দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ: বাংলায় বিধানসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। তার পর আজ রবিবার প্রথম বার ভোট প্রচারে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তাঁর সভা হচ্ছে। দেখুন লাইভ একনজরে:

রাজনৈতিক জীবনে কত শত সভা করেছি। এই সভা অভূতপূর্ব। হেলিকপ্টার থেকে দেখছিলাম ময়দানে তো জায়গা নেইই, রাস্তাতেও কালো মাথার স্রোত বইছে।
আমার সৌভাগ্য এই ঐতিহাসিক ব্রিগেড গ্রাউন্ডে বক্তৃতা দিতে পারছি। এই ব্রিগেডের কাছেই একদিকে স্বামী বিবেকানন্দর বাড়ি, অন্যদিকে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বাড়ি, ঋষির অরবিন্দর বাড়ি, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মভিটে।
এই ব্রিগেড বাংলায় উন্নয়নে বাধা দেওয়ারও সাক্ষী। বাংলাকে চব্বিশ ঘন্টা হরতাল আর বন্ধে বেঁধে রাখার নীতি কথাও এখান থেকে বলা হয়েছে।
বাংলা চায় উন্নতি, বাংলা চায় শান্তি, বাংলা চায় প্রগতিশীল বাংলা, বাংলা চায় সোনার বাংলা।
আমি দেখতে পাছি এ বার বিধানসভা ভোটে একদিকে তৃণমূল রয়েছে। বাম,কংগ্রেস রয়েছে। তাদের উন্নয়ন-বিরোধী নীতি রয়েছে। অন্যদিকে খোদ জনতা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আজ আমাদের মধ্যে বাংলার ছেলে মিঠুন চক্রবর্তীও রয়েছে। ওঁর জীবনগাথায় সংগ্রামের কথা লেখা রয়েছে। লোকনাথ বাবার আশীর্বাদ রয়েছে তাঁর সঙ্গে।

এই ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে আমি বাংলার মানুষকে আসল পরিবর্তনের আশ্বাস দিতে চাই। বাংলার পুনর্নিমাণের, বাংলার সংস্কৃতি রক্ষা, উন্নয়নের, বিনিয়োগ বাড়ানোর, কর্মসংস্থানের। এখানকার ছেলেমেয়েদের, শিল্পের জন্য, বাংলার জন্য ২৪ ঘন্টা লড়াই করব। প্রতি মুহূর্ত আপনাদের জন্য বাঁচব। শুধু ভোট নয়, প্রতিনিয়ম আপনাদের মন জয় করে চলতে চাই। তা করতে চাই প্রেম, সমর্পণ দিয়ে। বাংলার মানুষের হিত বিজেপির কাছে সবচেয়ে জরুরি হবে।
বাংলায় আসন পরিবর্তন আনা বিজেপির পরিশ্রমের আধার হবে। আসল পরিবর্তনের মানে, এমন বাংলা যেখানে যুবকদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যাবে, এমন বাংলা যেখানে মানুষকে রাজ্য ছেড়ে যেতে হবে না। আসল পরিবর্তন মানে এমন বাংলা যেখানে শিল্প বাণিজ্যের উন্নতি হবে, বিনিয়োগ আসবে, এমন বাংলা যেখানে একুশ শতকের আধুনিক পরিকাঠামো হবে, যেখানে গরিবদের অগ্রসর হওয়ার সুযোগ থাকবে, যেখানে সব শ্রেণির উন্নয়নে সমান ভাগিদারী থাকবে।
উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হবে না। সবাই গুরুত্ব পাবে। সবার কল্যাণ করাই প্রশাসনের মন্ত্র হবে। কারও তুষ্টিকরণ হবে না।
স্বাধীনতার পর গত ৭৫ বছরে বাংলা থেকে যা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা আমার থেকে আপনারা ভাল জানেন। বাংলা থেকে যা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা ফেরত দেব। আমার কথা লিখে রাখুন।

