেই শুরু হয়েছিল ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।

“সেই মুহুর্তে আমরা ভেবে দেখি, যদি স্কুলটাকে একটু আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তাহলে নিশ্চই আটকে রাখা যাবে তাঁদের। তারপরেই আমাদের ভাবনা আমরা জানাই স্কুল ইন্সপেক্টর উত্তম বৈদ্যকে। তিনি সম্মতি দেওয়ার পরেই শুরু হয় ক্লাসঘরকে সাজিয়ে তোলার কাজ।”

ট্রেনের মতো সাজিয়ে এর নাম দেওয়া হয়েছে তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস। বানানো হয়েছে তমলুক রেল স্টেশনও। একটি প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলে যে ছবি পাওয়া যায়, তার পুরোটাই তুলে ধরা হয়েছে এখানে। ট্রেনটি দাঁড়িয়ে রয়েছে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে। তাছাড়া স্কুল জুড়ে নানা অলংকরণ। যা দেখে চোখ আটকে যেতে বাধ্য। তৈরি করা হয়েছে মোট চারটি সংগ্রহশালাও। একটিতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপ-সহ নানা ধরনের প্রাণী। একটিতে প্রাচীন অসংখ্য মুদ্রা, পুঁথি ও লোকশিল্পের নানা সামগ্রী। অন্য দু’জায়গায় দেওয়ালে সজ্জিত পুতুল, পোড়ামাটির জিনিস, মোগলমারি বৌদ্ধবিহারের ইট, বাঁশের সামগ্রী, তালপাতার সেপাই, বাঁশি, পুরুলিয়ার মুখোশ, অসমের ঝাঁপি এবং একশোরও বেশি ভিন্ন ধরনের ঝিনুক ও শঙ্খ। এমনকী পটচিত্র সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের ধারণা দিতে স্কুলের দেওয়ালে চিত্রিত হয়েছে মেদিনীপুর ও কালীঘাটের পটচিত্রও। ছাত্রছাত্রীদের খেলাধুলোর জন্য একটি পার্কও তৈরি হয়েছে।

গত দু’মাস আগে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে স্কুল। তারপরেই নাকি বাড়ছে পড়ুয়ার সংখ্যাও। এখন স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৬৯ জন। শিক্ষক শিক্ষিকা ৭ জন। মাম্পি-মমতারা বলছে, এখন নাকি স্কুলে আসতেই তাদের সবথেকে বেশি ভাল লাগে। ছুটি দিনেও স্কুলের সামনে ঘোরাফেরা করে তারা৷

ছোটদের আবার স্কুলে ফেরাতে পেরে যুদ্ধজয়ের হাসি শিক্ষিকাদের মুখে। এক স্কুল কত্বৃপক্ষের কথায় , “এর পুরো কৃতিত্বই শিক্ষিকাদের। আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি শুধু।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here