দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ বুধবার নবান্নে করোনা পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রের পাঠানো টেস্ট কিট নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন টুইট করে বলেছেন, ‘‌রাজ্যে ত্রুটিপূর্ণ টেস্ট কিট পাঠানো হয়েছে। এদিকে বলে দেওয়া হয়েছে, সেগুলি যেন ব্যবহার করা না হয়।’‌

‘যথেষ্ট‌ টেস্ট কিট দিচ্ছে না কেন্দ্র। যা দিয়েছে তাও ফেরত নিয়েছে। বলেছে, ওগুলো খারাপ। তাহলে কার দোষ?’‌ এদিন বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী খিদিরপুর, বালিগঞ্জ ফাঁড়ি, পার্ক সার্কাস ৪ নম্বর ব্রিজ এলাকা সরজমিনে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন নগরপাল অনুজ শর্মা। মঙ্গলবারের মতো এদিনও নাগরিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘‌ভয় পাবেন না। সরকার পাশে আছে। যে কোনও প্রয়োজনে পুলিশকে বলবেন।’‌

এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‌র‌্যাপিড টেস্ট কিট ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আইসিএমআর, নাইসেড থেকে যা এসেছিল তুলে নিচ্ছে। হয় বলছে খারাপ, না হয় বলছে নেই!‌ আমরা কী করব!‌‌ পিপিই নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলা হয়েছে। মাত্র সাত হাজার দিয়েছে। রাজ্য সরকার দিয়েছে ৪ লক্ষ ১৯ হাজার।

খালি বড় বড় কথা। রোজ মিটিং। কখনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখতে আসছে, কখনও লকডাউন দেখতে আসছে। মাঝে মাঝে স্ট্রং লেটার পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমরাও দিতে পারি।’‌


মুখ্যমন্ত্রী এদিন সংবাদমাধ্যমের একাংশের উদ্দেশে বলেন, ‘‌বাংলার বদনাম করা হচ্ছে। অ্যান্টিজেন কিট্‌স ওরা পাঠায়নি। ভাগ্যিস আমাদের স্বাস্থ্য দপ্তর অর্ডার দিয়েছিল। স্বাস্থ্য দপ্তরকে ধন্যবাদ। সময় মতো আমাদেরই পরীক্ষা করাতে হবে। না হলে রোগী মারা যেতে পারে। এগুলো কার দোষ?‌ ‌ভিটিএম কিট মাত্র আড়াই হাজার পেয়েছি। নমুনা পরীক্ষায় দুটো করে কিট লাগে। একটা করে দিয়েছে।

ওদের কী পরিকল্পনা আমার মাথায় ঢুকছে না!‌ ঠাকুর ঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি। একটা করে নির্দেশ তুলে দিয়ে চিঠি দিচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ওটা ছিল পরিযায়ী শ্রমিক ও ভুয়ো খবরের বিষয়ে।’

এদিন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বলেন, ‘‌র‌্যাপিড টেস্ট নিয়ে সমস্যা হয়েছে। ৪৫ হাজারের বরাত দেওয়া হয়েছিল আইসিএমআর–এর কাছে। আড়াই হাজার পাঠিয়েছে। কারখানা শিল্পতালুক খুলতে চেয়ে আবেদন আসছে। ৯৮৮ জনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ৫৮৪টা বাতিল। স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের পিপিই, এন ৯৫ মাস্ক, চশমা দেওয়া হয়েছে। সাবধানতা সত্ত্বেও সংক্রমণের খবর পেলেই তাঁদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। দ্বিতীয় দল কাজ করছে।’‌

বাদুড়িয়া, আলিপুরদুয়ার বিষয়ে মুখ্যসচিব বলেন, ‘‌পুলিশের ওপর হামলা, বাড়ি ফেরা নিয়ে সমস্যা— পশ্চিমবঙ্গে অনেক কম। খবর পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে যোগাযোগ করতে সমস্যা হয়। পরে বিষয়টা মিটেও যায়। আমাদের কাজ মানুষকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠানো।’‌ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল নিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ‘‌আমরা ওঁদের ডাকিনি। ওঁরা ভারত সরকারের কাজে এসেছেন। আমরা আমাদের কাজ করছি। আশা করব, কেন্দ্রীয় দল ঠিক তথ্যই বলবে।’‌

ডিজিটাল রেশন কার্ড নিয়ে মুখ্যসচিবের বক্তব্য, ‘‌ডিজিটাল রেশন কার্ড না থাকলেও রেশন পাবেন। আবেদনের কাগজ দেখালেই হবে। যাঁরা অন্য জেলায় যেতে পারছেন না। তাঁদের আমরাই দেখছি। এর ব্যতিক্রম হবে না।’‌

জুট মিল খোলা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এখন ১৫ শতাংশ লোক দিয়ে কাজ চলছে। আমরা চাই মিল চলুক। হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার জুট মিলগুলি বেশিরভাগ ঘনবসতি এলাকায়। বেশি লোক একসঙ্গে এলে সমস্যা হতে পারে।’‌
কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধায় ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তে ১৬ দিন ৬২টি ট্রাক ও ১০০–র ওপর মানুষ আটকে। মুখ্যসচিব বলেন, ‘স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে বাংলাদেশ থেকে ফেরত–‌আসা কোনও নাগরিককে এদেশে ঢোকানো যাবে না। যখন তাঁরা গিয়েছিলেন তখন একরকম পরিস্থিতি ছিল। এখন অন্যরকম পরিস্থিতি। ৩ মে পর্যন্ত কাউকে ভারতে আনা যাবে না।’‌

মঙ্গলবার ক্যাবিনেট সচিব অজয় ভাল্লা মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে চিঠি দেন। বুধবার মুখ্যসচিব তার উত্তর পাঠিয়েছেন। এদিন আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে মুখ্যসচিবকে। গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি কমিটি নিয়ে তিনি বলেছেন,‘‌আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক হওয়ার কথা। শুক্রবার জানাতে পারব। স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে কীভাবে সচেতন করতে পারি, তা নিয়ে কাজ করছি।’‌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here