মঙ্গল শোভাযাত্রায় পা মিলিয়ে ১৪২৬-কে স্বাগত জানাল এপার বাংলা ওপার বাংলা

0
1293

আজ পয়লা বৈশাখ৷ বাংলা নববর্ষ, ১৪২৬৷

দেবন্বীতা চক্রবর্তী,দেশের সময়: নতুন আশার আলো নিয়ে ফুটে উঠেছে নতুন বাংলা বছরের প্রথম সূর্যরশ্মি। এপার বাংলা ওপার বাংলার তরফে হাজার হাজার মানুষ স্বাগত জানালেন, বাংলা নববর্ষ, ১৪২৬-কে।
উৎসবমুখর পরিবেশে এপার বাংলা ও পার বাংলায় পালিত হচ্ছে নববর্ষ উৎসব। কলকাতা এবং ঢাকায় বের হয়েছে বর্ণিল শোভাযাত্রা। অনেকেই পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন। তাদের পোশাক ও সাজে বৈশাখের রং লেগেছে।

দেশের সময়ের চিত্রসাংবাদিকদের ক্যামেরায় নববর্ষের নানা চিত্র ফুটে উঠেছে।
এই প্রথম নয়, এই নিয়ে তৃতীয় বার মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্রের তরুণ-তরুণীরাবাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজন করেছেন মঙ্গল শোভাযাত্রার। উদ্যোক্তাদের কথায় মধ্যরাত থেকে আল্পনা দেওয়া শুরু হয়েছিল। তার পরে সকাল আটটায় দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে শুরু হয় এই শোভাযাত্রা যায় যাদবপুর পর্যন্ত।

পৃথা জানিয়েছেন, তাঁরা প্রথম শুরু করলেও, এখন সারা রাজ্য জুড়েই বিভিন্ন এলাকায় এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে।
শোভাযাত্রার রয়েছে নানা রকমের মুখোশ, ঘোড়া, প্যাঁচা, বাঘ পুতুল। থাকবে বাঙালি নাচ, গান, নাটক, বাঁশি, আবৃত্তি, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র। রয়েছেন চিত্রশিল্পী , নানা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষকেরা এবং আরও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। পায়ে পায়ে উৎসবে-উদযাপনে তাঁরা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেন অসাম্প্রদায়িক বাংলার সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে।

এই সম্প্রীতির বার্তা ছড়ানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এই শোভাযাত্রাকে নিছক বর্ষবরণের উদযাপন বলে মানতে রাজি নন তাঁরা। জানাচ্ছেন, বাংলাদেশেই প্রতি বছর এই মঙ্গল শোভাযাত্রা হয় পয়লা বৈশাখে। সেই যাত্রার অনুপ্রেরণাতেই কলকাতাতেও এমনটা আয়োজন করার কথা ভেবেছেন তাঁরা। তাঁদের মনে হয়েছে, যে স্বৈরাচার ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে ওপার বাংলা শোভাযাত্রায় নেমেছে, সে পরিস্থিতির শিকার এপার বাংলাও। তাই আদি সংস্কৃতির হাত ধরে, ঐতিহ্যকে হাতিয়ার করে, বিভাজন ঘোচানোর চেষ্টায় নিযুক্ত হয়েছেন তাঁরা।

প্রায় তিন দশক আগে বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে এক দিন শুরু হয়েছিল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৫ সালে সামরিক স্বৈরাচার চলার সময়ে ঢাকার চারুকলার কয়েক জন ছাত্র যশোরে গিয়ে গড়ে তোলেন এক নতুন শিল্প-প্রতিষ্ঠান, চারুপীঠ। রঙ, পেন্সিল আর কাদামাটি দিয়ে সেখানে শিশুরা মেতে উঠল। সে বছরই বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে শোভাযাত্রার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। যশোর শহরে এই তরুণদের আয়োজনে চৈত্রের শেষ রাতে আল্পনা আঁকা হয়। শোভাযাত্রার জন্য পরি ও পাখি তৈরি করেন চারুকলার পড়ুয়ারা। তৈরি করেন বাঘের মুখোশ।

এই দিনটিতে ছেলেরা পাঞ্জাবি আর মেয়েরা শাড়ি পরে, সানাইয়ের সুরে, ঢাকের তালে নেচে, গেয়ে, প্রদক্ষিণ করে যশোর শহর। সে দিনই জন্ম হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার। স্বৈরাচারের ভয়কে জয় করে জীবনের রূপ-রঙ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলেছিল সেখানে। তখন তার নাম ছিল বর্ষবরণ শোভাযাত্রা। পরের বছর শহরের অন্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও যোগ দেয় চারুপীঠের এই আয়োজনের সঙ্গে। গঠিত হয় বর্ষবরণ পরিষদ।


