ছট পুজো:দেশজুড়ে মহা সমারোহে পালিত হচ্ছে এই উৎসব,ঘাটে ঘাটে চলছে সূর্য-বন্দনা, জানুন ছটের ইতিবৃত্ত

0
492

পিয়ালী মুখার্জী, ওয়েবডেস্কঃ বুধবার ছট পুজো। শহর জুড়ে (Kolkata) সকাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে সূর্য বন্দনা। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এবছর রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবরে ছট পুজো নিষিদ্ধ। তাই এই দুই অঞ্চল পুলিশি নিরাপত্তায় ঘেরা। চলছে সচেতনতা প্রচারও।

বুধবার সকাল থেকেই ঘাটে ঘাটে ছট পুজোর ধুম। রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য ঘাটে পুজো চলছে। গঙ্গা ছাড়াও কলকাতার ৩৯টি ঘাটে হচ্ছে ছট পুজো। কেএমডিএ-র পক্ষ থেকে সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অস্থায়ীভাবে যাদবপুর, কসবা, আনন্দপুর থানা এলাকায় ৩২টি ঘাট ঠিক করা হয়েছে। নোনাডাঙ্গা ও পাটুলিতে সাতটি ঘাট ঠিক করা হয়েছে।

ছট পুজো উপলক্ষ্যে সরোবরকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। টাঙানো হয়েছে ব্যানারও। আশপাশে রয়েছে পুলিশি প্রহরা, যার নেতৃত্বে ডিসি পদমর্যাদার অফিসার। এছাড়া কলকাতা পুরসভা ও পুলিশের তরফে চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচার।

দূষণ রুখতে এবছর কড়া প্রশাসন। যাতে কেউ নিয়ম ভাঙতে না পারেন, তার জন্য কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। কলকাতা পুলিশ ছট পুজোর জন্য সাড়ে চার হাজার পুলিশ কর্মীকে পথে নামিয়েছে। ছট পুজোর দূষণ এড়াতে বাজি পোড়ানোতেও জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সেদিকে নজর রেখেছে প্রশাসন।
গতকালই ছট পুজোর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে ঘাট পরিদর্শনে গিয়েছিলেন পুরপ্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।

জানুন ছটের ইতিবৃত্ত:

হিন্দুধর্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব ‘ছট পূজো’। ছট অর্থাৎ ছটা বা রশ্মির পূজো। এই রশ্মি হল সূর্যের রশ্মি অর্থাৎ এই পূজা হল সূর্যদেবের। সাধারণত ছট পূজোর সঙ্গে জড়িত মা গঙ্গা ও অন্নপূর্ণা। কিন্তু হিন্দুরা সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে এই পূজো করে থাকে।  স্বাভাবিকভাবে এখনও হিন্দুরা নিজেদের উন্নতি, সম্পদ ও প্রভাব  বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘ছট পূজো’ করে থাকে।

সূর্য সাধারণত জীবন-শৈলীর কারক। সমস্ত শক্তির উৎস এই সূর্য, তাই এই পূজোতে মনুষ্য জাতি সূর্যদেবকে পূজো অর্চনার মাধ্যমে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে থাকে। চারদিন ধরে এই পূজো হয়ে থাকে। ছট পূজা কার্ত্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে অনুষ্ঠিত হয়। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে সাধারণত এই পূজো হয়ে থাকে। আবার কোথাও কোথাও চৈত্র মাসেও হয়। ছট পর্ব সম্পর্কে বহু কাহিনী প্রচলিত আছে। মনে করা হয়, মহাভারতে কুন্তির দ্বারা সূর্যের আরাধনা এবং কর্ণের জন্ম থেকেই এই পর্বের সূচনা।

আবার পুরাণে অন্য একটি কথা প্রচলিত আছে। প্রিয়ব্রত নামে এক রাজার দীর্ঘদিন সন্তান না হলে অনেক যজ্ঞ করে একটি মৃত পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। হঠাৎ সেখানে আসীন দেবী উদয় হন, বলেন আমি ষষ্ঠী দেবী, আমি বিশ্বের সমস্ত শিশুর রক্ষা করি। তারপর মৃত শিশুর শরীর স্পর্শ করেন এবং শিশুটি বেঁচে ওঠে। এরপর রাজ্যে ব্রত করার নির্দেশ দেন রাজা। এই ব্রতে তিন দিনের কঠোর উপবাসের বিধান রয়েছে। যারা এই ব্রত করেন, তাদের পঞ্চমীর দিন নুন ছাড়া ভোজন গ্রহণ করতে হয়।

ষষ্ঠীতে নির্জলা থেকে ব্রত করতে হয়। ষষ্ঠীতে অস্তগামী সূর্যের এবং সপ্তমীর সকালে উদিত সূর্যকে অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। কোনও নদী বা পুকুরে গিয়ে এই পূজো করতে হয়। তারপর জল খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়।আবার এটাও মনে করা হয়, ছট দেবী সূর্য দেবের বোন। তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সূর্যের আরাধনা করা হয়। প্রাচীনকালে বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে এই পর্ব অনুষ্ঠিত হত।

কিন্তু এখন এই প্রদেশের মানুষ যেখানেই থাকেন সেখানেই তারা এই ছট পূজো করে থাকেন। এই পূজোর বিশেষত্ব হল, বাড়ির যেকোনো সদস্য এই ব্রত করতে পারে। এই সময় বাড়ি পরিষ্কার রাখতে হয়। এই পূজোর বিশেষ প্রসাদ ঠেকুয়া।•    স্ত্রীরা স্বামীর মঙ্গল কামনার জন্য ছট পূজোর গেরুয়া সিঁদুর পড়েন। •    ছট পূজোর উপবাস করা ব্যক্তি পাঁচটি ফল দান করেন, সুফল পাবার আশায়। 

Previous articleWest Bengal weather update: ভিলেন নিম্নচাপ,ফের বৃষ্টির আশঙ্কা! আবহাওয়া নিয়ে যা জানাল হাওয়া অফিস
Next articleNational Award winner Bishakh Jyoti: ‘ক্রান্তিদার্শি গুরুজি’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেলেন বনগাঁর বিশাখ জ্যোতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here