

রাজ্যের সব প্রান্তে চলাচল করা টোটোগুলিকে সরকারি খাতায় নথিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহণ দফতর। সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে টোটোর চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সও দেওয়া হবে। এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সম্প্রতি টোটো নিবন্ধনের কাজ শুরু করেছে পরিবহণ দফতর। সেই কাজ মিটে গেলেই চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শুরু হবে।

রেজিস্ট্রেশন করতেই হবে। না করলেই বাতিল। ডেডলাইন ৩০ নভেম্বর। রাজ্যের সমস্ত টোটোকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনতেই এই উদ্যোগ বলে জানাচ্ছে সরকার। ৩০ নভেম্বরের মধ্যেই সেড়ে ফেলতে হবে যাবতীয় কাজ। থেকে প্রতিটি টোটোর একটি নির্দিষ্ট নম্বর থাকবে, যা ছাড়া রাস্তায় গাড়ি নামানো যাবে না। সেই টেম্পোরারি টোটো এনরোলমেন্ট নম্বর পেতে কী করতে হবে, কোথায় যেতে হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সরকার বিজ্ঞপ্তি দিলেও ধোঁয়াশা কাটছে না টোটো চালকদের।

১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে ৩০ নভেম্বর। রাজ্যে এই মূহূর্তে কত সংখ্যায় টোটো চলছে, তার প্রকৃত সংখ্যা জানতে পারবে পরিবহণ দফতর। তারপরেই বিচার-বিশ্লেষণ করে টোটো চালকদের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এত দিন টোটোর উপর পরিবহণ দফতরের কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যত্রতত্র টোটো চালানোর ফলে শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় যানজট বাড়ছিল। টোটো নিবন্ধনের ফলে পরিবহণ দফতর বিষয়টিকে নিয়ে স্পষ্ট এবং সুষ্ঠু নীতি তৈরি করতে পারবে। তাই টোটো চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়াও আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।’’

পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘টোটোর নিবন্ধন হয়ে গেলে টোটো চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে আমাদের খুব একটা অসুবিধা হবে না। কারণ, হাতে এক বার টোটোর প্রকৃত সংখ্যা পেয়ে গেলে লাইসেন্স দিতে জেলাভিত্তিক অফিসগুলি সক্রিয় হয়েই সেই কাজ করে দেবে।’’ পরিবহণ দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, টোটো নিবন্ধন এবং টোটো চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবহণ দফতরের রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।

প্রসঙ্গত, ই-রিক্সা ও টোটোর নিবন্ধনের সরকারি উদ্যোগের বিরোধিতা করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘‘৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ করা রাজ্য সরকার টোটোগুলিকে নিবন্ধনের নামে টাকা তুলতে চায়। নিবন্ধনের জন্য ১০০০ টাকা ফি নির্ধারিত করা হয়েছে। এবং প্রত্যেক মাসে ১০০ টাকা করে, মানে বছরে ১২০০ টাকা। টাকার অঙ্কটা খুব ছোট নয়।’’ তাঁর আরও কটাক্ষ ছিল, ‘‘এখন রাজ্য সরকার মূলত মদ-নির্ভর। ২০ হাজার নতুন মদের দোকান দিয়েছে। সামনে নির্বাচন। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আবার কিছু দান-খয়রাতি করতে হবে। ১০০-২০০ টাকা ভাতা বাড়াতে হবে। খরচ আছে। তাই এই ধরনের একটা প্রক্রিয়া তারা চালু করেছে।’’
বিরোধী দলনেতার আক্রমণের জবাবে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিসের জবাব ছিল, ‘‘এত দিন রাজ্যে বিভিন্ন প্রান্তে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে টোটো চালানোর ফলে যত্রতত্র যানজট হচ্ছিল। এমতাবস্থায় ই-রিক্সার সঙ্গেই টোটোর অস্থায়ী নথিভুক্তিকরণের বন্দোবস্ত করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ নিবন্ধনের জন্য নেওয়া অর্থ আসলে কোষাগার ভরানোর কৌশল বলে যে অভিযোগ শুভেন্দু করেছেন, তার জবাবে স্নেহাশিস বলেন, ‘‘পরিবহণ দফতর যে রাজস্ব পায়, তা পরিবহণ ব্যবস্থার কাজেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাই বিরোধী দলনেতা যে কথা বলছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’
পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী আগেই জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে চলা টোটোর মোট পরিসংখ্যান সরকারের কাছে নেই। ফলে কোনও দুর্ঘটনার কবলে পড়লে বা অপরাধমূলক কাজকর্মে টোটো ব্যবহৃত হলে, সেগুলিকে চিহ্নিত করা রীতিমতো কঠিন হয়ে পড়ত। সরকার বলছে এখন রেজিস্ট্রেশনের হলে প্রতিটি গাড়ির মালিক এবং চালকের তথ্য সরকারি পোর্টালে নথিভুক্ত থাকবে। একইসঙ্গে রেজিস্ট্রার্ড টোটোগুলি সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও পেতে পারে। প্রাথমিকভাবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য ফি বাবদ দিতে হবে ১০০০ টাকা। ৬ মাস পর থেকে প্রতি মাসে দিতে ১০০ টাকা করে।
প্রয়োজন কোন কোন নথি?
গাড়ির মালিকের নথির ক্ষেত্রে লাগছে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ঠিকানার প্রমাণপত্র (ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, ইত্যাদি), পাসপোর্ট সাইজের ছবি। গাড়ির নথির ক্ষেত্রে লাগছে গাড়ি কেনার চালান (Invoice)
ইঞ্জিন এবং চেসিস নম্বর, গাড়ির ছবি। অন্যান্য নথির ক্ষেত্রে লাগছে একটি বৈধ মোবাইল নম্বর। যেখানে ওটিপি আসবে। ইচ্ছা করলে দিতে পারেন একটি ইমেল আইডি।

