দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ হবে ২৭ মার্চ। তার সাত দিন আগে ভারতে নিযুক্ত প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূত আবদুল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে রকম প্রশংসা করেছেন এবং ঠারেঠোরে তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন, তা নিয়ে বিস্তর কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এই প্রশ্নও উঠছে, ব্যাপারটা কি একেবারেই সাজানো বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?


আপাত দর্শনে এই পাক কূটনীতিক ইসলামাবাদে বসেই বাংলার ভোট নিয়ে একটা সামগ্রিক পর্যালোচনা করেছেন। সেই প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সুখ স্মৃতি তুলে ধরেছেন আরব নিউজ নামে একটি সংবাদমাধ্যমে। বাংলার ভোট নিয়ে তাঁর মতামত জানাতে গিয়ে বসিত শেষে এও লিখেছেন, কার প্রতি তাঁর পক্ষপাত রয়েছে বলার অপেক্ষা রাখে না।

অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দু’বার সাক্ষাৎ হয়েছে এই পাক কূটনীতিকের। তাও কলকাতায়। তখন নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত তিনি। ২০১৫ সালে প্রথম বার কলকাতায় এসেছিলেন বসিত। ১৮ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন তিনি। বসিতের কথায়, সেই প্রথম সাক্ষাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নম্র ব্যবহারে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বুদ্ধিও ও প্রজ্ঞাও তাঁর মনে ছাপ ফেলে। তা ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জন্য কলকাতার স্পেশাল মটন বিরিয়ানি পাঠিয়েছিলেন হোটেলে।
বসিত লিখেছেন, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে শৈত্য চলছিল সে কথা মমতাকে জানিয়েছিলেন তিনি। কাশ্মীরে গিয়ে বসিত সেখানকার হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে সেবার দেখা করেছিলেন। তাই পাক সফর বাতিল করেছেন ভারতীয় বিদেশ সচিব। তার পর নয়াদিল্লি কঠোর অবস্থান নেয়।

বসিতের কথায়, তাঁরা ভাবতেও পারেননি কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদী সরকার এমন কঠোর অবস্থান নেবে।
তবে বসিত লিখেছেন যে এ সব ধৈর্য্য ধরে শুনেও কোনও মন্তব্য করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেননি।

প্রকৃত রাষ্ট্রনেতার মতোই আচরণ করেছিলেন মমতা। প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূতের কথায়, কলকাতার সঙ্গে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু নয়াদিল্লি-ইসালামাবাদ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শৈত্য না কাটায় তা আর এগোয়নি।

আরব নিউজে ফার্স্ট পার্সনে পাক কূটনীতিক আরও বলেছেন, বেশিরভাগ সেফোলজিস্ট বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আবার ক্ষমতায় ফিরবেন। তবে আগের থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপট কমবে। মমতাকে মোদী বিরোধী অন্যতম শক্তি বলে ব্যাখ্যা করে বসিত বলেছেন, সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য মজবুত বিরোধী থাকা জরুরি। এবং এ কথা বলে মমতার প্রতি তাঁর সমর্থনই জানিয়েছেন পাক রাষ্ট্রদূত।


এখন প্রশ্ন হল, আরব দুনিয়ায় বাংলার ভোট নিয়ে কি এতটা আগ্রহ রয়েছে? অতীতে এমন দৃষ্টান্ত কখনও দেখা যায়নি। এটা ঠিক দিল্লিতে বসে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের উপর নজর রাখছে। যা তারা বরাবরই করে। কিন্তু ইসলামাবাদে বসে প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূতের বাংলা তথা মমতাকে নিয়ে মতামত লেখার ব্যাপারটা অনেকের কাছেই আশ্চর্যের ঠেকছে।

কারও কারও মতে, ভোট ক্রমশই নিবিড় কৌশলের খেলা হয়ে উঠছে। আগের মতো শুধু দেওয়াল লিখে বা বক্তৃতা দিয়ে এখন প্রচার হয় না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে ভোটারদের প্রভাবিত করার নানা কৌশল নেয় সব পক্ষ। বিশেষ করে ভোটের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলি যখন বহু মূল্য দিয়ে পেশাদার সংস্থাকে ভাড়া করা হচ্ছে তখন কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। এই সব পেশাদার সংস্থা রীতিমতো কর্পোরেট কায়দায় ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং করেন। তবে এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও অভিযোগ প্রকাশ্যে কেউ তোলেনি। বা সে রকম প্রমাণ মেলেনি।


পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, বিষয়টিকে দু’ভাবে দেখা যায়। প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূত যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোদী বিরোধী শক্তি বলে বর্ণনা করেছেন, তা সংখ্যালঘুদের প্রভাবিত করতে পারে। আবার গেরুয়া শিবির এই ঘটনাকে অন্যভাবে দেখাতে চাইবে নিশ্চয়ই। পুলওয়ামার ঘটনার পর মোদী সরকার যখন তড়িঘড়ি ক্যাবিনেট মিটিং ডেকে পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন তদন্ত না করেই দোষ চাপানো হচ্ছে। মমতার সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। এ বারও গেরুয়া শিবিরের অনেকে বিষয়টিকে সে ভাবেই দেখাতে চাইছেন। যাতে সংখ্যাগুরুদের কাছে বার্তা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here