দেশেরসময়: -এবারই প্রথম কালীঘাটের বাড়িতে ডেকে শুভেন্দু অধিকারীকে ভাইফোঁটা দিলেন মমতা।এর আগে বার বার শুভেন্দুকেই দলের প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা করে ভোট যুদ্ধে লড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে এবার মমতা শুভেন্দুর উপর বিশেষ নজর রাখছেন।যারা ভাবছেন বিশুদ্ধ স্নেহের বশে মমতা শুভেন্দুর উপর সব সময় নজর রাখছেন তারা ভুল ভাবছেন।আসলে রাজনীতিতে কোন কিছুই বিশুদ্ধ হয় না।সবটাই হয় অংক কষে।আর শুভেন্দুকে নিয়ে সেই অংক কষাটা মমতা শুরু করে দিয়েছেন ,এ রাজ্যের বিধানসভার ভোটের সময় থেকেই।

সকলেই জানেন এ রাজ্যে মমতার পর তৃণমূল কংগ্রেসে যদি কারোর জনসমর্থনের ভিত ও সাংগঠনিক ক্ষমতা থেকে থাকে তবে তা আছে একমাত্র শুভেন্দু অধিকারীরই।কেউ কেউ বলেন মেদিনীপুরে শুভেন্দুর প্রভাব মমতার চেয়ে কোন অংশে কম নয়।শুভেন্দুর এই প্রভাব মমতাও যে সবসময় খুব ভাল ভাবে নিয়েছেন তা নয়।

তৃণমূল কংগ্রেসের খবর করতে যে সব সাংবাদিক নিয়মিত যাতায়াত করেন তারা সকলেই জানেন,মমতার সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্কের রসায়নটা সবসময় ছিল অম্লমধুর।এই ভাল,তো এই মন্দ।তবে মমতা শুভেন্দুকে চট করে চটাতে চান না।মমতা একসময় চেষ্টা করেছিলেন মেদিনিপুরে শুভেন্দুর বিকল্প কোন নেতা যিনি একান্তভাবে মমতারঅ অনুগত হবেন,সেরকম কাউকে তৈরি করতে।

কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি।আর সেই কারণেই মমতা একসময় শুভেন্দুর ক্ষমতার রাশ আলগা করতে প্রয়াসী হন।সেই কারণেই যুব কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে শুভেন্দুকে সরিয়ে নিয়ে আসেন রাজনীতিতে একেবারে নবীশ তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাদ্যায়কে।বিষয়টা যে সে সময় শুভেন্দু ভালভাবে নেয়নি তা বুঝতে কারোরই অসুবিধা হয়নি।

তবু শুভেন্দু সে সময় সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন।এর পর মমতা ক্রমশ অভিষেকের ক্ষমতা বাড়িয়ে তাকে মমতার পরের জায়গায় নিয়ে আসতে থাকেন।শুভেন্দু বুঝে যান তৃণমূলে থাকলে তিনি কোনদিনই মমতার পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন না।শুভেন্দু তখন থেকেই নানা ছক করতে থাকেন।

শোনা যায় তিনি বিজেপিকে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁকে প্রোজেক্ট করলে তিনি তৃণমূল ছাড়ার কথা ভাবতে পারেন।সেইমত আলোচনায়ও অনেকদুর পর্যন্ত এগিয়েছিল বলে নির্দিষ্টসূত্রের খবর।গোটা বিষয়টা মমতার কানেও যায়।তিনিও পান্টা গুটি সাজাতে শুরু করেন।শোনা যায় মমতা সে সময় শুভেন্দুর যাবতীয় অনৈতিক কাজকর্মের থতিয়ান সংগ্রহ করতে থাকেন পুলিশ মারফত।

যাতে শুভেন্দু দল ছাড়লেই তাঁকে পুলিশ দিয়ে শায়েস্তা করা য়ায়।গোটা বিষয়টা বুঝতে সময় নেননি শুভেন্দুও,তিনিও বিজেপি নেতাদের খবর দিয়ে দেন এখনই নয় বরং এ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে আগে যাবতীয় ব্যবস্থা হবে যাতে মমতা তাঁর বিরুদ্ধে পান্টা কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ না পান।

তবে এ রাজ্যে শুভেন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী প্রজেক্ট করা নিয়ে রাজ্য বিজেপি তো বটেই দিল্লির বিজেপি নেতাদেরও আপত্তি আছে।শুধু তাই নয় বিজেপির সমর্থক সংগঠন আরএসএসও শুভেন্দুকে মুখ্যমন্ত্রী করার বিষয়ে আপত্তি তোলে।এখানেই আটকে যায় শুভেন্দু বিজেপির সখ্য।এসবই হয় গত লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে।

লোকসভা নির্বাচনের পর মমতা বুঝে যায় তার বিপদ এসে গেছে তাই এখনই শুভেন্দুকে ছাড়া যাবে না তাহলে তার রাজ্য হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।সেই কারণেই আবার শুভেন্দুর উপর ভরসা করতে শুরু করেন মমতা।

একাধিক জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে।এর মধ্যে শুভেন্দুকে দলের প্রধান সেনাপতি করে সামনে আনার প্রতিশ্রুতিও আছে বলে শোনা যাচ্ছে।অভিষেককে দলে একটু পেছনের সারিতে রেখে দেওয়ার কৌশলও নেওয়া হয়েছে শুভেন্দুকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁর অভিমান মুছে দেওয়ার জন্য।

মমতা জানেন এই মুহুর্তে শুভেন্দু দল ছাড়লে তাঁর দলের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়বে,তাই শুভেন্দুকেই প্রধান ভরসা বলে প্রচারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।ভালবেসে ও গুরুত্ব বাড়িয়ে কাছে রাখার প্রয়াস যেমন চলছে তেমনি মমতা সতর্ক নজর রাখছেন শুভেন্দুর গতিবিধির উপর।তিনি কোথায় যাচ্ছেন,কার সঙ্গে কথা বলছেন সে বিষয়ে মমতা নজরদারি শুরু করেছেন বলে খবর।

শুভেন্দুকে নিয়ে মমতার আশঙ্কা প্রবল কারণ শুভেন্দু আচমকা ধোঁকা দিলে তাঁর ভিত নড়ে যেতে পারে.তাইতো শুভেন্দুকে সাংসদ থেকে বিধানসভায় এনে মন্ত্রী করে তাঁকে চোখে চোখে রাখার ব্যস্থা তিনি অনেক আগেই করেছেন।এবার গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি তাঁকে নজরেও রাখছেন তৃমমূল সুপ্রিমো।

তৃণমূল শিবিরের অনেকেই বলছেন ঠ্যালার নাম বাবাজি,মমতা এখন ঠ্যালায় পড়ে শুভেন্দুকে আদর করতে বাধ্য হচ্ছেন।সময় ঘুরলে তিনি যে আবার শুভেন্দুকে ছেঁটে তার ভাইপোকে সামনে আনবেন না তার কোন নিশ্চয়তা নেই।সে কথা শুভেন্দুও জানেন।

রাজনীতিতে তাঁর বুদ্ধিও কিছু কম নয়।ফলে আগামি দিনে শুভেন্দু ও তৃণমূল সুপ্রিমোর সম্পর্ক কোন খাতে বয় তার উপর বঙ্গ রাজনীতির অনেক চমক নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here