দুয়ারে তাপপ্রবাহ, চৈত্রেই পারদ ছাড়াবে ৪০ ডিগ্রি! দিনের এই সময়ে ঘর থেকে না বেরোনোর পরামর্শ :

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শীতেরদিন পেরিয়েছে বহু আগেই ৷ এবার বসন্ত বিদায়ের পালা ৷

হাতে আর মাত্র ক’ টা দিন। কিন্তু শেষ বসন্তে যেভাবে তড়তড়িয়ে বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ তাতে রীতিমতো চিন্তায় রাজ্যবাসী। গত কয়েকদিনের সকাল থেকেই রোদের তেজ দেখেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তায় রঙ বেরঙের ছাতার ঢল নেমেছে মাথা ঢেকে। অনেকেই ভাবছেন নববর্ষ কাটবে কতটা গরমে?

বাংলা নববর্ষ আসার আগেই আগেই তীব্র দহনে রাজ্যে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা ঘনিয়েছে! আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে যেতে পারে!

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দুই পর্যায়ে বাড়বে এই তাপমাত্রা। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ধীরে ধীরে বাড়বে তাপমাত্রা। তিন চার দিনে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এর পরে ১০ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমের জেলা-সহ উপকূল সংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এবং উত্তরবঙ্গের মালদা ও দক্ষিণ দিনাজপুরে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

বাংলার ৬ থেকে ৭ জেলায় স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বা তারও বেশি থাকতে পারে তাপমাত্রা। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস প্রায় নেই বললেই চলে। দক্ষিণবঙ্গের দু-এক জেলায় খুব সামান্য সম্ভাবনা ছিটে-ফোঁটা বৃষ্টির।

হাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছিল, আপাতত বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। বদলে তেজ বাড়বে রোদের। আগামী কয়েকদিন দক্ষিণ বঙ্গের একাধিক জেলায় জারি থাকবে প্রবল তাপপ্রবাহ। একই বার্তা দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিতেও। আগামী সপ্তাহেই মহানগরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।

এই সপ্তাহে এক দফায় এবং পরের সপ্তাহের আরও এক দফায় তেজ বাড়াবে তাপমাত্রা। অর্থাৎ নববর্ষ যে ভ্যাপসা গরমে কাটবে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ্য, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমের মতো দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা এখনই ৩৬-৩৭ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে। 

উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের উপর একটি ঘূর্ণিঝড় সঞ্চালন ক্রমশ ঘনীভূত হয়েছে। যার জেরে আগামী তিন দিনের মধ্যে বজ্রপাত এবং দমকা হাওয়া-সহ হালকা বৃষ্টি হতে পারে দেশের বেশ কিছু রাজ্যে। আজ শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ওড়িশায় শিলাবৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও মধ্য মহারাষ্ট্র এবং মারাঠওয়াড়াতেও শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

আইএমডি সতর্কতা অনুযায়ী, দেশের অনেক রাজ্যে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দৃশ্যমান। একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সক্রিয় হওয়ার কারণে, রাজ্যের আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে ৮ এপ্রিল। 

অনেক রাজ্যে তাপমাত্রার বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাবে। আকাশে মেঘের আনাগোনা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও, দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্য-সহ দিল্লি এনসিআর, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশেও বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। 

সাইক্লোনিক সার্কুলেশন আবহাওয়া দফতরের মতে, একটি রেখা ঝাড়খণ্ড থেকে দক্ষিণ অন্ধ্র তামিলনাড়ুর অভ্যন্তরীণ ওড়িশা এবং অন্ধ্র প্রদেশ হয়ে রাজ্য সীমান্ত দিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে একটি ঘূর্ণাবর্ত সার্কুলেশন সক্রিয় হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ড-সহ অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, কেরল এবং কর্ণাটকে বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। 

এছাড়াও ঝাড়খণ্ডের অনেক এলাকায় বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। একটি ট্রফ সিকিম থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এর চারপাশে একটি ঘূর্ণিঝড় সঞ্চালন তৈরি হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যেও বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অসম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশে বৃষ্টি ও তুষারপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে, ৮ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যের আবহাওয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে। আকাশে মেঘ থাকবে। উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চল-সহ রাজধানী দিল্লিতে বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি পঞ্জাব ও হরিয়ানার কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে কিছু জায়গায় তাপমাত্রা বৃদ্ধিও দেখা যাবে। 

রাজস্থানেও ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে ১১ এপ্রিল থেকে আবারও তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হবে। পাশাপাশি অনেক এলাকায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। 

দক্ষিণ-পূর্ব মধ্যপ্রদেশ, মারাঠওয়াড়া, মহারাষ্ট্র, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ এবং কর্ণাটক সহ ছত্তিশগড়ের কিছু অংশে বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উত্তর অভ্যন্তরীণ কর্ণাটকেও বজ্রপাত ও বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

রাজধানী দিল্লি-সহ রোহতক, ভিওয়ানি, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং আশেপাশের এলাকায় বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজস্থানের সাদুলপুরে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। দিল্লিতে আকাশ মেঘলা থাকবে। সকাল ও সন্ধ্যায় আবহাওয়া থাকবে মনোরম। দিল্লি এনসিআরের বেশ কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টিও রেকর্ড করা হয়েছে।

উত্তরাখণ্ডে বৃষ্টি কমেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াও অব্যাহত। দেরাদুনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি চোখে পড়েছে। মুসৌরি, ঋষিকেশ, হরিদ্বার সহ অন্যান্য জায়গায় রোদ থাকবে। পাহাড়ি এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। পিথোরাগড়, বাগেশ্বর, চামোলিতে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যের অনেক জেলায় তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে যেতে পারে।

হিমাচলের আবহাওয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ফের হিমাচলের তাপ বাড়বে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। একই সঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। তাপমাত্রা ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। এর ফলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে। অনেক জায়গায় তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশের পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে বিহারের সব এলাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। গয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে পটনায় তাপমাত্রা বেড়েছে। পাটনার তাপমাত্রা বেড়ে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অনেক জায়গায় গরম বাড়ছে।

এর মধ্যেই একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঘনিয়েছে উত্তর-পশ্চিম ভারতে। একটি অক্ষরেখা রয়েছে কর্নাটক থেকে তামিলনাড়ু পর্যন্ত। এছাড়া ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে কর্নাটক ও রাজস্থান সংলগ্ন এলাকায়। ওড়িশায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি, হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। সঙ্গে শিলাবৃষ্টি ও ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here