দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কেন্দ্রের টিকাকরণ প্রকল্পের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রের গণটিকাকরণ নীতি কার্যত অন্তঃসারশূন্য। এখন মুহূর্তে ১৭ ঊর্ধ্বদের টিকাকরণের সিদ্ধান্ত কার্যত দায় এড়ানোর কৌশল। এছাড়াও চিঠিতে মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রের এই টিকাকরণ প্রকল্পে কালোবাজারি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়াও গরিব মানুষরা টিকাকরণ থেকে বঞ্চিত হবেন। শুধু তাই নয়, ভ্যাকসিন নিয়ে অবিলম্বে নয়া পরিকল্পনা নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

গণটিকাকরণ প্রকল্পের সমালোচনা করায় এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ, সম্প্রতি উদ্বেগজনক কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা একটি বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। টিকাকরণ নিয়ে সমস্যা থাকলে মুখ্যমন্ত্রী কেন কোভিড বৈঠকে সেই বক্তব্য উত্থাপন করেননি? প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘পরিস্থিতি বুঝে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন উনি।’

গণটিকাকরণ নিয়ে এত দেরি করে সিদ্ধান্ত কেন? চিঠিতে মূলত এই প্রশ্নই কড়াভাবে উত্থাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগেও জীবনদায়ী ওষুধের অপ্রতুলতা এবং ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন মমতা। করোনায় জীবনদায়ী ওষুধ টসিলিজুমাব ও রেমডেসিভিরের অপ্রতুলতা রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার রেমডেসিভিরের ভায়াল ও এক হাজার টসিলিজুমাবের ভায়াল কেন্দ্রের কাছে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েই চলেছে। কলকাতায় প্রতিদিন হাজারের উপরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতি আঁচ করে হাসপাতালের বেড বাড়ানোর পাশাপাশি সেফ হোমের পরিকাঠামো বাড়াতে আরও তৎপর হলো রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কলকাতায় সেফ হোমের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানালেন বিদায়ী পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যদিও এদিনই মালদায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘ওরা অনেক জায়গা নিয়ে নিয়েছে, তাই জায়গার অভাব রয়েছে। তবে অকারণ ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা পরিস্থিতি সামলাচ্ছি।’

অন্যদিকে,কোভিডের ওষুধ সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মুর্শিদাবাদের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কোভিডের ৬৪ শতাংশ ওষুধ বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর এখন ভাল মানুষ সেজে বলছে খোলা বাজার থেকে রাজ্যগুলো কিনে নিতে পারে। খোলাবাজারে ওষুধ আছে কোথায়? সব তো বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। ঘর জ্বালানো পর ভোলানো প্রধানমন্ত্রী।”

মমতা এদিন মুর্শিদাবাদের সভা থেকে দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে সমস্ত বন্দোবস্ত করতে হবে। তাঁর অভিযোগ, ছমাস ধরে করোনা ছিল না। সেই সময়ে যদি কেন্দ্রীয় সরকার সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার বন্দোবস্ত করত তাহলে আজকে এই অবস্থা হতো না। তা হয়নি বলেই আজকে কোভিড সংক্রমণের এই ভয়াবহ অবস্থা বলে দাবি মমতার।


কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন নিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এক, প্রস্তুতকারী সংস্থার থেকে রাজ্যগুলো সরাসরি ভ্যাকসিন কিনতে পারবে। এবং দুই, আগামী ১ মে থেকে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। যদিও ভ্যাকসিনের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলায় জেলায় কোভিড টিকাকরণ সেন্টারে লম্বা লাইন। ভ্যাকসিন না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্র। অন্যতম নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারও কোভিড পজিটিভ। নির্বাচন সদন সূত্রে বলা হয়েছে আপাতত এই দুজনই বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। তাঁরা ঘরে থেকেই ভোটের কাজ তত্ত্বাবধান করবেন। এদিন তা নিয়েও কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, বাড়ি থেকে কাজ করা মানে তো জানেন, সবটাই বিজেপি করে দেয়।

ইদের দিন ভোট নিয়ে মমতা কমিশনের তীব্র সমালোচনা করেন। মুর্শিদাবাদের দুই বিধানসভা কেন্দ্রের দুই প্রার্থীর মৃত্যুর জন্য ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সোমবার পরিবর্তিত দিন জানায় নির্বাচন সদন। জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জে ভোটগ্রহণ হবে ১৩ মে। এদিন মমতা বলেন, শুনলাম ওইদিন ইদ রয়েছে। কমিশন বোধহয় তাদের ক্যালেন্ডারে দেখতে ভুলে গেছে। তবে ইদ হোক আর দুর্গা পুজো- মানুষের ভোট দেওয়া আটকানো যাবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here