পার্থ সারথি নন্দী, পেট্রাপোল: ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানে কাঁটাতার উধাও হয়ে যায় ম্যাজিকের মতো৷ চোখের সামনে ভেসে ওঠে শুধু জন সমুদ্র৷ ভাষা দিবসকে ঘিরে পেট্রাপোল-বেনাপোলের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দু’দেশের আবেগতাড়িত মানুষের মেলামেশায় সীমান্তও যেন এক দিনের জন্য দু’দেশ এক হয়ে য়ায়।

কারণ, ওই নো ম্যানস ল্যান্ডেই যৌথ ভাবে একটি মঞ্চ গড়ে ভারত এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পালিত হয় ‘ভাষাদিবস’। সমবেত মানুষের কারও হাতে থাকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। কারও কারও গালে আঁকা বর্ণমালা। দু’দেশের মন্ত্রী-সাংসদ,মেয়র,পুরধান এবং অঞ্চল প্রধানেরা কাঁটাতারের বিভেদ তুলে দেওয়ার দাবি তোলেন ওই মঞ্চ থেকে।

সারাদিন ধরে চলে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।হয় শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টি বিতরণ, শহিদবেদিতে মাল্যদান করেন দু’দেশের অতিথিরা। ওই মঞ্চ থেকে সম্মান জানানো হয় কবি সাহিত্যিক সহ বিভিন্ন গুণী বেক্তি দেরকে।

এখন চলছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। প্রতি বছর এই মাসটিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাষা শহীদদের স্মরণ করে বাঙালী জাতি।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আনুষ্ঠানিভাবে শহীদ মিনারে গিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সব শ্রেণির মানুষ।

অমর একুশে ফেব্রুয়ারির এখনও এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও যথাযথভাবে দিনটি পালনের জন্য পেট্রাপোল সীমান্ত সহ বনগাঁয় সার্বিক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। শুক্রবার সীমান্ত এলাকা সরেজমিন পরির্দশন করেন ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ৷

বনগাঁ পুরসভার পুর প্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন দু’দেশের প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হয়েছে এবার দু’দেশে দুটি মঞ্চ গড়ে পালন হবে ভাষা দিবস। তিনি আরও জানান ২০২০ ভাষা দিবস পালন হবে দু’দেশেই। বাংলাদেশের বেনাপোলে একটি মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠান করবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে পেট্রাপোলে একটি মঞ্চ করে এদেসের ভাষা দিবস পালন করা হবে।

এদিন বাংলাদেশের যশোর ১ সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পেট্রাপোলে আসেন। বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান শংশঙ্কর আঢ্যের নেতৃত্বে এপার বাংলার একটি প্রতিনিধি দল এদিনের মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিএসএফ ও বনগাঁ পুলিশ জেলার প্রশাসনিক কর্তারাও এদিনের মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের যশোর ১ এর সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন জানান, ঢাকায় অমর একুশের প্রথম প্রহরে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও বিদেশি কূটনৈতিক কর্মকর্তারা শহীদবেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাতে আসবেন। আমরা বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের শহীদবেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করব৷ এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দলের সদস্যরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ উপস্থি থাকবে এদিন।

বি এস এফ সূত্রে জানা গেছে ভিভিআইপি সহ সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেস্টনি থাকবে। শুক্রবার সীমান্তে গিয়ে দেখা গেল মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা, ভাষা আন্দোলন ও ভাষা শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন স্মৃতিচারণ ও অনুপ্রেরণামূলক লেখনি লেখার উদ্দেশ্যে দেয়াল লিখন শুরু হয়েছে ৷

বনগাঁ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন,পেট্রাপোল সীমান্তের উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁর নেতৃত্বে, ‘‘প্রজন্ম পরম্পরায় আমরা এই উৎসব এগিয়ে নিয়ে যাব। দু’দেশের মানুষের হৃদয়ের আবেগ যে কাঁটাতার দিয়ে বেঁধে রাখা সম্ভব নয়, এখানে না এলে তা বোঝা যাবে না।’’ তাই এপার বাংলার সমস্ত মানুষকে একুশের সকালে শহীদবেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাতে আহ্বান জানাচ্ছি।

পুলিশ সূত্রের খবর,গত বছরের মতো এবছরও নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকবে৷ পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পরে গত বছর দু’দেশের সীমান্তেই কড়া নিরাপত্তা ছিল। বহু মানুষ ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ ঢুকতেই পারেননি। ও দেশের বিজিবি ও পুলিশ তাঁদের বেনাপোল সীমান্তেই আটকে দেন। এ বছর করোনা ভাইরাসের কারনেও নিরাপত্তায় আরও বেশি জোড় দেওয়া হয়েছে৷

তবু এতো বাঁধার কাছে মাথা নত করতে চায়না দু’পারের মানুষ৷ কবি বিভাস রায় চৌধূরী এবং মলয় গোস্বামীর কথায় ওই দিন মাথা নত কোরব শহীদদের বেদিতে৷চলছে তারই প্রস্ততি৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here