দেশের সময়ওয়েবডেস্ক:‌ ভারতে দ্রুত হারে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪,৪২১ হয়ে গেছে। মৃত অন্তত ১১৪ জন। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ৪ দিন অন্তর দ্বিগুণ হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার যদি এই গতিতে বাড়তে থাকে তবে এক সপ্তাহ পর আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছোঁবে। যদি তাই হয় তবে যথেষ্ট উদ্বেগের মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশজুড়ে লকডাউন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে মনে করা হচ্ছে, আগামী ৮ দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজার ছোঁবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২০ মার্চ আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছিল পাঁচদিন অন্তর। কিন্তু ২০ থেকে ২৩ মার্চ গতি বাড়িয়ে সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয় তিনদিনের মাথায়।

তবে ২৩ থেকে ২৯ মার্চের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার একটু শ্লথ হয়েছিল। সেইসময় ছয়দিন অন্তর সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়েছিল। যা আশার আলো দেখাচ্ছিল চিকিৎসকদের। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আবার গতি বাড়িয়ে ২৯ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা চারদিন অন্তর দ্বিগুণ হয়েছে। এটাই উদ্বেগজনক মনে করছেন চিকিৎসকরা।

তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, তবলিঘি জামাতের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের যোগ না থাকলে দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধির হার গত এক সপ্তাহে অনেকটাই কম হত। সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আধিকারিকরা সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন, নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা দেখে জানা গিয়েছে, দেশে মোট করোনা আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশ তবলিঘি জামাতের সঙ্গে যুক্ত। মন্ত্রক ইঙ্গিত দিয়েছে, স্থানীয় গোষ্ঠী সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে দেশের বেশ কিছু জায়গায়।

সুতরাং আক্রান্তের সংখ্যা এই হারে বৃদ্ধি পেলে ধরেই নিতে হবে যে ভারতে কিছু জায়গায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে।

বাংলায় এখনও পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯১ জন। মঙ্গলবার সকাল ৯ টার বুলেটিনে এ কথা জানাল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওই বুলেটিনে বলা হয়েছে, এই ৯১ জনের মধ্যে ১৩ জনকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। মারা গিয়েছেন তিন জন। অর্থাৎ তাদের হিসাব মতো বাংলায় এখনও ৭৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অ্যাকটিভ রয়েছে।

গত রবিবার রাত ৯ টায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে বুলেটিন প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছিল বাংলায়ও তখনও পর্যন্ত করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ জন। তার পর সোমবার সকাল ও সন্ধ্যার বুলেটিনে সেই পরিসংখ্যানে বদল হয়নি। ৩৬ ঘন্টা পর স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানাল, পশ্চিমবঙ্গে আরও ১১ জনের দেহে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।

সোমবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৬১ জনের শরীরে সংক্রমণ অ্যাকটিভ রয়েছে। সোমবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি তা জানিয়েছিলেন। তা ছাড়া বাংলায় সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি নিয়েও সোমবার দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাখ্যা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, বাংলায় জনঘনত্ব অনেক বেশি। সেই অনুপাতে রাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিন্তু এখনও তেমন ছড়ায়নি। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন, ৬১ জনের মধ্যে এখনও

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অ্যাকটিভ রয়েছে তার মধ্যে ৫৫ জন ৭টি পরিবারের। যেমন কালিম্পংয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যে মহিলার মৃত্যু হয়েছে, তাঁর থেকে তাঁর পরিবারের ১১ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এ কথার অর্থ পরিষ্কার। অর্থাৎ সামাজিক ভাবে রাজ্যে সংক্রমণ এখনও ছড়ায়নি। তা ছড়িয়ে ক্লোজড গ্রুপের মধ্যে তথা একই পরিবারের মধ্যে।

এখন প্রশ্ন হল, কেন্দ্রের পরিসংখ্যানের সঙ্গে রাজ্যের পরিসংখ্যানের দৃশ্যত ফারাক কেন হচ্ছে। সর্বভারতীয় বিজেপি এবং রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব দলীয় তরফে অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে টুইটারে ধারাবাহিক কিছু পোস্টও করেছিলেন সর্বভারতীয় বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য।

সে ব্যাপারে আবার পাল্টা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকেই তিনি বলেছিলেন, আইটি সেল ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে। তিনি এও বলেন, “আমরা তো কেন্দ্রের তথ্য নিয়ে চ্যালেঞ্জ করিনি। আমরা যদি ওদের তথ্য বদলে দিই! এটা চ্যালেঞ্জের সময় নয়।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here