বাঙালির বসন্ত ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ভালবাসা দিবস, দু’টোই এবার একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে। ভালবাসা দিবসে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রচিত হবে ফাল্গুন। বসন্তের সঙ্গে আরও বেশি জুড়ে গেল ভালবাসা।

পার্থ সারথি নন্দী,দেশের সময়: শুধু এবার নয়, বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাব বদলে যাওয়ায় ভবিষ্যতে এ নিয়মেই দিবস দুটি উদযাপিত হতে পারে। এতকাল ১ ফাল্গুনের দিনটি ছিল বাসন্তী রঙের। হলুদ রঙে ছেয়ে থাকত। আর ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালবাসা দিবসের রং বরাবরই লাল। কিন্তু এবার কোন রঙ বেছে নিল বাঙালী?

বাংলাদেশে গত বছর পর্যন্ত ১ ফাল্গুন মানে ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। সেই অনুযায়ী, ১৩ ফেব্রুয়ারি সেদেশে বসন্ত দিবস হিসেবে উদযাপিত হতো। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি সবাই মাততো ভালবাসা দিবসের আনুষ্ঠানিকতায়। এভাবে প্রথম দিন বাসন্তী রং, পরের দিন আমূল বদলে রংটি হয়ে যেত লাল। পরপর দু’দিন উৎসবে মাততো ঢাকা। এবছর হিসাব নিকাশ বদলে গেছে ওপার বাংলায়।


বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পরিবর্তন আনার ফলে ১৪ ফেব্রুয়ারি ফাল্গুনের দিন গোনা শুরু হবে। খ্রিস্টীয় সন গণনায় যেহেতু কোন পরিবর্তন নেই সেহেতু ভালবাসা দিবস থাকছে আগের মতোই। ফলে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালাবাসা দিবস হিসেবে যথারীতি উদ্যাপিত হবে। এর সঙ্গে যোগ হবে বসন্ত উৎসব। যেদিন বসন্ত উৎসব, সেদিনই ভালবাসার বিশেষ দিবস ভ্যালেন্টাইনস ডে।
ফলে উদযাপনের ছবিটা কেমন হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কেউ বলছেন, বাঙালী হিসেবে বসন্তকেই সামনে রাখবেন সবাই। বাসন্তী রঙেই সাজবে বাংলাদেশ। আবার কারও কারও মতে, ‘ভালবাসি’ বলার জন্য ভ্যালেন্টাইনস ডে’র চেয়ে বিশেষ দিবস আর হয় না। উইল ইউ বি মাই ভ্যালেন্টাইন? এ প্রশ্নটিও এদিনই করা যায় শুধু। এ কারণে অনেকেই ভালবাসার লাল রঙে সেজে ঘর থেকে বের হয়েছেন। অর্থাৎ বিগত দিনের মতো শুধু হলুদ কিংবা লাল রঙের হবে না। রঙিন হয়ে উঠেছে বলা যেতেই পারে।

এপার বাংলায় এদিনের ছবিটাও কোন অংশে কম নয়! ভারতের সীমান্ত শহর বনগাঁ রেল স্টেশন এর রেলপথ ধরে এক তরুণী মোবাইল কানে নিয়ে জোর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বারংবার বলেই চলেছে “আমি তোমাকে ভালবাসি”…শব্দ গুলি উচ্চারণের তীব্রতা ছিল এতটাই যে তরুণীর পিছনদিক থেকে ছুটে আসা শিয়ালদহ- বনগাঁ লোকালের হর্ণের শব্দও কম বলে মনে হলো প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের কাছে।

দূরথেকে একসাথে চিৎকার করে তরুণীকে রেললাইন থেকে সরেযেতে বলতেই একগাল হেসে বললো ধন্যবাদ,যদিও খুব যে ভ্রুক্ষেপ ছিলনা সে বিষয়ে সন্দেহ ছিল না, কারণ একটু দূরেই দাঁড়িয়ে থাকা তরুণের দিকে হাত ইশারা করে ছুটে গেল ঐ তরুণী৷অনেকে বলেই ফেল লেন ভালবাসার কাছে মৃত্যুও তুচ্ছ বলে মনে হয় অনেক সময়৷

এদিন অনেক যাত্রীকেই মোবাইল ফোন এ কথা বলতে বলতে রেল লাইন পারাপার করতে দেখা গেল হয়ত জীবনের চাইতেও প্রিয়জনের কন্ঠস্বরই আজ বেশি গুরুত্ব ছিল তাঁদের কাছে, কারন আজ যে ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালবাসা দিবসে প্রিয়জনের ডাকে সাড়াদিতেই হবে।

বনগাঁ ৮-৩২মি: লোকাল ট্রেনের কামরায় নিত্যযাত্রীরা শিশুদেরকে চকোলেট,ফুল বিতরণ করেন৷রঙিন বেলুনে সাজিয়ে তোলেন গোটা কামরা, অনেকে আবার গাইলেন কিশোর কুমারের বিখ্যাত বাংলা গান “আমার পুজার ফুল ভালবাসা হয়ে গেছে…”

অন্য দিকে ওই তরুণ তরুণী হাত ধরে রেলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সকলের চোখের আড়াল হল।পৃথিবীর সব প্রেম আজ ওদের দু’জনের হয়তো প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে,হুঁশ নেই রেলপথ, ভ্রুক্ষেপও নেই আজ ভালবাসার দিন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here