দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পূর্ব পরিকল্পনা মতোই বাংলার  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার লখনউতে সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদবের সাথে যৌথ অনুষ্ঠান করলেন। যেখানে উত্তরপ্রদেশবাসীকে অখিলেশকে ভোট দিতে বললেন মমতা।

সোমবারই ভোটপ্রচার করতে উত্তর প্রদেশে পৌঁছন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে সমাজবাদী পার্টির সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসও ছিল চোখে পড়ার মতো৷

উত্তরপ্রদেশে পা রেখেই রণহুঙ্কার দেন মমতা। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তিনি উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির জয় এবং বিজেপির হারের লক্ষ্যে এসেছেন। মঙ্গলবার লখনউতে সমাজবাদীপার্টির কার্যালয়ে অখিলেশের পাশে বসে ভার্চুয়াল সভা করলেন মমতা। সেখানে বিজেপিকে হারাতেই যে তিনি যোগীর রাজ্যে এসেছেন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বারবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা।

বিজেপিকে হঠাতে অখিলেশকে সমর্থন 
উত্তরপ্রদেশ থেকে বিজেপিতে হঠাতে হবে, তাই অখিলেশকে ভোট দিন।  ভার্চুয়াল সভার প্রথমেই একথা স্পষ্ট করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী ভোট যাতে ভাগ না হয় সেজন্য তিনি উত্তরপ্রদেশে প্রার্থী দেননি সেকথা স্পষ্ট করে দেন তৃণমূলনেত্রী। উত্তরপ্রদেশ  বিজেপি হারলে দেশ থেকেও বিদায় নেবে, তাই মমতার আহ্বান, বিজেপিকে হঠাতে অখিলেশকে সমর্থন করুন। 

‘বাংলা পাড়লে, উত্তরপ্রদেশও পাড়বে’
 ঘরে ঘরে অখিলেশকে ভোটের আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরপ্রদেশের মা-বোনেদের এগিয়ে আসার আহ্বান। যুব সমাজকেও অখিলেশ যাদবকে ভোট দেওয়ার কথা বলেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘বাংলা পাড়লে, উত্তরপ্রদেশও পাড়বে’। মমতার কথায়, বিজেপি এখন ভারতের জন্য বিপজ্জনক রাজনৈতিক।  ‘আমরা পুরোপুরি অখিলেশকে সমর্থন করব, পাশে থাকব’ প্রতিশ্রুতি মমতার। ভবিষ্যতে  উত্তরপ্রদেশ ও বাংলা একসঙ্গে কাজ করবে বলে জানান তৃণমূলনেত্রী। 

৩ তারিখ ফের উত্তরপ্রদেশে মমতা
আগামী ৩ মার্চ সমাজবাদী পার্টির হয়ে ফের উত্তরপ্রদেশে প্রচারে যাবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৭ মার্চ বারাণসীতে ভোট। তার আগে বারাণসীতে ভোট প্রচারে যাবেন তৃণমূল নেত্রী। সেইসঙ্গে পুজোও দেবেন মমতা। উত্তরপ্রদেশে ‘খেলা হবে’ স্লোগানও তোলেন মমতা, বলেন এবার উত্তরপ্রদেশে খেলা থেকে বিজেপিকে আউট হবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কোভিডে, কৃষক আন্দোলনে, এনআরসি আন্দোলনে বহু মানুষ মারা গেছে। তাদের সবার পরিবারের একজনকে রেলে চাকরি দিতে হবে। পাশাপাশি কোভিডে যখন মানুষ মরছিলেন তখন যোগীজি কোথায় ছিলেন ? প্রশ্ন তোলেন মমতা। এর উত্তরও দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী,  ‘তখন আপনি বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারাতে গেছিলেন।’  বিজেপির স্লোগান নিয়েই মমতা ববেন, এবার উত্তরপ্রদেশে ৩০০ আসন পার করবেন অখিলেশ। 

 

দেশ থেকে বিজেপিকে হঠাতে হবে। যার শুরুটা হবে উত্তরপ্রদেশ থেকে। স্বাধীনতা আন্দলনে এই রাজ্যের অনেক অবদান ছিল সেকথাও মনে কিরয়ে দেন তৃণমূলনেত্রী। মমতার কথায়, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি হারলে, দেশেও বিজেপি হারবে, বললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

উত্তর প্রদেশে ভোট কাটাকাটি আটকাতেই তৃণমূল লড়াইয়ে নেই বলে এদিন জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকার ফের আসলে অর্থনীতি কর্মসংস্থান কিছুই হবে না বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, বিজেপি ভোটের কোকিল। ভোটের পর বিজেপির কাউকে দেখা যায় না। এই প্রসঙ্গে বাংলায় বিধানসভা ভোটের প্রসঙ্গও টানেন মমতা। 

