দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ আনিস খানের মৃত্যুর পর কয়েকদিন কেটে গেলেও এখনও কেন অধরা ঘটনার মূল অভিযুক্তরা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিলই। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার কারণেই বারবার সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছে আনিসের পরিবার। এই পরিস্থিতিতে বুধবার দুপুরে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”কারও কোন অপশাসন, দুঃশাসনের কাজ বরদাস্ত করব না। আমতার ঘটনার জন্য আমরা তদন্ত শুরু করেছি। পুলিশের দুজন অ্যারেস্ট হয়েছে। তাদেরকে হেফাজতে রাখা হয়েছে। যাতে তদন্ত নিরপেক্ষ হয় পুলিশের নামে অভিযোগ এসেছে।”

বারবার সিবিআই তদন্তের দাবি উঠছে আনিস কাণ্ডে। সেই বিষয়েও এদিন মুখ খুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ”আমিও আন্দোলন করে উঠেছি। গতকাল কলকাতায় কত সমস্যা হয়েছে। অনেকেই ফ্লাইট ধরতে পারেনি। এই সংস্কৃতি বাংলা সহ্য করবে না।

সিপিআইএম,বিজেপি-র ইন্টারেস্ট দেখার জন্য আমি আসিনি। মানুষের ইন্টারেস্ট দেখার জন্য এসেছি। এতটা দুর্বল আমাদের ভাবতে যাবেন না। সিপিআইএম এত কথা বলছে, দেখাতে পারবে ওরা কাউকে অ্যারেস্ট করেছে কখনও। সিঙ্গুর তাপসী মালিকের হত্যার কী বিচার হয়েছে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পাওয়া গেছে কি? হাথরস, উন্নাওতে কী হয়েছে, সবাই জানি আমরা।”

আনিস খান হত্যা কাণ্ডে মঙ্গলবার তিন জন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করেছিল স্বরাষ্ট্র দফতর। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন, আনিস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর কথায়,“আমতায় তদন্ত সবে শুরু হয়েছে। এখনও আমরা জানি না ঘটনাটা কী। স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিম সেখানে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য গিয়েছিল, কিন্তু তাদের তা করতে দেওয়া হয়নি। পুলিশেরও দুজন গ্রেফতার হয়েছে, জানি না তারা দোষী প্রমাণিত হবেন কিনা”।

এর পরই মুখ্যমন্ত্রী জানান, যে হেতু আনিস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাই ওই দুই পুলিশ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তের নিরপেক্ষতার স্বার্থেই তা করা হয়েছে। যাতে ওই দুই পুলিশ কর্মী তদন্তে প্রভাব খাটাতে না পারেন।
আনিসের হত্যাকাণ্ড নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে তাঁর পরিবার। সেই সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন বামেরা।

কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, সিবিআই তদন্তের দাবি রাজ্য সরকার মানবে না। উল্টে এ ব্যাপারে বরং বামেদের এক হাত নিয়েছেন মমতা। নন্দীগ্রাম থেকে শুরু করে বাম জমানায় একের পর এক ঘটনায় যে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ছবি খারাপ করার চেষ্টাও হচ্ছে। সেই সঙ্গে গোটা ঘটনাকে নিয়ে ধর্মীয় তথা সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের চেহারা দিতে যাচ্ছেন। যা রাজ্যের সার্বিক ভাবমূ্র্তির জন্য ভাল নয়।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন এও বোঝানোর চেষ্টা করেন যে বিক্ষিপ্ত একটি ঘটনার জন্য সামগ্রিক ভাবে পুলিশকে দায়ী করা ঠিক নয়। বামেদের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলে মমতা এও বলেন, এমনটা করবেন না। সবাই খারাপ নয়। আগামী দিনে তা হলে আপনাদের বাড়িতে চুরি ডাকাতি হলে পুলিশকে ডাকবেন না, তাই তো!

মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ”বাংলা শান্তির মাটি। বাংলাকে কাউকে কামড়াতে দেব না। সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। যে বা যারা দোষী, সকলে শাস্তি পাবে। আমরা মানবিক বলে আমরা অ্যাকশন নিই।”

প্রসঙ্গত, আনিস হত্যায় সিট গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে সাসপেন্ড করা হয়েছিল তিন পুলিশ কর্মীকে। ফলে বিষয়টি নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে ক্ষোভ। মঙ্গলবারই আনিসের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ দেখান ছাত্ররা। মঙ্গলবার আনিস খানের বাড়িতে গেলে প্রথমে কিছুক্ষণ বাধা পেলেও অবশেষে বাড়িতে ঢুকতে পারেন সিট-এর তদন্তকারী অফিসাররা। বুধবারও তাঁরা যায় আনিসের বাড়িতে। সেই সময়ও সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে পরিবার।

পর্যবেক্ষকদের মতে, রিজওয়ানুর কাণ্ডে অতীতে বুদ্ধদেব ভটাচার্য প্রশাসন যেরকম একগুঁয়ে মনোভাব দেখিয়েছিল, মমতা তা করছেন না। বরং দুই পুলিশ কর্মীকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে আনিসের পরিবার তথা সাধারণ মানুষের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক মজবুত করার বার্তাই দিতে চেয়েছেন তিনি। তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য হল তা অবশ্য সময় বলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here