দেশের সময়ঃ -সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি নেতা মুকুল রায় দাবি করেছেন যে এই মূহুর্তেই তৃমমূলের ১০৭জন বিধায়ক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য তৈরি।এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে ঐ সব বিধায়কদের এক প্রস্ত কথাও হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন অধুনা বাংলা রাজনীতির চানক্য বলে বিবেচিত হওয়া মুকুল রায়।তিনি এটাও জানিয়ে রেখেছেন যে সেই নামের তালিকা তিনি ইতিমধ্যেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহকে দিয়ে রেখেছেন।

তালিকা দেখে বিষয়টি সম্পর্কে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহই।প্রথম পর্যায় বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে তেমন রাজি ছিল না এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল।তৃণমূলের পক্ষ থেকে এটাকে মুকুল রায়ের বাজার গরম করার প্রয়াস বলে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।কিন্তু বিভিন্ন সূত্র থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের কাছে যে খবর যেতে থাকে তাতে অচিরেই তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন বলে খবর।

তৃণমূলের একটা বড় অংশের বিধায়ক এখনই বিজেপির দিকে পা বাড়িয়ে ফেলেছেন বলে তৃণমূলের নিজস্ব সূত্রও বলছে।আর পরেই তৃণমূলের অন্দরে তুমুল আলোড়ন পড়ে গেছে কারা কারা বিজেপিতে যেতে পারেন সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য খোঁজার।এই তালিকায় যাদের যাদের নাম আছে তা দেখে তৃণমূলের ভেতরের নেতারাও চমকে যাচ্ছেন।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাদের ভরসা করেন শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যেও কেউ কেউ বিজেপি শিবিরে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

যেভাবে সেই তালিকা সাজানো হয়েছে তাতে মনে করা হচ্ছে এটা যদি সত্যিই সত্যিই হয় তবে ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের আগেই এ রাজ্যে বিধান সভায় শাসক দল সংখ্যা গরিষ্টতা হারাতে পারে।মুকুল রায়ও তেমনই ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছেন।

মমতার একদা কাছের মানুষ কাকন এখন বিজেপির পদ্মের শোভা বাড়াতে সেখানে যোগ দিয়ে দিয়েছেন,সবাইকে চমকে দিয়ে দিল্লিতে বিজেপির পার্টি অফিসে হাজির হয়ে গেছেন তৃণমূলের সেলিব্রিটি বিধায়ক দেবশ্রী রায়।শোভন-বৈশাখীর ব্যক্তিগত আপত্তিতে দেবশ্রী রায় তাঁদের সঙ্গে একই দিনে বিজেপিতে যোগ দিতে না পারলেও দেবশ্রীযে বিজেপিতে যাবেনই তাতে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

দেবশ্রীর মত মমতার অনুগত একজন যে ভাবে কাউকে কিছু জানতে না দিয়ে বিজেপির সঙ্গে সেতু বন্ধন ঘটিয়ে ফেলেছেন তা দেখে চোখ ছানাবড়া তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের।এি লাইনে যে আর বেশ কিছু বড় বড় নাম আছে এবার তারা তা বুঝতে পারছেন।মুখে মমতা আনুগত্য দেখিয়ে তলে তলে বিজেপির সঙ্গে সখ্য তৈরিতে আর কে কে আছেন তা নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরমোহলে।

শোনা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিশ্বস্ত নেতাদের বলছেন এখন কাউকেই আর ভরসা করা যাচ্ছে না,কে যে কোন লাইনে খেলছে বোঝা দায়।শোনা যাচ্ছে এ বিষয়ে মমতার এখনকার পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর মনে করছেন কোন নেতাকে ভরসা না করে মমতাকে এখন নিজের ক্যারিসমা বাড়াতে মনোনিবেশ করতে হবে,যে কোন ধাক্কাই আসতে পারে।তার মানে অনেকেই মনে করছেন বিজেপির দিকে তৃণমূলের একটা বড় অংশ ভিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ভীষন ভাবেই আছে।

মুকুল রায়ের দাবির যথেষ্টই সারবত্তা আছে বলেই মনে করছেন,প্রশান্ত কিশোরও,তাঁর মতে রাজনীতি যেখানে পাওয়ার গেম সেখানে এটা হওয়া স্বাভাবিকও,তাই কৌশলে তার মোকাবিলা করতে হবে।তাঁর কৌশল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত ক্যারিসমাকে এমন স্তরে নিয়ে যেতে হবে যে মানুষ মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে মমতাকে ভরসা করবেন।তাঁর দলের কেকে কোন দলে গেছে সেটা না ভেবেই।ঠিক সেভাবে ২০১১তে মমতাকে মানুষ ভরসা করেছিলেন।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ১০ বছর শাসন ক্ষমতায় থেকে মমতার পক্ষে কী আর সেই জায়গায় পৌঁছুনো সম্ভব?প্রশান্ত কিশোর তাঁর কৌশল সাজাচ্ছেন সেটা সম্ভব করে তোলার জন্য কিন্তু এ রাজ্যে ভোট কৌশলে যিনি প্রশান্ত কিশোরের চেয়েও পরীক্ষিত সৈনিক সেই মুকুল রায় বলছেন তৃণমূলের ভবিতব্য স্থির হয়ে গেছে,শুধু সেটা প্রকাশ্যে আসার অপেক্ষা।

অমিত শাহ মুকুল রায়ের তালিকা নিয়ে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর চড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।আর তারপরেই হয়তো দেখা যাবে বঙ্গ রাজনীতির এক নতুন চেহারা।আয়ারাম গয়ারামের যে রাজনীতিকে বাংলা চিনত না সেভাবে সেই রাজনীতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই রাজ্যবাসীকে চিনতে শিখিয়েছে।এখন সেই রাজনীতির চক্করে তাঁর দলের আসনই যদি টলে যায় তবে ভাগ্যকে দায়ী না করে মমতার উচিত নিজের কৃতকর্মকেই দায়ী করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here