দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শেষ বার তাঁদের দেখা হয়েছিল ভার্চুয়ালি। ২০২০ সালে জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষা বাতিল নিয়ে আলোচনা বসেছিলেন তাঁরা। আজ বিকেল সাড়ে চারটেয়  চা- চর্চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সোনিয়া গান্ধি । দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাহিনীকে  উৎখাত করতে আজকের চা চর্চার দিকে আজ তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ।

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করবেন। পাশাপাশি সেই প্রেক্ষাপটে রাহুলের সক্রিয়তাও রাজনৈতিক মহলে কৌতূহলের বিশেষ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত,সংসদ অধিবেশন শুরুর পর থেকেই সক্রিয় তৃণমূল কংগ্রেস। বিশেষ করে পেগাসাস ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে দেশজুড়ে বহু মানুষের ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টিকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসী আক্রমণে নেমেছে তারা। প্রধান বিরোধী দল হয়েও কংগ্রেস ছিল খানিকটা পিছনের সারিতে।

দেখা যাচ্ছে হঠাৎই বিরোধী ঐক্যের ঝান্ডা হাতে নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের চোখ এড়ায়নি এই আকস্মিক সক্রিয়তা।

গতমঙ্গলবার লোকসভার বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে বৈঠক করেন রাহুল। চোখে পড়ার মতো বিষয় হল, সেই বৈঠকে দেশের একাধিক ছোট-বড় বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও তৃণমূলের কেউ ছিল না।

ডিএমকে, এনসিপি, শিবসেনা, সিপিএম, আরএসপি থাকলেও তৃণমূল অনুপস্থিত ছিল। আজ বুধবার তিনি লোকসভা ও রাজ্যসভা, দুই সদনের বিজেপি বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে বৈঠক করবেন। তার আগে সব দলকেই বলেছেন, পেগাসাস নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব জমা করতে। তাতে দাবি করা হচ্ছে, ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে আলোচনা করতে হবে এবং তা হতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে।

জানা গেছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে রাহুল গান্ধী সব দলকে অনুরোধ করেছেন, পেগাসাস তথা আড়িপাতার বিষয়টি নিয়ে সমস্ত বিরোধী দল যেন লোকসভা ও রাজ্যসভায় সরব হন।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, রাহুল গান্ধী এর আগে বলেছেন, কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে কোনও দলের কেবল ব্যক্তিগত বিরোধিতা যথেষ্ট নয়। বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রকাশ দরকার একই সঙ্গে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূল যে খানিক অতি সক্রিয় সেদিকেই রাহুল ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন। সেই বিষয়টি বোঝাতেই তিনি হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

আজ ফের রাজ্যসভা ও লোকসভার বিরোধী দলনেতাদের নিয়ে বৈঠকে ডেকেছেন রাহুল। মনে করা হচ্ছে, সেখানেও তিনি একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। মোটমাট বিরোধী ঐক্য আরও জোরদার করতে চাইছেন তিনি।

উল্লেখ্য,এই দিনটার ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি হয়েছিল ২ মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় সূচিত হবার পরেই। বহু বিরোধী নেতাই তাকে শুভেচ্ছা জানান। ২০০-র বেশি আসনে জিতে খুব অল্প সময়ে দেশে বিজেপির পাল্টা হাওয়া তৈরি করার ক্ষেত্রে আইকন হয়ে ওঠেন মমতা। করোনার প্রকোপ কমলে মমতা বিরোধী নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন, শুভেচ্ছা বিনিময় হবে একরকম প্রত্যাশিতই ছিল।

তাছাড়া সোনিয়ার সঙ্গে মমতার পুরনো সম্পর্ক। তিনি নিজেই স্বীকার করেন, তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি অনেকটা রাজীব গান্ধীর হাত ধরেই। কিন্তু রাজ্যে কংগ্রেস বনাম তৃণমূলের তিক্ত সম্পর্ক কোথাও একটা দূরত্ব রচনা করে রেখেছিল। এবার মূলত সোনিয়ার উদ্যোগেই পাল্টা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। পেগাসাস ইস্যুকে সামনে রেখে আরও কাছাকাছি আসে দুই দল।

মমতা শিবির মনে করছে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে এই মুহূর্তে সার্বিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মঙ্গলবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন তিন হেভিওয়েট কংগ্রেস নেতা, কমল নাথ, আনন্দ শর্মা এবং অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি । জোটের কথা প্রকাশ্যে না বললেও কমলনাথ বলেছিলেন, “মমতা মে ক্ষমতা হ্যাঁ।” অর্থাৎ  মাঠে যে তাঁকে বড় জায়গা দেওয়া হবে, সেটা একরকম বুঝিয়ে দিয়েছেন কমল নাথ।

আজ সোনিয়া মমতার বৈঠকে যে বিরোধী শক্তির উত্থান নিয়ে কথা হবে সে বিষয় টি সকলের কাছেই জলের মত পরিষ্কার৷

প্রসঙ্গত আজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গেও দেখা হবে মমতার। বিজেপির রথ দিল্লিতে থামিয়েছেন কেজরিওয়াল। তাই মুখোমুখি মমতা কেজরিওয়ালও এই মুহূর্তে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

ইতিমধ্যেই দেশের নানা প্রান্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে যখন চর্চা শুরু হয়েছে, তাঁকে বিরোধী দলের মুখ বলে মনে করা হচ্ছে, তখন অন্যদিকে, রাহুলের অতিসক্রিয়তা কি কোনও প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত, সেই বিষয়টিও ফেলে দিচ্ছেন না অনেকেই।এখন দেখার বিষয় হল,রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে বিরোধিতার স্বর আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হয় কিনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here