দেশেরসময় ওয়েব ডেস্কঃ দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ শুরু হতেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলল উত্তরবঙ্গের তিন আসন থেকেই। কোথাও বাঁশ, লাঠি দিয়ে নির্বিচারে মেরে মাথা ফাটানো হলো সাংবাদিকের, কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে শুরু হলো বিক্ষোভ।

দার্জিলিঙের চোপড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ বাসিন্দাদের

গোয়ালপোখরের কাটা ফুলবাড়িতে আক্রান্ত হলেন একটি সংবাদমাধ্যমের দুই প্রতিনিধি। ভোট দানে বাধা দেওয়ার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হন তাঁরা। অভিযোগ, বাঁশ, লাঠি দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া দু’জনের। চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাঁদের পরিচয়পত্রও। দু’জনের অবস্থাই গুরুতর।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে সকাল থেকেই উত্তপ্ত আব্দুলঘাটার ১৮৫ নম্বর বুথ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই বুথে আধা সেনা থাকলেও কোনও ভোটকর্মী নেই। প্রতিবাদে বুথে তালা লাগিয়ে দেন তাঁরা।

সকাল সকাল ভোট দিতে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে হলো রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সিকে। ইভিএম বিভ্রাটের কারণে ভোট দিতে ১০ মিনিট দেরি হয় তাঁর। দীপা বলেছেন, “কোনও কারণে কানেকশনের সমস্যা হচ্ছিল। তাই সামান্য দেরি হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই মেশিন ঠিক করে ফের ভোটদান শুরু হয়।”

ইসলামপুরে ১৩৫ নম্বর বুথে ভিভিপ্যাট বিকল হয়ে পড়ায় তৃণমূলপ্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে বেশ কিছুক্ষণ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ইভিএম খারাপের অভিযোগ মেলে শিলিগুড়ির বুথেও।

লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে আজ, বৃহস্পতিবার ভোট চলছে ১১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরির মোট ৯৫টি আসনে। একই সঙ্গে বিধানসভা ভোট হবে ওড়িশার ৩৫টি এবং তামিলনাড়ুর ১৮টি আসনে। পশ্চিমবঙ্গে আজ ভোট জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং রায়গঞ্জ— উত্তরবঙ্গের এই তিন আসনে।

দ্বিতীয় দফার ভোটে আজ মূল আকর্ষণ দার্জিলিংকে ঘিরে। পাহাড়ের তিনটি ও সমতলের চারটি বিধানসভা নিয়ে এই কেন্দ্র। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর অন্যতম সাফল্য পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনা। পর্যটনে এসেছে নতুন মাত্রা। তাই, এই কেন্দ্র এবার শাসকদলের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে পাহাড়েরই ভূমিপুত্র অমর সিং রাইকে। পাহাড়ে অশান্তি পাকানোয় মূল অভিযুক্ত বিমল গুরুং এবার পাহাড়ে থাকছেন না। দেড় বছর ধরে তিনি পলাতক। সোমবারও তাঁর আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়েছে। পাঁচ বছর আগে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি–‌র সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া।

তাঁকে এবার পাহাড় থেকে প্রার্থী না করে বর্ধমান–‌দুর্গাপুর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁর বদলে বিজেপি–‌র প্রার্থী দিল্লিনিবাসী রাজু বিস্ত। গুরুংবাহিনী ও জিএনএলএফ তাঁর পাশে দাঁড়ালেও প্রচারে একেবারেই সাড়া ফেলতে পারেননি। মোর্চার মূলস্রোত এখন বিনয় তামাং–‌অনীত থাপাদের সঙ্গে।

সেই মোর্চার বিধায়ক অমর সিং রাইকে প্রার্থী করে বড় চমক দিয়েছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পাঁচটি জনসভা করেছেন এই কেন্দ্রের জন্য। সবমিলিয়ে অন্য এক মাত্রা পেয়েছে দার্জিলিঙের নির্বাচন।

আজ, বৃহস্পতিবার লোকসভা ভোটের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ ৷ গোটা দেশের একাধিক রাজ্যের মতো বাংলাতেও ভোট আজ। আজ উত্তরবঙ্গের তিনটি আসন– দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও রায়গঞ্জে ভোট পর্ব চলবে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

প্রথম দফার নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে গড়ে মোট ৮৩ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এমনিতেই, প্রতি বারই বাংলায় ভোটের হার বেশি থাকে। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি মানুষ ভোট দেন এ রাজ্যে। প্রথম দফার নির্বাচনেও তার অন্যথা হয়নি।

এই লোকসভা নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে কমিশন অতিরিক্ত কড়া কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ভোট ঘোষণার দিন থেকেই বিশেষ বিশেষ রাজ্যের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল কমিশন। নাম না করেও সেই রাজ্যগুলির মধ্যে ইঙ্গিত ছিল বাংলার দিকে। আক ভোট শুরু হতেই দেখা গেল, বাংলা রয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তার দাবিদার রাজ্যগুলির মধ্যে।

প্রথম দফার ভোটে যেমন কোচবিহারে নিজে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। আজও তাঁর রায়গঞ্জে থাকার কথা। আবার দ্বিতীয় দফার আগে স্পেশ্যাল অবজার্ভার নিয়োগ করেছে কমিশন।

প্রথম দফার নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত গন্ডগোলের খবর এসেছিল নানা জায়গা থেকে। অভিযোগ উঠেছিল সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষীদের দিকে। বশ কিছু বিথে নির্বাচনের দাবি জানায় বিজেপি। মুকুল রায়রা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মুখ্য আধিকারিকের ঘরের মেঝেতে ধর্নায় বসে পড়েন। এ নিয়ে বহু তোলপাড় হয়ে যায় রাজ্য-রাজনীতিতে।

দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে কমিশন আরও ৩৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী আনিয়েছে, যাতে নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক না থাকে। তারই মধ্যে অশান্তির আঁচ পাচ্ছেন সাধারন ভোটাররা৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here