রতন সিনহা, কলকাতা: রবিবার ‘দেশের সময়’ পত্রিকার ফোটো গ্যালারির জন্য অন্যদিনের মতো শনিবারও ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়েছিলাম কলকাতার রাস্তায়৷ হঠাৎই মানিক তলার কাছে চোখে পড়ল, এল পিজি চালিত অটোরিকশার ছাদকে এক টুকরো সবুজ বাগানে পরিণত করে রাজপথ ধরে যাত্রী নিনিয়ে ছুটছে এক অটো চালক। পথ চলতে গিয়ে হঠাৎ চমকে যাওয়ার মতো দৃশ্য। এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে,গাড়ীর জানালা দিয়েই ছবি তুললাম বেশ কয়েকটি৷ একটু সামনে এগোতেই বাদিকের রাস্তা ধরে সোজা রওনা দিল ‘ছাদ কৃষি’ অটো। কথা হল না চালকের সাথে।

আমার গাড়ির চালকের কাছে জানতে পারলাম, অটোরিকশার ছাদে বাগান করেছেন নিজের খরচে। প্রতিদিন নিজ হাতেই গাছের যত্ন নেন। মানিকতলার অটো চালক। বৃক্ষ পরিচর্যার প্রতি দিনে দিনে মানুষের অনীহা তাঁকে মর্মাহত করে। বিনে পয়সায় অক্সিজেন, ফল-ফলাদি, জ্বালানি ও ছায়ার সরবরাহ দেওয়া গাছকে নির্মমভাবে কেটে ফেলায় তিনি ক্ষুব্ধ। আর এই ক্ষোভকে শক্তিতে পরিণত করতেই তাঁর এই ছাদকৃষি।

সবুজায়নে ব্রতী হওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে এল? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছাদকৃষি আমাদের কাছে এক ধরনের প্রতীকী পরিবেশ আন্দোলন। ব্যাপক বৃক্ষ নিধনের কারণে সামান্য গরমেই এখন আমরা অস্থির বোধ করি। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটেছে। আমাদের যার সাধ্যের ভেতর যতটুকু সম্ভব, ততটুকু বৃক্ষায়ন এবং সেটিকে পরিচর্যার মাধ্যমে এই পরিবেশ আন্দোলনকে আমরা আরও অর্থবহ করে তুলতে পারি।’
তাঁর এই উদ্যোগ যাত্রীদের নিঃসন্দেহে আকৃষ্ট করবে। পাশাপাশি তাঁর এই ছাদকৃষি দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে বৃক্ষের প্রতি আমাদের মমত্ববোধকে জাগ্রত করবে এবং প্রকৃতিপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়। রুক্ষ, রুগ্‌ণ শহর কলকাতা প্রাণ ফিরে পাবে। ছায়া সুনিবিড় এক শান্তির আধারে পরিণত হবে। ফুলে-ফলে ছেয়ে যাবে শহরের বাড়ি-ঘর আর রাস্তা-ঘাট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here