কীভাবে করবেন আবেদন?
টোটো রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়াতে জটিলতা খুব একটা নেই। ইতিমধ্যেই সরকারের তরফে রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি নির্দিষ্ট পোর্টাল আনা হয়েছে। আপনারা পাশেই সেই পোর্টালটি দেখতে পাচ্ছেন। পোর্টালে যাওয়ার পরেই হোমপেজে “Apply for TTEN” (Apply for Temporary Toto Enrolment Number) নামে একটা অপশন পাবেন। সেটিতে ক্লিক করতে হবে। এরপরই হবে মোবাইল নম্বর ভেরিফিকেশন। নম্বর দেওযার পর “Generate OTP” বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপরই নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে একটি ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড চলে আসবে। ওটিপি দেওয়ার পর ভেরিফাই বাটনে ক্লিক করতে হবে।
মোবাইল নম্বর ভেরিফাই হওয়ার পরই খুলে যাবে একটি আবেদনপত্র। সেখানেই দিতে হবে মালিকের বিবরণ। আপনার নাম, বাবার নাম, ঠিকানা, আধার নম্বর, প্যান নম্বর পরপর সবই দিতে হবে। তারপরই দিতে হবে গাড়ির বিবর। দিতে হবে টোটোর চেসিস নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর, গাড়ির ধরন। অন্যান্য তথ্যের যে জায়গা থাকবে সেখানে আপনার থানা, জেলা, এবং পিন কোড দিতে হবে।
যে সমস্ত নথি আপনি লিখিত আকারে দিচ্ছেন আবেদনপত্র পূরণের পর সেই সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিগুলির স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। তবে যে ফাইলগুলি দিতে হবে তার একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট ও সাইজের কথা সাইটেই উল্লেখ থাকছে। সেই অনুযায়ীই দিতে হবে। এখানেই ফর্ম ফিলাপের পর্ব ডান। এরপর আসবে পেমেন্ট প্রক্রিয়া।
রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদানের জন্য অনলাইনে একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে থাকছে। এর জন্য আপনি ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের পাশাপাশি UPI মোডেও পেমেন্ট করতে পারবেন। টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হলে আপনার আবেদন জমা পড়ে যাবে। আপনার কাছে চলে আসবে একটি অ্যাপ্লিকেশন নম্বর। আসবে একটি রসিদ। এই রসিদটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে রেখে দিতে হবে।
এরপর কিছু সময়ের অপেক্ষা।

অনলাইনে আবেদন এবং ফি জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হলে পরিবহন দফতরের পক্ষ থেকে আপনার আবেদন প্রক্রিয়াটি বিশদে খতিয়ে দেখা হবে। সবকিছু মানে আপনার জমা দেওয়া যাবতীয় নথি, যাবতীয় তথ্য ঠিক থাকলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট তারিখ দেওয়া হবে। সেদিন আপনার টোটোকে কাছের আরটিও বা এআরটিও অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হবে। সেখানে সরকারের কর্মীরা আপনার গাড়টির পরীক্ষা মানে ফিজিক্যাল পরীক্ষা করে দেখবেন। পরীক্ষায় পাশ করলেই একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইস্যু করা হবে।



