দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘টাফ ফাইট’ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । বিজিপি -কে এনে দিয়েছেন জয়ও। এবার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার জন্য তাঁকেই বেছে নিল গেরুয়া শিবির। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হচ্ছেন শুভেন্দুই, ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ।

সোমবার রাজ্য বিজিপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় সহ দলীয় বিধায়কদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, কে দলনেতা হবে তা নিয়ে বৈঠক করেছিল দল। সকলেই শুভেন্দু অধিকারীর নাম নিয়েছেন। এরপরেই তাঁর হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিরোধী দলনেতা হিসেবে মুকুল রায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে পারে গেরুয়া শিবির, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল এমনটাই। কিন্তু একুশের ফল ঘোষণার পর মুকুল রায়ের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা বেড়েছে। বিধায়ক হিসেবে শপথগ্রহণের পর তৃণমূলের সুব্রত বক্সির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ঘিরে মুকুলের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। যদিও শনিবার টুইটারে মুকুল রায় লিখেছিলেন, ‘ বিজিপি-র সৈনিক হিসেবেই এই রাজ্যে গণতন্ত্রকে পুনর্বহাল করার লড়াই জারি রাখব আমি। সকলের কাছে অনুরোধ, তাঁরা সব সাজানো গল্প ও দল্পনা যেন দূরে সরিয়ে রাখেন। আমি আমার রাজনৈতিক পথে সংকল্পবদ্ধ।’ এরপর মুকুল রায়ের সঙ্গে বৈঠকও করেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈঠকের পর শুভেন্দু অধিকারীকে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, নন্দীগ্রাম বিজিপি -র কাছে ছিল ‘প্রেস্টিজ ফাইট’। দাদা বনাম দিদির লড়াইয়ের দিকে নজর ছিল গোটা দেশের। একুশের নির্বাচনে রাজ্যে যখন গেরুয়া শিবিরের ভরাডুবি হয়েছিল, তখন নন্দীগ্রামে জয়ী হয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এই জয়ে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা হয়েছিল বিজিপি-র, মত অভিজ্ঞ মহলের। আর এই জয়ের ‘উপহার’ হিসেবেই শুভেন্দু অধিকারীকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, মনে করছে রাজ্য রাজনৈতিক মহল। প্রসঙ্গত, গতকালই রাজ্য বিজিপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়েছিলেন, ‘দলীয় বিধায়কদের সম্মতি মেনেই দলনেতা নির্বাচিত করা হবে।’ সেই মোতাবেক সোমবারই দলনেতার নাম ঘোষণা করল বিজিপি নেতৃত্ব।

বিজেপি পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরে শুভেন্দু অধিকারী জানালেন, রাজ্য সরকারের গঠনমূলক পদক্ষেপগুলির ক্ষেত্রে সহযোগিতার নীতি নিয়েই চলবেন তিনি। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘যখন ২৯ জন বিরোধী বিধায়ক ছিলেন, তখন আমি বিধানসভার সদস্য ছিলাম। ২৩৫- এর দম্ভ আমি দেখেছি। সেই পরিস্থিতি এখন নেই। আমার অঙ্গীকার হল, হিংসা মুক্ত বাংলা। শান্তির বাংলা। যে কোনও গঠনমূলক কাজে সরকারের সহযোগিতা করব।’’

তবে রাজ্য বিধানসভায় নয়া বিরোধী দলনেতা রাজ্য জুড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপস্থিতিতে পরিষদীয় নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘‘ প্রথা মাফিক এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাকে মালা পরানো হয়েছে, পরেছি। কিন্তু আমাদের মন ভাল নেই। কারণ পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই। এখানে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে। শুধু মাত্র অন্য দলকে ভোট দেওয়ার জন্য লক্ষাধিক মানুষকে বাইরে থাকতে হচ্ছে। তাই আজ উল্লাস করার সময় নয়।’’

পরে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণের পাশাপাশি আমরা অত্যাচারের প্রতিবাদেও সরব হব।’’ ঐকমত্যের ভিত্তিতেই তিনি বিজেপি পরিষদীয় দল পরিচালনা করবেন জানিয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়কের ঘোষণা, ‘‘দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করব। কোনও সিদ্ধান্ত শুভেন্দু একা নেবে না, সকলকে নিয়ে চলবে।’’
নন্দীগ্রামে তাঁর কাছে পরাজিত হওয়ার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রসঙ্গে খোঁচা দেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এই প্রথম কোনও ব্যক্তি বিধানসভা নির্বাচনে হারার পরেও মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here