দেশের সময়: বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিন এবং গাইঘাটা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের দলের নিচুতলার কর্মীদের অধিকাংশ মেনে নিতে না পারায় শুরু থেকেই ক্ষোভ তৈরি হয় আর সেই ক্ষোভের ফল স্বরূপ এই ৩ কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন দলের আদি বিজেপি প্রার্থীরা। আর সেটাই এখন বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতীয় জন সংঘের সমর্থনে এই কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হিসেব ভোটে লড়াই করছেন ডা:‌ সজল বিশ্বাস, অরবিন্দ বিশ্বাস এবং অলোক বাইন। তাঁরা তিনজনই বিজেপির সক্রিয় কর্মী। শুধু তাই নয়, এই তিনজন বিজেপির প্রার্থী হিসেবে দাবিদার ছিলেন। শুরুতে দলের কাছ থেকে তাঁরা সেইরকমই পেয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন ঘটেনি।

প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর এই ৩ কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্ব সুব্রত বিশ্বাস, অশোক কীর্তনিয়া এবং স্বপন মজুমদারকে প্রার্থী করেছে। এই এই ঘটনায় আদি বিজেপি কর্মীরা যথেষ্ট অসম্মানিত বোধ করেন। অসম্মানের বদলা নিতে তাই তারা দলের কর্মী-সমর্থকদের মতামত নিয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাদের সমর্থন করে ভারতীয় জনসংঘ।

এই তিন প্রার্থীর মধ্যে ডাক্তার সজল বিশ্বাস বর্ধমান মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে সরকারি চাকরি করছিলেন। রাজনীতিতে বেশি করে সময় দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘ঠাকুরবাড়ির একাংশের কাছে মাথানত করেছে বিজেপি নেতৃত্ব তাই ঠাকুরবাড়ির ওই অংশকে নিজেদের পক্ষে রাখতে বিজেপি নেতৃত্ব দলের কর্মীদের কথা না শুনে ঠাকুরবাড়ির সদস্য সুব্রত ঠাকুরকে গাইঘাটা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে।

দলের এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং ঠাকুরবাড়ির পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই। এই লড়াই আর একরকম স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াই। ভোট প্রচারে গিয়ে সাধারণ মানুষের প্রচুর সহযোগিতা পাচ্ছি। ভোটাররা তাদের মনের কথা খুলে বলছেন। সব দিক বিচার করে আমি আশাবাদী, এই এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করে বিজেপি নেতৃত্ব কে মুখ্যমন্ত্রী আবাস দিতে পারব।

পেশায় বিল্ডার্সের ব্যবসায়ী গোপালনগর এর পাল্লা এলাকার বাসিন্দা বনগাঁ দক্ষিনের নির্দল প্রার্থী অলোক বাইন ২০১২ সাল থেকে বিজেপির সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ৪ বছর বিজেপির যুব সহ সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছিলেন।

অনেক ভোট পেয়েছিলেন। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিচার থেকে তিনিই বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী হচ্ছেন। দল সেরকমই আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত দল কথা না রাখায় তিনিও নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তপন সিকদারের আপ্ত সহায়ক ‌ হিসেবে এক সময় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন অরবিন্দ বিশ্বাস।

সেই সূত্রে বিজেপির অন্তরে তার যথেষ্ট ওঠা বসা ছিল। এর আগে বাগদা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে দুবার ভোটে দাঁড়াব অরবিন্দ বিশ্বাস। যদিও দোপাটি তিনি পরাজিত হন। শান্তনু ঠাকুর এর সাংসদ হওয়ার পেছনে তার ভূমিকা ও যথেষ্ট ছিল বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। তাঁকে এবারে টিকিট দেওয়ার কথা ছিল বিজেপির। কিন্তু দল তাঁকেও বঞ্চিত করায় তিনিও নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্র থেকে। তিনি বিজেপির ঘোষিত প্রার্থীকে পরাজিত করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা প্রচারে বেরিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষকে তাঁদের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন করছেন। কেন তাঁদেরকে ভোট দেবেন, সে ব্যাপারেও তাঁরা মানুষের কাছে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির এই বিক্ষুব্ধরাই যে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে বিপদে ফেলতে পারে, তেমনি মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here