দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কুড়িতে আমপান, একুশে ইয়াস, বাইশে সিত্রাং, তেইশে মোকা। তবে আমপান-ইয়াসের ক্ষতে নোনা হাওয়ার ছিটে দিতে সিত্রাং আসেনি। মোকাও আসছে না বাংলায়। মঙ্গলবার -রাতেই সেই মঙ্গলময় বার্তা শুনিয়ে দিয়েছে মৌসম ভবন।

মোকা যাবে বাংলাদেশ-মায়ানমার উপকূলের দিকে। রবিবার দুপুর দুপুর বাংলাদেশের কক্সবাজারের দক্ষিণে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা ঘূর্ণিঝড়ের। পূর্বাভাস পুরোপুরি মিলে গেলে চট্টগ্রাম ডিভিশনে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। ক্ষতি হতে পারে কক্সবাজার লাগোয়া মায়ানমার উপকূলেও। এককালে এই আরাকান অঞ্চল থেকেই মগদস্যুরা হানা দিত। এ বার সেই মগের মুলুকেই মোকার রক্তচক্ষু!

প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, মোকা বাংলাদেশ মায়ানমার ও উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। বাংলায় এর পরোক্ষ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা। মোকার প্রভাবে আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টিপাত চলছে।

মঙ্গলবারের গভীর নিম্নচাপ পরিবর্তন হয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বুধবার রাতেই এই নিম্নচাপ পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ হবে বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ১৪৬০ কিলোমিটার দূরে। ১৩ তারিখ থেকে এই ঝড় অনেকটা দুর্বল হবে এবং ১৪ তারিখ বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে পেরিয়ে যাবে। বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মায়ানমারের মধ্য দিয়ে। বাংলায় ১২ তারিখ পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলবে।

এখন প্রশ্ন হলো , মোকার হাত থেকে বাংলা রেহাই পেয়ে যাচ্ছে কী ভাবে?

আবহাওয়াবিদদের ব্যাখ্যা, “নিম্নচাপ হোক বা ঘূর্ণিঝড়, তার অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ করে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরের বায়ুপ্রবাহ। যাকে আমরা বলি, স্টিয়ারিং ফ্লো। যেমন, কোনও উচ্চচাপ বলয় বা পশ্চিমী অক্ষরেখা। খুব কম সময়ই এমন হয় যে, ঘূর্ণিঝড় স্টিয়ারিং ফ্লো-র ব্যারিকেড এড়িয়ে নিজের ইচ্ছেয় এগোতে পারে। তখন স্টিয়ারিং ফ্লো দুর্বল হতে হয় আর ঘূর্ণিঝড়কে অত্যন্ত শক্তিশালী হতে হয়। এ রকম ঘটে কম।” আর কম ঘটে বলেই বাংলা বেঁচে যায়। বারবার।

জনমানসে প্রচলিত আছে, বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ই বাংলাদেশের দিকে ঘুরে যায়। এই ‘ঘুরে যাওয়ার’ পিছনে আসলে উপরের স্তরের বায়ুপ্রবাহের হাতই থাকে। বলেই বাংলাদেশ বা মায়ানমারের চেয়ে বাংলায় ঘূর্ণিঝড়ের হানা তুলনায় কম।

গত ১৩২ বছরে মে মাসে বাংলাদেশের বর্তমান সীমানায় আছড়ে পড়েছে ২৪টি ঘূর্ণিঝড়। মায়ানমারে ১৫টি, বাংলায় ৮টি ঘূর্ণিঝড়। এর মধ্যে চলতি শতাব্দীতে মাত্র দুটো। আয়লা আর আমপান। সেই তুলনায় চলতি শতাব্দীর মে মাসে বাংলাদেশে আছড়ে পড়েছে পাঁচটি ঘূর্ণিঝড়। এর পিছনে অবশ্য আরও একটা কারণ রয়েছে। তা হল উপকূলের দৈর্ঘ্য। বাংলায় উপকূল দিঘা থেকে সুন্দরবন, বড়জোর দেড়শো কিলোমিটার। বাংলাদেশে সুন্দরবন থেকে টেকনাফ, অন্তত চারশো কিলোমিটার লম্বা উপকূল। অর্থাৎ, সদর দরজা বড়।

পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ভূপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ১১ কিলোমিটার উঁচুতে পশ্চিমী অক্ষরেখা থাকবে। এই অক্ষরেখা কিছুতেই ঘূর্ণিঝড়কে বাংলার দিকে এগোতে দেবে না।’’

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যে হাওয়া বদল কবে হতে চলেছে? অস্বস্তিকর গরমের থেকে মুক্তি কবে? এই প্রসঙ্গে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার থেকে রাজ্যে হাওয়া বদলের সম্ভাবনা রয়েছে। শনি এবং রবিবার বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে উচ্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে। আপাতত অন্যান্য জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।

জানা যাচ্ছে, শনিবার-রবিবার উপকূলের তিন জেলায় হালকা বৃষ্টি ছাড়া, বাংলায় তেমন কোনও প্রভাবই পড়বে না মোকার। অবশ্য তাপপ্রবাহের যা পরিস্থিতি, তাতে বৃষ্টি এলেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে আমজনতা।

আবহবিদরা জানিয়েছেন, রবিবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং মায়ানমারের কাউকপুরের উপর আছড়ে পড়ে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং উত্তর মায়ানমার উপকূল অতিক্রম করবে মোকা৷ বাংলাদেশ এবং মায়ানমার উপকূলে সর্বোচ্চ ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে আছড়ে পড়তে পারে ‘মোকা’। তবে শনিবার থেকে ঘূর্ণিঝড় ধীরে ধীরে শক্তি ক্ষয় করতে শুরু করবে বলেও মনে করছে মৌসম ভবন ৷

এদিকে বাংলা জুড়ে পারদ চড়ছে। ১৪ জেলায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার করল তাপমাত্রা। রাজ্যের তাপমাত্রায় সেরা বীরভূমের সিউড়ি- ৪৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরবঙ্গের মালদহে প্রায় ৪২ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই পারদ। বাগডোগরায় তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ৷

ফের একবার অস্বস্তিকর গরম শহর কলকাতায়। রীতিমতো নাজেহাল শহরবাসী। বৃহস্পতিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল অর্থাৎ বুধবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি, যা স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি বেশি এবং এদিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.২ ডিগ্রি, যা স্বাভাবিকের থেকে দুই ডিগ্রি বেশি। এদিন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বাধিক ৮৬ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৩২ শতাংশ।

পাহাড়েও উষ্ণতার ছোঁয়া। দার্জিলিংয়ের অনেক জায়গাতেই তীব্র গরমে পাখা চালাতে হয়েছে। স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা শৈলশহর দার্জিলিংয়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here