অর্পিতা বনিক দেশের সময়

সবজিই সম্বল ওঁদের। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্যাপসিকাম, টম্যাটো, হরেক রকম সবজি খেত থেকে সোজা চলে যায় বড়বাজারে। সেখান থেকে পাওয়া টাকাতেই সংসার চলে রাধেশ্যাম,খোকন, অশোকদের। কথা হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর নতুন গ্রামের ৷

ঝড়ের জেরে শীতের অকাল বৃষ্টিতে ভেসেছিল দক্ষিণবঙ্গের বহু জেলা ৷ বৃষ্টি হয়েছে বনগাঁ মহকুমাতেও ৷

আবহাওয়া খারাপ হয়েছে ক্রমাগত। ফলে শীতের সবজির মরশুম খারাপ। আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না চাষিরা( North 24 Pargana Farmers are in trouble in Bongaon)। যথাযথ ঠাণ্ডা না পড়ায় একেই ফলন ভাল হচ্ছে না। উপরন্তু, হঠাৎ বৃষ্টিতে জল জমছে সবজি ক্ষেতে। মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ফসল। এই পরিস্থিতিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি যা কিছু বেঁচে যাচ্ছে সব নিয়েই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কেউ কেউ।

অসময়ের বৃষ্টিতে আলু, শীতকালীন আনাজ-সহ বিভিন্ন চাষে ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃষ্টিতে সব থেকে ক্ষতি হবে আলু, সর্ষে, ধানের। আউশ ও আমন ধান ওঠার মুখে নিম্নচাপের এই বৃষ্টি চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। দেখুন ভিডিও

কৃষি দফতর মনে করছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে মার খেতে পারে আমন ধান। বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হলে বাজারে তার প্রভাব পড়তে পারে।

চাষিরা সারা বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে চাষ করে থাকেন। গ্রীষ্মে হয় জলের সমস্যা আবার বর্ষায় অতি বৃষ্টির ভয়। অবশেষে শীত এলে একটু রেহাই পান কৃষকরা। কিন্তু এ যেন অন্য চিত্র ধরা পড়ল। সিলেবাসের বাইরে ছিল এই নিম্নচাপ। কোনোও ভাবেই প্রস্তুত ছিলেন না কৃষকরা , ফলেই বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাব পড়ল বাংলায়, নিম্নচাপের বৃষ্টিপাতের জেরে ধান ও আলু চাষিদের মাথায় হাত। সারা বছরের পেটের অন্ন মাঠে পড়ে রয়েছে, আর সেই পাকা ধানে মই দিল মিগজাউম। যার জেরেই অসহায় কৃষকদের মাথায় হাত। একদিকে চলছে ধান তোলার কাজ অন্যদিকে চলছে রবি চাষের প্রস্তুতি, মাঠের ধান তোলার পর সেই জমিতে হবে আলু, সরিষা, বাদাম সহ অন্যান্য রবি মরসুমের চাষ। অকাল নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দানা বেঁধেছে কৃষকদের মধ্যে।মাথায় হাত শুধু ধান চাষিদেরই নয় আলু চাষিদেরও। এই সময়ে জ্যোতি, চন্দ্রমুখী, সুপারসিক্স, কে বাইস সহ বিভিন্ন প্রকারের আলু চাষ করা হয়। অনেকেই বাড়িতে আলুর বীজ ও সার কিনে রেখেছেন। নিম্নচাপের বৃষ্টির কারণে জমি স্যাঁতস্যাঁতে থাকার কারণে মাঠে লাঙ্গল দিতে দেরি হবে। ফলে দেরিতে হবে আলুচাষ। সময় মত না লাগানোর ফলে উৎপাদন কম হবে। যার জেরে চিন্তায় ঘুম ছুটেছে এলাকার আলু চাষিদের।

ধান চাষিদের অনেকেই মাঠের ধান ঘর নিয়ে আসতে পেরেছেন, আবার অনেকেরই ধান পড়ে রয়েছে মাঠে। অকালে বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ধান চাষিরা। একেই সরকারি মাণ্ডিতেধান দিতে গেলে ধানের রং অপরিষ্কার হলে ধান নিতে চায় না । এই বছরে অকালে বৃষ্টিতে কৃষকেরা ধান বাড়িতে নিয়ে আসতে পারলেও ঠিক ভাবে বিক্রয় করতে পারবেন তো? এখন এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ৷

এক কথায় নিম্নচাপের অকাল বৃষ্টিতে দিশেহারা, চাষীরা অঘ্রাণের অতিবৃষ্টিতে চাষে সর্বনাশ। জেলায় জেলায় বৃষ্টি, মাথায় হাত চাষির। পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি। মাটি ভিজে পিছোবে আলুচাষ, কমতে পারে ফলন। শীতের সবজি-ফুলচাষেও বড়সড় ক্ষতি। সবমিলিয়ে মিগজাউমের দাপটে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা। অচিরেই আরও দামি হতে পারে চাল-আলু-সবজি।

শনিবার থেকে কমবে রাতের তাপমাত্রা। মাঝ ডিসেম্বরেই কি দুয়ারে শীত? আবহাওয়ার মতিগতিতে নজর আবহবিদদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here