দেশের সময়: লকডাউনে বাড়িতে আটকে পড়েছে ছোটরা। যেতে পারছে না স্কুলে, খেলার মাঠে। কীভাবে দিন কাটছে তাদের? করোনা নিয়েই বা তারা কী ভাবছে? বাড়ির বাচ্চাদের কাছেই জানতে চেয়েছিলেন দেশের সময় এর সাংবাদিকেরা। কী জানাল ২ থেকে ১৩ বছরের ছেলেমেয়েরা?
সৃজাত । বয়স ২ বছর ৭ মাস। বাড়ি বনগাঁর জয়ন্তীপুর। রোজ বাবার রয়্যাল এনফিল্ড মোটরবাইকে চেপে রাস্তায় ঘুরে আসা ছিল তার দৈনন্দিনের রুটিন। লকডাউনের পর থেকে তা বন্ধ। এখন প্রতিদিন সকালে বাইকে স্টার্ট দেন বাবা। তার ওপর বসে দুধ খায় সৃজাত। মা ওকে বুঝিয়েছেন, রাস্তায় করোনা নামে একটা দৈত্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখলেই ধরবে।


লকডাউন শুরু হতেই তিন বছরের ইয়াসমীন মন্ডল, সে প্লে–স্কুলে যাবে। মা পারভীন রোজ ওর খেলনাগুলো সাজিয়ে দেন বাড়িতেই। তাই নিয়ে ভুলে থাকে মেয়ে। হাত না ধুলে, রাস্তায় বেরোলেই ধরবে করোনা দৈত্য। এটা ইয়াসমীনের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন মা। এখন দাদু–ঠাকুমাকে দেখলেই ও বলে, ‘হাত ধোও, না হলে করোনা ধরবে।’

হাবড়ার ৫ বছরের সুজাতা বিশ্বাসকে প্রতি শনিবার পার্কে টয় ট্রেন চড়তেই হবে। তার পরে খেতে হবে দুধ ও তরমুজের সরবত। এখন সব বন্ধ। ওর মা শ্রাবন্তী দেবী বলেন, ‘পুতুলের পিঠে চেপেই ও টয় ট্রেন চড়ার সাধ মেটায়। নানা রকম খাবার দিয়ে ওকে ভুলিয়ে রাখি।’ সানা সেনমল্লিক এমাসেই সাতে পড়বে।

করোনাকে ওর ভাল লাগে। কারণ মা–বাবা বাড়িতেই থাকেন। মা অন্বেষা বলেন, ‘যাতে আইসক্রিম খেতে না চায়, তাই ওকে বুঝিয়েছিলাম যে, কারও কাশি হলেই সে মারা যাবে। এখন বাড়িতে কেউ কাশলে বা জোরে হাই তুললে ও চুপি চুপি এসে জানতে চায়, এবার কি ও মারা যাবে?’ টিভিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের দেখে সানা বলেছিল, ‘ওদের কি আমাদের বাড়িতে থাকতে দিতে পারি না?’ মেয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মা। ঠাকুর নগরের ৫ বছরের মেয়ে রিধীমা বলে কোরোনো।

বাবা–মা আর দাদু–ঠাকুমাকে সব সময় বলে হাত ধুতে আর মাস্ক পরতে। এমনকী, নিজের প্রিয় পুতুলের মুখেও পরিয়ে দিয়েছে একটা ঢাকনা।বাবা আশিষ বিশ্বাসের কথায় রিধীমা ঘরে থাকলেও টিভিতে ফুটবল আর কার্টুন দেখে সময় কাটায় ,এখন টিভিতে করোনা সতর্কতার প্রচার দেখে সবাইকে মাস্ক পরিয়ে দিতে ব্যাস্ত। ৭ বছরের সায়ন্ত ও থাকে বারাসতে। ওর খুব দুঃখ যে, স্কুল এতদিন বন্ধ!

স্কুলে যেতে কেন ভাল লাগে? সায়ন্তর চটজলদি উত্তর, ‘ছেলেমেয়েরা দুষ্টুমি করে। তাতে রেগে যান মিস–রা। এটা দারুণ মজার।’ কৃষ্ণনগরের সুতপা সিংহ বয়স ১৩। লকডাউনে ওর প্রিয় বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টি হচ্ছে না বলে খুব মনমরা। কেন এই রোগের কোনও ওষুধ নেই? কবে আবার স্কুলে যাব? প্রশ্ন করে করে ও অস্থির করে তুলছে বাবা–মাকে।

১০ বছরের আর্য চক্রবর্তী চিঠিতে লিখেছে, ‘এই ভাইরাস জীবনকে কঠিন করে তুলেছে। তবে অস্থির হলে চলবে না। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দারুণ সময় কাটানোর সুযোগ এসেছে। অনেক বিজ্ঞানী করোনা সারানোর চেষ্টা করছেন। জানি ওঁরা পারবেন। আমি হতাশ হচ্ছি না, তোমরাও হয়ো না।’ রানাঘাটের ৮ বছরের সবুজ মিত্র আবার আইপিএল দেখতে না পেয়ে মনমরা।

চাকদহের ৫ বছরের পৌলমী মজুমদার জমানো পয়সার ভাঁড়টা ভেঙেছে। দেবে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। দমদমের১৩ বছরের স্নিগ্ধা রায় ১০ বছরের ভাই পরমকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের কাজে সাহায্য করছে মা সায়নী রায়কে। এখন ওরা বুঝতে পারছে, কাজের মাসি আর কাকুরা সংসারে কতটা সাহায্য করেন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here