কুন্তল চক্রবর্তী, কলকাতা: সোনার দোকানে ডাকাতি, দোকানদারদের উপর কাস্টমসের অনধিকার চর্চা, এবং স্বর্ণ শিল্পীদের নিরাপত্তা হীনতা, রাহাজানি ও সোনার দোকানদার এবং স্বর্ণ শিল্পীদের উপর পুলিশি অত্যাচার সহ তোলা আদায় বন্ধের দাবিতে সোমবার কলকাতায় বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতি বউবাজারে গণবিক্ষোভ এবং অবস্থানের সামিল হলো। স্বর্ণ শিল্পীদের উপর পুলিশি এবং কাস্টমস এর অত্যাচারের বিরুদ্ধে এদিন ডেপুটি কমিশনের কাছে  ডেপুটেশন দেয়া হয় সমিতির পক্ষ থেকে ৷

উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ সমস্ত বঙ্গ স্বর্ণ শিল্পীরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির রাজ্য সম্পাদক টগর চন্দ্র  পোদ্দার, নদীয়া জেলার সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান কাত্তিক চন্দ্র সিংহ, বউবাজার স্বর্ণ শিল্পীর সমিতির সম্পাদক সুব্রত রায় উত্তরবঙ্গ থেকে পরিতোষ রায় সহ বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সমস্ত রাজ্য নেতৃত্ব এই প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হন। এদিনের প্রতিবাদ সভা মঞ্চ থেকে বিনয় সিংহ বলেন স্বর্ণ শিল্পীদের উপর কাস্টমস এবং রাজ্য পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে গণআন্দোলন আজকের থেকে শুরু হল, এই ধরনের অন্যায় বন্ধ না হলে আগামী দিনে বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতি বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবে। বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর চন্দ্র পোদ্দার বলেন পুলিশি অত্যাচার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন কোন থানা থেকে স্বর্ণ শিল্পী এবং দোকানদারদের থেকে মাসিক ৫০০ টাকা করে তোলা আদায়ের অপচেষ্টা চলছে। এর বিরুদ্ধেই আজকে সর্বাত্মক গণআন্দোলন।

ব্যপক বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে প্রায় ৬০০০০ হাজার স্বর্ণ শিল্পী এবং দোকানদারের উপস্থিতিতে এই সভা শুরু হয়। টগর চন্দ্র পোদ্দারের কথায় আজকে ডেপুটি কমিশনার অফ কাস্টমসের কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়ে যে গণআন্দোলনের সূচনা হলো, এই ধরনের কাস্টমসের অত্যাচার এবং পুলিশি অত্যাচার যদি বন্ধ না হয় আগামী দিনে বঙ্গীয় স্বর্ণ  শিল্পী সমিতি বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবে এবং আন্দোলনের শেষ অস্ত্র বন্ধ শব্দটিকে ব্যবহার করতে বাধ্য হবে। 

উপস্থিত সধারণ স্বর্ণ শিল্পীরা দাবি করেন স্বর্ণ শিল্পীদের উপর কাস্টমস এবং পুলিশি অত্যাচারের অবসান হওয়া প্রয়োজন। বাংলা অন্যতম শিল্প স্বর্ণ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে রাজ্য সরকারকে স্বর্ণ শিল্পী এবং দোকানদারদের প্রতি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কার্তিক চন্দ্র সিংহ। পাশাপাশি সোনার দোকান  গুলির উপর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। রানাঘাট এবং পুরুলিয়ার ডাকাতি দুর্ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করলো স্বর্ণ শিল্পীদের এবং সোনার দোকানদারদের সামগ্রিক নিরাপত্তা দিতে রাজ্য পুলিশ প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

স্বর্ণ শিল্পীদের সার্বিক নিরাপত্তা, স্বর্ণ শিল্পের জন্য রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা পাশাপাশি কাস্টম এবং পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে এই সভা আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি শহরও গ্রামে গ্রামে স্বর্ণ শিল্পীদের নিয়ে গণ আন্দোলন গড়ে তুলবে। বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতি বনগাঁ মহকুমা শাখার সভাপতি কল্যাণ  তারন জানান প্রচন্ড বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে এই প্রতিবাদ সভায় স্বর্ণ শিল্পীদের আশাতীত উপস্থিতি আরও একবার প্রমাণ করল স্বর্ণ শিল্পীরা যথেষ্ট যন্ত্রণা এবং অত্যাচারের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে বলেই আজকের এই সভা সফল থেকে সফল  হলো। সভার সভাপতি বিনয় সিংহ বলেন আজকের এই রাজপথ থেকেই আগামী দিনের লড়াই আন্দোলনের পথ ঠিক হবে। স্বর্ণ শিল্পীদের স্বার্থে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ৷

বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতি লড়াই করতে বদ্ধপরিকর। বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির প্রত্যেক সদস্যের প্রতি সমিতি তার নৈতিক দায়বদ্ধতা পালন করবে এই আশ্বাস রাখেন বিনয় সিংহ। বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতি বনগাঁ শাখার সংগঠন সম্পাদক তারক বসু জানান স্বর্ণ শিল্পী এবং সোনার দোকানদারদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশকে নিতে হবে। দিন দিন ডাকাতি এবং রাহাজানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তাকে সঙ্গে নিয়ে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি কাস্টম এবং পুলিশি বিরুদ্ধে তিনি সরব। তিনি দাবি করেন রাজ্যের প্রত্যেকটি স্বর্ণ শিল্পী এবং সোনার দোকানদার বঙ্গীয় স্বর্ণ শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবে। সভাতে উপস্থিত থাকার জন্য সমস্ত স্বর্ণ শিল্পী এবং দোকানদারকে তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here