হিয়া রায় ,কলকাতা:

কাশীতে প্ৰচলিত প্রবাদ আছে কাশীতে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে নাকি স্বর্গ লাভ হয়! সেখানকার গঙ্গার জল মাথায় ঠেকালেই নিমেষে দূর হয় সমস্ত পাপ। কিন্তু সেই গঙ্গার পাড়েই বিধবাদের নিয়ে চলতে থাকে কুচক্র। সমাজে তাঁরা ‘বাড়তি’ বলে অনায়াসে তাঁদের ছেঁটে ফেলা যায়। ব্যবহারও করা যায়।

রাজর্ষি দে-র নতুন ছবি ‘সাদা রঙের পৃথিবী’-তে এরকমই একটি কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। কাশীর ‘মুক্তি ভবনে’ বেশ কিছু অসহায় বিধবাদের বাস।  এখানে সাধুর বেশে অসাধু কাজ করেন কুরুনানন্দ (অরিন্দম শীল)। এছাড়াও আছে সুরমা ও পরমা নামের দুই জমজ বোন শিবানী ও ভবানী (শ্রাবন্তী)। তাঁরাও এই চক্রের সঙ্গেই জড়িত। একদিন এখানে এসে পড়ে বিধবার বেশে এক পুলিশ অফিসার। সে কি ‘মুক্তি ভবন’-এর অসহায় বিধবাদের এই নরকীয় জীবন থেকে মুক্তি দিতে পারবে?

বলিউড বাংলা ছবিকে যতই ‘খারাপ’ বলুক, টলিউড আজও নতুন বাংলা ছবিমুক্তির দিন হাউজফুল বোর্ডের স্বপ্ন দেখে। পরিচালক, অভিনেতারা আশা করেন, দর্শক ভালবেসে দেখতে আসবেন তাঁদের কাজ। কিন্তু করোনাকাল যে সেই অভ্যেসে দাঁড়ি টেনেছে। এখন দর্শক ওটিটি মুক্তির দিকে তাকিয়ে। ছ’ইঞ্চির মুঠোফোনকেই বেশি আপন মেনেছে। হলে বলে ছবি দেখার আকর্ষণ আগের মতো নেই। শুক্রবার শহরের প্রথম সারির মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেল রাজর্ষি দে-র ‘সাগা রঙের পৃথিবী’। সেখানেই দর্শকদের মোবাইলপ্রীতি নিয়ে ভর্ৎসনা জানালেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বললেন, ‘‘মানুষের পরিধি ক্রমশ কমছে। মাত্র ৬ ইঞ্চিতেই বন্দি।’’

রাজর্ষির ছবি মানেই তারকাখচিত। সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবিতে টলিউডের ১৯ তারকা উপস্থিত। তাঁরাই প্রিমিয়ারে হাজার ওয়াটের ঝলকানি! শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, সৌরসেনী মৈত্র, দেবলীনা কুমার, রিচা শর্মা, অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়…. সবাই সাদা রঙ গায়ে জড়িয়ে উপস্থিত। তাল মিলিয়ে একই ভাবে শ্বেতশুভ্র মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বিধায়ক দেবাশিস কুমার, অভিনেতা এবং দেবলীনার স্বামী গৌরব চট্টোপাধ্যায়। ছবিতে বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্র। দ্বৈত চরিত্রে শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর এক চরিত্রের স্বামীর ভূমিকায় তিনি।

ছবিতে ব্যবসায়িক ফর্মুলা হিসেবে রয়েছে সুরমাসহ কয়েকটি নারী চরিত্রের মুখে গালমন্দ! এমনকী, শ্রাবন্তীর মুখ দিয়ে যৌন সুড়সুড়ি দেওয়া সংলাপও বাদ পড়েনি! তবে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের ভবঘুরে চরিত্রটি কিঞ্চিৎ পজিটিভ ভাবনা প্রসূত!

এর আগে একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজর্ষি বলেছিলেন, ‘‘কোনও ঘনিষ্ঠ দৃশ্য নেই। চুম্বন দৃশ্যও নেই। কাশীতে বিধবাদের প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরেছি। তাঁদের সঙ্গে অনবরত ঘটতে থাকা অন্যায় সামনে আনছি। তাতেই নড়ে বসেছে বোর্ড। ছবি অ্যাডাল্ট শংসাপত্র পেল! সব দেখেশুনে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে, বিশাল কিছু করে ফেলেছি।’’ প্রিমিয়ারের দিন তাঁর অনুরোধ, প্রত্যেকে প্রচণ্ড পরিশ্রম আর যত্ন করে ছবিটি বানিয়েছেন। সমাজের জ্বলন্ত সমস্যা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। দর্শকেরা বড় পর্দায় না দেখলে কিছুই বুঝতে পারবেন না। প্রিমিয়ারের শেষে শ্রাবন্তী ব্যক্তিগত ভাবে প্রত্যেকের কাছে জানতে চান, ছবি কেমন হয়েছে? বলেন, ‘‘সবাইকে ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ হলে এসে দেখতে হবে।’’