দেশের মতো আগামী ২৫ বছর বাংলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই এই বিধানসভা ভোটের মাহাত্ম্য। কারণ, আগামী পাঁচ বছরে সেই বৃহত্তর উন্নয়নের আধার তৈরি হবে। যাতে ২০৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীনতার শতবর্ষ পালন করবে, তখন যাতে বাংলা দেশের পয়লা নম্বর স্থানে থাকে।
বাংলার মাটিতে ওই সব জিনিস রয়েছে যা জীবনকে মসৃণ করতে পারে। বন্দর, পাহাড়, পর্যটন কী নেই!
কলকাতাকে সিটি অব ফিউচার কেন বানানো যাবে না। কদিন আগে একটা সমীক্ষা হয়েছে। তাতে বাংলার মানুষ বলেছে, কলকাতাকে তারা ভবিষ্যতের শহর হিসাবে গড়ে উঠতে দেখতে চায়।

বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলায় স্মার্ট সিটি হবে। সেখানে পড়াই কামাই এবং মানুষের চিকিৎসার জন্য দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা থাকবে। পরিকাঠামো উন্নতি হবে। গ্রাম ও শহরের প্রশাসনিক ব্যবস্থাতেও সংস্কার করা হবে।
বাংলায় পঞ্চায়েত ও পুর-ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক কাঠামোকে তছনছ করা হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে তা ঠিক করবে। পুলিশ ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ফেরাবে।
বাংলায় চাকরির পরীক্ষা স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে। স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে।
কারিগরী, চিকিৎসার মতো বিষয়ে পঠনপাঠন যাতে বাংলায় হয়, তার ব্যবস্থাও করা হবে। ইংরেজি না জানলেও গরিবের ছেলেমেয়েরা যাতে ডাক্তারি পড়তে পারে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারে, সেই ব্যবস্থাও আমরা করব।
আমরা বাংলার রাজনীতিকে উন্নয়নকেন্দ্রিক করতে চাইছি। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আর সময় নষ্ট যেন না হয়।
বাংলায় ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি শুরু করেছিল বামেরা। তারা স্লোগান তুলেছিল, বলত কংগ্রেসের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও। এমন স্লোগান দিয়ে ওরা ক্ষমতায় এসেছিল। প্রায় তিন দশক ক্ষমতায় ছিল। আমি জানতে চাই, আজ সেই কালো হাত কীভাবে গোরা হয়ে গেল! যে হাতকে বামপন্থীরা কালো বলত তা সাদা হয়ে গেল কী করে? যে হাত ভাঙার কথা বলেছিল, এখন সেই হাতের আশীর্বাদ চাইছে।

গত দশ বছর ধরে তৃণমূল সরকার এখানে ক্ষমতায় ছিল। সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা কি পূরণ হয়েছে? কৃষক, শ্রমিক, গরিবদের জীবনে কোনও পরিবর্তন হয়েছে? গরিব যাতে আরও গরিব হয় সেই ব্যবস্থা করেছে।
বাংলার স্কুলে, হাসপাতালে, শিল্পে কোনও পরিবর্তন হয়েছে? খুনখারাপির রাজনীতিতে কোনও পরিবর্তন এসেছে কি! আজ বাংলায় মা মাটি মানুষের কী অবস্থা হচ্ছে সবাই জানে।
আশি বছরের বুড়ি মাকে যে ভাবে মারা হয়েছে, তাতে এঁদের ক্রূর চেহারা গোটা দেশ দেখতে পেয়েছে।
আমি নতুন স্লোগান দিচ্ছি—ভ্রষ্টাচার আর নয় আর নয়, তোলাবাজি আর নয় আর নয়, কাটমানি আর নয় আর নয়, সিন্ডিকেট আর নয় আর নয়, হিংসা আর নয় আর নয়, আতঙ্ক আর নয় নয়, অন্যায় আর নয় আর নয়।
দিদি শুনলেন কি, এটা বাংলার আওয়াজ, বাঙালির আওয়াজ। বাংলার মানুষ আপনাকে দিদি ভেবে নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু আপনি নিজে কেন একটাই ভাইপোর পিসি হয়ে থেকে গেলেন! কেন শুধু নিজের ভাইপোর লোভ পূরণ করতেই সময় কাটিয়ে দিলেন।
মা মাটি মানুষের সঙ্গে অন্যায় করার পর এখন স্লোগান দিয়েছেন। আরে দিদি আপনি তো শুধু বাংলার নয়, গোটা দেশের মেয়ে।

