দেশের সময় , বারাসত উত্তর২৪পরগনা: আধুনিক যুগেও চলছে সনাতনী পদ্ধতিতে চিকিৎসা! বারাসত হ্যালাবটতলার কাছে নোয়াপাড়ার একটি ডেন্টাল কেয়ারে এক চিকিৎসক নিয়মিতভাবে দাঁত তোলা, ফিলিং, স্কেলিং, রেপ্লিকা তৈরিসহ সব ধরনের দাঁতের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। নষ্ট হওয়া পুরোনো দাঁত তোলা কিংবা নতুন দাঁত লাগানোর খরচ নাম মাত্র টাকায় করে দেওয়ার কথা বলে কাজ শেষে ভুতুড়ে বিল করে রোগীর হাতে তুলেদেন যার অংক সংখ্যা দেখে মাথা ঘুরে পড়ে যান এখানে চিকিৎসার জন্য আসা রোগী সহ পরিবারের সদস্যরাও ।

হ্যাঁ,অভিনব প্রতারণা, শুক্রবার ০৮,০১,২০২১ দুপুরে বারাসতের হ্যালাবটতলার কাছে নোয়াপাড়ার একটি ডেন্টাল কেয়ারে স্থানীয় নবপল্লীর বাসিন্দা গোবিন্দ চন্দ্র রায় (৬৫) দাঁতের সমস্যা নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাঃ মহেন্দ্র কংস বনিক(Dr,M.K.Banik) গোবিন্দ বাবুর দাঁতের চিকিৎসা শুরু করেন,চিকিৎসক মহেন্দ্র কংস বনিক এর কথায় গোবিন্দ বাবুর ১৬৫ সুগার ছিল , পেশারও বেশ হাই তবু নিজের কাজের প্রতি ভরসা রেখে ৫টি রুট চ্যানেল এবং ৭টি ক্যাপ বসিয়েছি, যার খরচ বাবদ মোট ৯৮.৫oo টাকা দাবি করেছি৷মাত্র তিন ঘন্টায় চিকিৎসা পরিষেবা সম্পূর্ণ হয় এবং রোগী সুস্থ্ ছিলেন।

ডাক্তারবাবুর ধার্য্য করা বিল যখন গোবিন্দ বাবুর হাতে পৌছায় ,ঠিক তখনই গোবিন্দ বাবুর মাথা ঘুরতে থাকে বিলের উপরে লেখা ৯৮,৫০০ টাকার অংক সংখ্যাটা দেখে! গোবিন্দ বাবু বলেন পনেরো হাজার টাকা বিল হবে বলে জানিয়েছিলেন ডাক্তার বাবু,তাও দিতে হবে মাসিক কিস্তিতে সেই মতো রাজি হয়েই চিকিৎসা করিয়েছি এখানে, এখন অতিরিক্ত টাকা চাইছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন টাকা না দিলে বিপদে ফেলবেন৷ এই মত অবস্থায় বারাসত থানায় গিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি এবং লিখিত অভিযোগ করার পর পুলিশ এর এক অফিসার নির্ভয় দিয়েছেন এবং বিষয়টির তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন৷ দাঁতের যন্ত্রণার থেকেও আতঙ্ক এখন দাঁতের ডাক্তার কে নিয়ে ,শীতে এত হাত পা’কাঁপেনি কিন্তু ডাক্তারের ভুয়ো বিলে আমার সারা শরীর কাঁপছে৷

ডাক্তার বাবু জানান, আমি গর্ভবতী নারী এবং রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে কাজ করি না। তাই কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাও হয় না।’ এখানে আসা দরিদ্র-অসহায় লোকেরা স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য আমার শরণাপন্ন হন।

এ ধরনের চিকিৎসা রোগীর জন্য তো ঝুঁকিপূর্ণ? প্রশ্নের কোন উত্তর মেলেনি! স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায় এখানে এসব জালিয়াতি দেখার কেউ নেই।

এখানে এই চিকিৎসক দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোগীদের দাঁতের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।

শেষ রক্ষা হল না এবার, গোবিন্দ বাবু পুলিশের কাছে এই দাঁতের ডাক্তারের অভিনব প্রতারণার কথা লিখিত ভাবে জানালেন৷

