দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অত্যন্ত গরিব পুরোহিত, দরিদ্র সনাতনী ব্রাহ্মণ, হয়তো সারা বছর খুব বেশি পুজো পান না, আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের কথা মাথায় রেখে পুরোহিত ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এরকম ৮ হাজার পুরোহিতের তালিকা আমরা পেয়েছি। তাঁদের মাসে হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।” পাশাপাশি, যাঁদের বাড়ি নেই তাঁদের বাংলার আবাস যোজনার বাড়ি দেওয়া হবে।

এদিন এই ঘোষণা করার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাজ্যে যাঁরা ইমাম আছেন বা মোয়াজ্জেম আছেন, তাঁদের নিয়ে অনেকে বড় বড় কথা বলেন। তাঁদের ওয়াকফ বোর্ড কেন দেবে! আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাঁরা গরিব পুরোহিত, অনেকেই আমাদের কাছে সমস্যার কথা বলেছেন, সে সব কথা মাথায় রেখে আমরা হাজার টাকা করে মাসে তাঁদেরও দেব। সেইসঙ্গে যাঁদের বাড়ি নেই, তাঁদের বাড়িও বানিয়ে দেব বাংলা আবাস যোজনায়।”

পুজোর আগে থেকেই যাতে এই পুরোহিত ভাতা শুরু করা যেতে পারে, তা মুখ্যসটিবকে দেখে নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এছাড়াও মমতা এদিন বলেন, “সনাতন ধর্মের অনেকেই একটা অনুরোধ করেছেন তাঁদের জন্য তীর্থস্থান গড়ে দেওয়ার। আমরা তা গড়ার জন্য কোলাঘাটে জমি চিহ্নিত করেছি।” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজ হিন্দি দিবস। বাংলা মাতৃভাষা হলেও বাঙালিরা সমস্ত ভাষাকেই সম্মান করেন। কোনও ভাষাকে অবজ্ঞা করা হয় না এখানে। তাঁর কথায়, “আমরা ২০১১ সালেই একটি হিন্দি অ্যাকাডেমি গঠন করেছিলাম, আজ হিন্দি অ্যাকাডেমি কমিটিও গঠন করছি। এছাড়া দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমিও গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মতুয়া ডেভেলপমেন্ট বোর্ডও গঠন করেছি আমরা।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন প্রাচীন উপজাতির ভাষা ও সংস্কৃতির কথা লেখা যে ৩ হাজার পাণ্ডুলিপি বিষ্ণুপুরের জাদুঘরে আছে, তা ডিজিটাইজ করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। বাংলার বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মস্থানের বা হেরিটেজের ম্যাপিংও করা হবে। ম্যাপিংয়ের পরে সরকার যদি মনে করে, তাহলে কোনও ধর্মস্থানকে হেরিটেজ হিসেবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গ্রহণও করতে পারে।

বাংলায় ক্ষমতায় আসার পরপরই ইমাম ভাতা চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই পদক্ষেপকে সংখ্যালঘু তোষণ বলে সমালোচনা করেছিলেন বিরোধীরা। অনেকের বক্তব্য ছিল, এতে সংখ্যাগুরুর আবেগও আহত হয়েছে।

এ বার পুরোহিত ভাতা যখন শুরু করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী তখন একুশের ভোটের মাত্র ৬ মাস বাকি। তাঁর সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে তাই অনেকেই রাজনীতি ও ভোটের সঙ্গে জুড়ে দেখছেন। তাঁদের মতে, উনিশের ভোটে বাংলায় বিজেপি ১৮টি আসনে জিতেছে। তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বাংলায় ধর্মীয় মেরুকরণ কতটা তীব্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ভোটের পর বলেছেন, ‘টোটালটাই হিন্দু মুসলমান হয়ে গেছে’। হতে পারে এই অবস্থায় হিন্দু তথা সংখ্যাগুরুদের বার্তা দেওয়ার জন্য এই পদক্ষেপ করলেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here