আগামী ৩ মার্চ সমাজবাদী পার্টির হয়ে ফের উত্তরপ্রদেশে প্রচারে যাবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৭ মার্চ বারাণসীতে ভোট। তার আগে বারাণসীতে ভোট প্রচারে যাবেন তৃণমূল নেত্রী। সেইসঙ্গে পুজোও দেবেন মমতা। উত্তরপ্রদেশে ‘খেলা হবে’ স্লোগানও তোলেন মমতা, বলেন এবার উত্তরপ্রদেশে খেলা থেকে বিজেপিকে আউট হবে।

 

আগামী ৩ মার্চ বারাণসী যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওইদিন সেখানে বিশ্বনাথ মন্দিরে পুজো দেবেন এবং গঙ্গা আরতি করবেন।

মুখ্যমন্ত্রী বারাণসী যাবেন দু-দিনের সফরে। ৩ মার্চ সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গে যৌথ জনসভা করার পরিকল্পনা করেছেন।
বারাণসী-সহ উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশে মার্চের ওই সময় বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হবে। পূর্বাঞ্চলেই প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

গতকাল সোমবার বিকেলে বিশেষ বিমানে মুখ্যমন্ত্রী লখনৌ গিয়েছেন। আজ দুপুরে তিনি এবং অখিলেশ যাদব যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করবেন। ঠিক হয়েছে, সেই বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দেবেন বিজেপিকে যারা হারাতে চান তারা ভোট ভাগাভাগি না করে জোট বেঁধে অখিলেশকে জেতান।

গতকাল বিমানবন্দরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছনোর খানিক পরে হাজির হন অখিলেশ। তিনি নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। লখনৌ বিমানবন্দরের লাউঞ্জে দু’জনের দীর্ঘক্ষণ কথা হয়। তাতে ঠিক হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরপ্রদেশবাসীর উদ্দেশে ডাক দেবেন, বিজেপিকে হারাতে অখিলেশকে জেতান। তিনিই পারেন বিজেপিকে হারাতে।

উত্তরপ্রদেশে এবারের নির্বাচনে বরাবরের মতই একাধিক জোট এবং বহু দল এককভাবে লড়াই করছে। বিজেপির সঙ্গে যেমন আপনা দলের মতো ছোট পার্টির বোঝাপড়া আছে। তেমনই সমাজবাদী পার্টি জোট করেছে মূলত রাষ্ট্রীয় লোকদলের সঙ্গে। এ ছাড়াও বেশকিছু ছোট দলের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া হয়েছে। অন্যদিকে কংগ্রেস এবং মায়াবতীর বিএসপি কার্যত একাই লড়ছে। তবে এখনও পর্যন্ত যা নির্বাচনের চিত্র এবং প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষার ফল যা বলছে তাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির মূল প্রতিপক্ষ সমাজবাদী পার্টি।

বিজেপি নেতাদের প্রচারের বক্তব্য থেকেও সেটা স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যাঁরা কথায় কথায় কংগ্রেসকে টার্গেট করেন, নির্বাচনী প্রচারে সেই গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি সম্পর্কে তাঁরা খুব একটা আক্রমণাত্মক নন।


প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করলেও ভোটের বাক্সে তার কতটা প্রতিফলন ঘটবে তা নিয়ে সংশয় আছে। বরং বিজেপি বুঝতে পারছে যে যোগী আদিত্যনাথের শাসন নিয়ে যে বিজেপি বিরোধী হওয়া তৈরি হয়েছে তার প্রতিফলন হতে পারে সমাজবাদী পার্টির বাক্সে। সেই কারণেই বিজেপি নিশানা করেছে অখিলেশকে।

তবে প্রিয়াঙ্কা প্রচারে ভাল সাড়া পাচ্ছেন। তিনি এবার মহিলা ভোটারদের সমর্থন আদায়ে বেশি জোর দিয়েছেন। কংগ্রেসের প্রার্থীদের ৫০ শতাংশ মহিলা। আজ কংগ্রেস সম্পর্কে মমতা কী বলেন তা নিয়ে কৌতুহল রয়েছে।
এই রাজনৈতিক সমীকরণ বুঝতে পেরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন ছোট দলগুলি যে সামান্য ভোট পেতে পারে তা সমাজবাদী পার্টির ঝুলিতে গেলে বিজেপির পরাজয় একেবারে নিশ্চিত।

বিমানবন্দরের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতবছর বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, কেন্দ্রীয় সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অখিলেশকে অবহিত করেন। বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী যে দাপট দেখায় সেই অভিজ্ঞতাও অখিলেশকে জানিয়ে তাঁকে সতর্ক করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অখিলেশ যাদব একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছেন। বিশেষ করে বেশ কিছু অফিসারের ভূমিকা নিয়ে তাঁর অভিযোগ রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here