ভুক্তভোগী রোগীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার (০৮,o১,২০২১) রাতে বারাসত থানার পুলিশ কি পদক্ষেপ নেয়সেটাই দেখার ৷

উল্লেখ্য,অ্যালোপ্যাথির নানান শাখা, শল্য চিকিৎসা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু ভুয়ো চিকিৎসক ইতিমধ্যে ধরা পড়েছেন। এমন কি বিভিন্ন সমযয়ে ভুয়ো দাঁতের ডাক্তারেরও হদিসও পেয়েছে সিআইডি। ভুয়ো দন্ত চিকিৎসকদের সংগঠিত চক্রের সঙ্গে নথিভুক্ত কিছু দাঁতের ডাক্তারের যোগসাজশ আছে বলেও তদন্তে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রাজ্য ডেন্টাল কাউন্সিলের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা দেড়শোর বেশি ভুয়ো দন্ত চিকিৎসকের সন্ধান মিলেছে। তবে দাঁতের জাল ডাক্তারের সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি বলে খবর। বারাসত থেকে ( ২০১৭ জুলাই মাসে), ইতিমধ্যে দুই ভুয়ো দন্ত চিকিৎসককে গ্রেফতার ও করা হয। তারপর তাঁদের জেরা করে বাকিদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে সিআইডি।

গোয়েন্দারা সূত্রের খবর, দাঁতের ভুয়ো চিকিৎসকদের বেশির ভাগই নামের পাশে ‘ডেন্টাল সার্জেন’ অথবা ‘বিডিএএস’ (ব্যাচেলর ডেন্টাল অল্টারনেটিভ সার্ভিস) তকমার উল্লেখ করেন। বাস্তবে ওই ডিগ্রির কোনও অস্তিত্ব নেই বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এ রাজ্যে মূলত ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) এবং মাস্টার অব ডেন্টাল সার্জারি (এমডিএস)-র ডিগ্রিধারীরা দাঁতের চিকিৎসা করেন।

এর বাইরে ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার অনুমোদিত বেশ কয়েকটি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীদের চিকিৎসার অধিকার রয়েছে। রাজ্য ডেন্টাল কাউন্সিলের কাছ থেকে গোয়েন্দারা জেনেছেন, এ রাজ্যে ২০১৭ সালে ৫৫২০ জন নথিভুক্ত দন্ত চিকিৎসক রয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, নথিভুক্ত দন্ত চিকিৎসক ছাড়া যাঁরা দাঁতের চিকিৎসা করছেন, তাঁদের সকলেই ভুয়ো। রাজ্য ডেন্টাল কাউন্সিলের সদস্যের কথায়, ‘‘আমরা ভুয়ো চিকিৎসকদের তালিকা সিআইডি-কে দিয়েছি। তাঁদের ধরতে গোয়েন্দাদের সাহায্যও করছি।’’

উল্লেখ্য,গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত (২২ জুন ২o১৭), রাজ্য ডেন্টাল কাউন্সিল বারাসত থানায় উত্তর ২৪ পরগনার তিন ভুয়ো দন্ত চিকিৎসক এবং দু’টি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। তদন্তে নেমে বারাসত থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তারা জানায়, ওই চক্রের পিছনে এক শ্রেণির নথিভুক্ত দন্ত চিকিৎসক রয়েছেন। তাঁরা নিজেদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ভুয়ো ডাক্তারদের ভাড়া দিয়ে চেম্বার চালাতে সাহায্য করছেন। সাইনবোর্ডে ওই নম্বর লিখে ভুয়ো দাঁতের চিকিৎসকেরা বিভিন্ন এলাকায় চেম্বার খুলে বসেছেন। রাজ্যের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে দন্তরোগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁরা মোটা টাকা ভিজিটও নিচ্ছেন। ২০১৭সালে মে মাসে ভুয়ো চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সিআইডি।  ধরা পড়েন সাত জন। সেই দলে সরকারি চিকিৎসকও ছিলেন। সেই সূত্রেই তদন্তকারীরা জানতে পারেন, রাজ্যে পাঁচশোর বেশি ভুয়ো দন্ত চিকিৎসক লোক ঠকিয়ে চলেছেন এই ভাবে।

বারা সতের গোবিন্দ চন্দ্র রায়ের লিখিত অভিযোগ জানান দিচ্ছে ভুয়ো চক্র এখনও সক্রিয়৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here