একুশ শতক। কিন্তু বিধবাদের সাদা দুনিয়া কতটা রঙিন হল? আদৌ রঙিন হল? নাকি সাদার আড়ালে কালোর ছায়া আজও প্রবল! এমনই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন শ্রাবন্তী, অনন্যা, সৌরসেনী, রিচা, দেবশ্রী। ছবি ফাঁস, কাশী বা বৃন্দাবনে যে সমস্ত বিধবা আশ্রয় নেন তাঁদের জীবন একটুও নিরাপদ নয়। তাঁরা পাচার হয়ে যান বিদেশে। অনেক সময় তাঁদের জন্য তৈরি আশ্রমকে সামনে রেখে যাবতীয় সুবিধে ভোগ করে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। রাজর্ষির দাবি, ‘‘আমার এক বন্ধু প্রথম বিষয়টির উপরে আলোকপাত করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে মনে হল আধুনিকতা, সভ্যতার মুখোশ তা হলে খুলে দেখাই! সেই ভাবনা থেকে অনেক গবেষণার ফসল এই ছবি।’’ কলকাতা, বারাণসী মিলিয়ে হয়েছে ছবির শুট। 

ছবিটি এটির থ্রিলার গল্পের মাধ্যমে একটি অনন্য উপায়ে কাশীকে উদযাপন করছে, যা এখনও ভারতের অনেক বিধবাদের একটি নির্বাচিত আবাসস্থল। ২৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতার আইনক্স সাউথ সিটি মলে ফিল্মটির অফিসিয়াল গ্র্যান্ড প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল যেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ব্রাত্য বসু,স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং বিধায়ক দেবাশীষ কুমার এছাড়া ছবির কাস্ট এবং কলাকুশলীরা। বিধবা পাচারের উপর এটিই ভারতে প্রথম চলচ্চিত্র, যা এখন পর্যন্ত অন্য কোনো ভাষায় করা হয়নি।

ব্যবসায়িক লাভের দিক থেকে এটি হাই স্কোর পাবে। তার একমাত্র কারণ স্টারকাস্ট! টালিগঞ্জের বড় তারকা শ্রাবন্তী, সৌরসেনী মৈত্র, অরিন্দম শীল, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার সহ আরও বহু চেনা মুখ ছবিটিতে ভিড় করে আছে। তবে শুধু কি স্টারকাস্ট দিয়ে ভালো সিনেমা তৈরি হয়? পাল্লা দিতে গেলে থাকতে হয় দারুণ চিত্রনাট্য ও নির্দেশনাও। সেখানেই ছন্দপতন ঘটেছে রাজর্ষি দে-র। ছবিতে ওঁর ক্যামিও দেখে বোঝা যায় ‘অভিনেতা রাজর্ষি’ পরিচালক রাজর্ষির চেয়ে অনেক ঢের সাবলীল।

অভিনয়ের দিক থেকে শ্রাবন্তী চমকপ্রদ। শিবানী ও ভবানী দুটি চরিত্রের গ্রাফ দুরকম হওয়ায়, সেটা দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। ঋতব্রত ও সৌরসেনীর জুটিকে এর আগে ‘জেনারেশন আমি’-তে দর্শকের পছন্দ হয়েছিল। ঠিক তেমনই সাদা রঙের পৃথিবীর একমাত্র ভালো লাগার মতো জায়গা এই দুজনের খুনসুটি।

আদর্শ টেলিমিডিয়া এবং অমিত আগরওয়াল দ্বারা উপস্থাপিত এবং সুশান্ত সেনগুপ্ত, শ্রাবনী পাল, রাজর্ষি দে প্রযোজিত এই ছবিতে বাংলার ১৯ জন প্রথম সারির অভিনেতা রয়েছেন। গল্পটি বিধবাদের দুর্দশা, তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ এবং তাদের একটি বিধিনিষেধমূলক জীবনধারায় আবদ্ধ করে এমন বহু পুরনো প্রথা তুলে ধরবে।

এই ছবিতে তারকা কাস্ট এবং কলাকুশলীরা রয়েছেন: শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি, সৌরসেনী মৈত্র, অরিন্দম শীল, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, স্নেহা চ্যাটার্জি, মল্লিকা ব্যানার্জি, দেবলীনা কুমার, অনন্যা ব্যানার্জি, রিচা শর্মা, সোহিনী গুহরায়, দেবশ্রী গাঙ্গুলী, ঐন্দিলা বোস, অরুনাভ দে রয়, ঈশান মজুমদার, মোনালিসা ব্যানার্জী, অনুরাধা চৌধুরী। অতিথি হিসেবে রয়েছেন শুভ্রজিৎ মিত্র। সংগীতায়োজন করেছেন আশু চক্রবর্তী।ছবিটি ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪-এ আন্তর্জাতিকস্তরে সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here