দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: এবার আদালতে নয় তিন আইনজীবীর লড়াই হবে ভবানীপুরে। বিচারকের আসনে থাকছেন জনতা। ভবানীপুরের উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী মমতা ব্ন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে বামেরা দাঁড় করিয়েছে তরুণ আইনজীবী শ্রীজীব বিশ্বাসকে। আর এদিকে শুক্রবার বিজেপি প্রার্থী করল আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালকে। 

তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালে যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ থেকে আইনে স্নাতক হন তৃণমূল নেত্রী। একবার দলীয় কর্মীদের হয়ে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সওয়াল করতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। অন্যদিকে, মমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা পেশাদার আইনজীবী। একাধিকবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে আদালতে সওয়াল করেছেন তিনি। ভোট-পরবর্তী হিংসার ক্ষেত্রে রাজ্যের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলাও লড়েছেন। অন্যদিকে,বামেদের প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসও পেশায় একজন আইনজীবী। অর্থাৎ, ভবানীপুর এখন কার্যত আদালত চত্বরে পরিণত হয়েছে৷ সেখানে লড়াই হবে এই তিন আইনজীবীর। 

ভবানীপুর উপনির্বাচনের জন্য তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে শুক্রবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কয়েক ঘণ্টা আগেই মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। সেই আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে পাশে বসিয়ে বিকেলে বিজেপি রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ভবানীপুরে দুই পরাজিত প্রার্থীর লড়াই হচ্ছে। সন্ত্রাসের মুখের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখ লড়বে বিজেপির হয়ে।
এদিন দিলীপ ঘোষকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ভবানীপুর নিয়ে কতটা আশাবাদী বিজেপি? মেদিনীপুরের সাংসদের সাফ জবাব, “নন্দীগ্রামে যতটা আশাবাদী ছিলাম ততটাই ভবানীপুর নিয়ে।” তাঁর কথায়, “নন্দীগ্রামে অনেকেই অনেক কথা বলেছিল। কেউ কেউ বলেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে এক লক্ষ ভোটেও জিতবেন। তারপর কী হয়েছে সবাই দেখেছেন।”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দিলীপ ঘোষ বা বিজেপি নেতারা যে কথা বলছেন তা কি হাওয়ায়? কেবলই বাজার গরম করার জন্য? গেরুয়া শিবির অঙ্ক কষে বোঝাতে চাইল, ভবানীপুরে মমতাকে হারানো যে সম্ভব তা শুধুই কল্পনাপ্রসূত নয়। তার বাস্তব ভিত্তি রয়েছে।

পরিসংখ্যান দিয়ে বিজেপি দেখিয়েছে, উনিশের লোকসভা ভোটে ভবানীপুর বিধানসভায় বিজেপি ভোট পেয়েছিল ৫৭ হাজার ৯৫৯টি। তৃণমূল পেয়েছিল ৬১ হাজার ১৩৭। ব্যবধান ছিল, তিন হাজারের কিছু বেশি। এখানে বলে রাখা ভাল, উনিশের লোকসভায় দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন চন্দ্র বসু। বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, রাজনীতিতে আনকোড়া চন্দ্র বসু যদি তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ব্যবধানকে তিন হাজারে নামিয়ে আনতে পারেন তাহলে প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের মতো রাজনীতির চেনা মুখ যে লড়াইকে আরও জোরদার করবেন তা বলাইবাহুল্য।

বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, ভবানীপুরে বিজেপির নিজস্ব একটা ভোট রয়েছে। সেটাকে তৃণমূল ও অস্বীকার করতে পারবে না।
তা ছাড়া বিজেপির ভোট পাটিগণিতের খাতায় আরও একটি সমীকরণ মোটা হরফে লেখা রয়েছে। তা হল সংখ্যালঘু ভোট। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, নন্দীগ্রামে ৩৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। সেখানেও জিততে পারেননি মমতা। আর ভবানীপুরে সংখ্যালঘু ভোট মাত্র ২২ শতাংশ।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালব্য এদিন টুইট করে বলেছেন, ভবানীপুরের নির্বাচন শুধুমাত্র একজন বিধায়ককে নির্বাচিত করার ভোট নয়। এটা এক জন অনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলা সন্ত্রাস ও লুণ্ঠিত হওয়া গণতন্ত্র থেকে বাংলাকে বাঁচানোর নির্বাচন।

প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকেও বিধানসভা ভোটে এন্টালি কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল গেরুয়া শিবির। তিনি সেখানে জিততে পারেননি। ওদিকে মমতাও পরাজিত হয়েছিলেন নন্দীগ্রামে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ভবানপীপুরে দুই পরাজিত প্রার্থীর লড়াই। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে হাইকোর্টে একের পর এক মামলা করেছেন এই আইনজীবী। দিলীপ ঘোষ এদিন বলেন, সরকারে এয়াসার পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল সারা বাংলায় সন্ত্রাস করেছেন। আর অত্যাচারিতদের বিচার পাইয়ে দিতে লড়াই করেছেন প্রিয়াঙ্কা।
মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া প্রিয়াঙ্কাও এদিন বলেন, এটা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির লড়াই নয়। একটা রাজনীতির সঙ্গে আরএকটা রাজনীতির লড়াই।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, নন্দীগ্রামে তো ভোটের দু’মাস আগে গিয়ে মমতা বলেছিলেন তিনি প্রার্থী হবেন। সবাই হইহই করেছিল। তারপর ভোটের ফলে দেখা গেছে কী হয়েছে!

যদিও বিজেপির এসব হিসেব, অঙ্ককে আমলই দিতে চাইছে না তৃণমূল। শাসকদলের নেতাদের কথায়, বিজেপি-ও জানে ভবানীপুরে ওদের জামানত থাকবে না। এখন হাওয়া গরম করতে এসব বলছে।

বলা ভাল, এই ত্রিমুখী লড়াইয়ে মুখোমুখি তিন আইনজীবী যেন আইনের সাধক। আর তিন আইনজীবীর মধ্যে কে ‘বিচারক’ জনগণের মন জয় করেন এখন সেটাই দেখার। উত্তর মিলবে ৩ অক্টোবর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here