কলকাতার শোভাযাত্রা উদ্যোক্তরা জানান “আমাদের রাজ্যে তথা দেশেও ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা, ধর্মীয় মৌলবাদের উন্মত্ততায় আমরা ব্যথিত। এর বিরুদ্ধে আবহমান মঙ্গসংস্কৃতির উজ্জ্বল ঐতিহ্য নিয়ে বাংলা নববর্ষের দিনে আমরা পথে নেমেছি। বাংলার সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।”


গত দু’বছরে শোভাযাত্রার প্রস্তুতিপর্বে বাংলাদেশের শিল্পীরা অংশ নিয়েছিলেন। তবে এ বার কেউ আসেননি। তবে অন্য দু’বার যাদবপুরে হলেও, এই সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বারই প্রথম দিনহাটা, রায়গঞ্জ, বহরমপুর, বেলডাঙা, শ্রীরামপুর, সল্টলেক, নামখানা-সহ মোট এগারোটি জায়গা থেকে এই শোভাযাত্রা বার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই বিশাল শোভাযাত্রা যেন উদযাপনের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তাই দিচ্ছে।

নববর্ষ বলে এ দিন বিশেষ উৎসব পালিত হয়৷ ব্যবসায়ীরা হালখাতার মাধ্যমে নতুন বছর শুরু করেন৷ ইংরেজি নববর্ষ রাত ১২টার পর শুরু হলেও ঐতিহ্যগত ভাবে বাংলা দিন গণনা হয় সূর্যোদয় থেকে৷ নতুন জামা, গঙ্গাস্নানে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ৷

চলে খাওয়া-দাওয়া, দিনভর আড্ডা৷ পয়লা বৈশাখের আগের রাত থেকেই পুজোর ডালি নিয়ে মন্দিরে হাজির হন ভক্তরা৷ শহর ও শহরতলী এমনকি রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের৷ উত্তর ২৪ পরগণার গোবরডাঙার যমুনা নদীর তীরে এ দিন শুরু হয় শস্যমেলা, যা গোষ্ঠবিহারী মেলা নামেও পরিচিত৷

বিভিন্ন ভাবে বাঙালি নববর্ষকে বরণ করে৷ এক সময় নতুন জামা-কাপড় পরে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, বড়দের প্রণাম করার সঙ্গে মিষ্টিমুখ৷ আর, এখন নতুন জামা-কাপড় হয় বটে৷ কিন্তু বাকি রীতি প্রায় বিলুপ্তির পথে৷আধুনিক বাঙালি ডিজিটাল পদ্ধতিতেই নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে৷

পয়লা বৈশাখে কলকাতায় উল্লেখযোগ্য ভিড় হয় কালীঘাট ও দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে৷ আগের দিন রাত থেকেই মন্দিরে বহু ব্যবসায়ী ও গৃহস্থ ভিড় করতে শুরু করেন৷ চিরাচরিত রীতি মেনে লম্বা লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সকালে পুজো দিয়ে বাংলা বছরের প্রথম দিনটি শুরু করেন৷ আধুনিক বাঙালি প্রাচীন রীতি মেনেই পুজো দেন৷

প্রত্যেকের হাতে থাকে পুজোর ডালি, হালখাতা৷ কারও সঙ্গে ঝুড়িতে লক্ষ্মী-গণেশ৷ কারও হাতে শুধুই পুজোর ফুল৷ এ দিন মায়ের পায়ে ছোঁয়ানো সিঁদুরে স্বস্তিকা চিহ্ণ ও চন্দনের ফোঁটা এবং সিদ্ধিদাতা গণেশায় নমঃ লেখা হালখাতায় ব্যবসায়ী নতুন বছরের হিসাব শুরু করেন৷ অনেক ব্যবসায়ী আবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেও হালখাতা শুরু করেন৷

নববর্ষে হালখাতার পাশাপাশি নতুন পঞ্জিকা, বাংলা ক্যালেন্ডার জায়গা পেত দোকানে, বাড়িতে ৷ এখন তো বাংলা ক্যালেন্ডার বিলুপ্তির পথে৷ বহু বাঙালি বাংলা সন-তারিখ মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করেন না৷ তবে, বাংলা সন-তারিখ মনে থাকুক বা নাই থাকুক, বাংলা নববর্ষ বাঙালি পালন করেন ঘটা করে৷

Previous articleWatch “World Art Day Kumartuli” on YouTube
Next articleনববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন নরেন্দ্র মোদী,মমতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here