কদিন আগে যখন আপনি স্কুটিতে উঠলেন। গোটা দেশের লোক চাইছিল আপনি যেন চোট না পান। ভাগ্য ভাল আপনি পড়ে যাননি। নইলে যে রাজ্যে ওই স্কুটি তৈরি হয়েছে, তাকেই শত্রু বানিয়ে ফেলতেন।
আপনার স্কুটি ভবানীপুরের বদলে নন্দীগ্রামে ঘুরে গেছে। আমি তো সবার ভাল চাই। আমি চাই না কেউ চোট পাক। কিন্তু স্কুটি যদি নন্দীগ্রামে মুখ থুবড়ে পড়তে চায় তা হলে আমি কী করব!
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এক দিন আগে বাংলার মাটিকে প্রণাম করি। কারণ এখান থেকেই সারদা দেবী, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতো মহীয়সী নারী পেয়েছে দেশ। কিন্তু এখানে সরকারি প্রকল্পেও একজন ‘মালকিন’-এর নাম আছে।
বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র যে টাকা পাঠিয়েছে, তা খরচই করেননি। এমন কত যোজনার টাকা এখানকার রাজ্য সরকার চেপে বসে আছে। দিদির দর্শন হল, না কাম করেঙ্গে, না করনে দেঙ্গে!
আজকাল আমাদের বিরোধীরা বলে, মোদী নিজের বন্ধুদের জন্য কাজ করে। আমরা সবাই জানি, ছোটবেলায় যাদের সঙ্গে খেলেছি, বড় হয়েছি তাঁরা আমাদের সারাজীবনের বন্ধু হয়ে যায়। আমি গরিব পরিবারে বড় হয়েছি, তাই গরিবদের কষ্ট আমি অনুভব করতে পারি। সেজন্য আমাকে বই দেখতে হয় না, বা ভিডিও দেখতে হয় না। আমি অনুভব করতে পারি। আমি আমার বন্ধুদের জন্য কাজ করে যাব।

বাংলার বন্ধুদের জন্যও কাজ করব। বাংলায় আমার বন্ধুদের জন্য ৯০ লক্ষ ঘর বানিয়ে দিয়েছি। বাংলার বন্ধুদের জন্য ৩২ লক্ষ ঘর বানিয়ে দিয়েছি। করোনার সময়ে আমার সব বন্ধুদের আমি বিনা পয়সায় রেশন দিয়েছি, সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

বাংলায় আমার বন্ধুদের জন্য আরও বেশি কাজ করতে চাই। বাংলার সরকার আটকাতে চাইছে, কিন্তু বাংলার কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে চাই, বাংলার সরকার আটকাচ্ছে, কিন্তু বাংলার সব গরিব মানুষকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দিতে চাইছি। আপনারাই বলুন, দোস্তি চলবে নাকি তোলাবাজি!
আমি জানি এরা অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। খুব খেলেছে। খেলে খেলে বাংলার গরিবদের লুটেছে, কিছুই ছাড়েনি, আমফানের টাকাও লুঠ করেছে। তোলাবাজি, সিন্ডিকেট এতো খেলা খেলেছেন যে দুর্নীতির অলিম্পিক আয়োজন করা যেত।

তৃণমূলের খেলা শেষ, খেলা খতম, উন্নয়নের কাজ শুরু। বাংলার মানুষকে বলছি, ভয় পাবেন না, নির্ভয়ে বিজেপিকে ভোট দিন। বাংলার জয় ভারতের জয়।
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কেউ যদি ভয়ে হতাশায় রেগে যায়, তা হলে তাঁর মতিভ্রম হওয়া শুরু হয়। রেগেমেগে আমাকেও কী কী বলা হচ্ছে। কখনও রাবণ বলছে, কখনও দানব, কখনও দৈত্য কখনও গুণ্ডা। দিদি এত রাগ কেন? রাগ কেন দিদি? কথায় কথায় গাল দেওয়া! এত রাগ কেন দিদি! বাংলায় পদ্ম ফুটছে, কারণ আপনারা পাঁক তৈরি করেছেন। বাংলায় জাত পাতের বিভাজন করেছেন, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।
দিদিকে অনেকদিন ধরে চিনি। এই দিদি সেই দিদি নয়, যিনি বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। দিদির রিমোট কন্ট্রোল এখন অন্য কারও হাতে রয়েছে।
বিজেপির প্রতিষ্ঠার প্রেরণাই ছিলেন একজন বাঙালি। বিজেপি এমন দল যার ডিএনএ বাংলা রয়েছে। বিজেপি বাংলার কাছে ঋণী। তাই বাংলাকে উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছে দিতে চায় বিজেপি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here