দেশেরসময় ওয়েবডেস্কঃ প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তির কোনও জায়গাই নেই। সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় । তিনি বলেন, রবিবার যেটুকু অসামঞ্জস্য ছিল, তা সংশোধন করে জেলায় জেলায় চূড়ান্ত তালিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

পুরসভার ভোট কার্যত মিনি বিধানসভা ভোটের মতো। তাই সকলেই প্রার্থী হতে চান। কিন্তু দলের পক্ষে সকলকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। তবে সকলে যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে ভোটের ময়দানে সমন্বয়ের পথেই কাজ করেন সে আহ্বানও জানান পার্থ।

অন্যদিকে এদিনই উত্তর প্রদেশে যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী যে তালিকা তৈরি করেছেন সেটাই চূড়ান্ত। কোনওভাবেই তালিকায় কোনও বদল যে হবে না, তাও স্পষ্ট করে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। অর্থাৎ শুক্রবার থেকে জেলায় জেলায় প্রার্থী নিয়ে যে ডামাডোল চলছে, তার জন্য কোনওভাবেই দল অবস্থান থেকে সরবে না এদিন তা পরিষ্কার করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।

সাংবাদিক সম্মেলনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন, “জেলার সভাপতি ও চেয়ারম্যানদের ইতিমধ্যেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও যে অসামঞ্জস্য ছিল সেগুলিও দূর করে গতকালই আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করে পাঠিয়ে দিয়েছি। ফলে প্রার্থী তালিকা নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি থাকা উচিৎ নয়। এটা ঠিকই, এত বড় একটা নির্বাচন, প্রায় মিনি বিধানসভার মতো নির্বাচন সেখানে অনেকেই প্রার্থী হতে চান। কিন্তু প্রার্থী তো সকলকে করা সম্ভব নয়।”

দলের নেতা কর্মীদের প্রতি দলের মহাসচিবের বার্তা, “যাদের মনে অসন্তোষ হয়েছে, তাদের সবাইকেই বলব দলের নেত্রী এক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পতাকা এক, আমাদের চিহ্ন ঘাসের উপর জোড়াফুল এক। একতা, ঐক্যবদ্ধতার সঙ্গে দলীয় প্রার্থীর পিছনে আপনারা সকলে একত্রিত হয়ে দাঁড়াবেন এবং দলকে যে ভাবে যে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড় করিয়েছেন তা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। গতবারের থেকে বেশি আসনেই এবারও তৃণমূলকে জেতানোর জন্য রাজ্যবাসীর কাছে অনুরোধ করব।”

একইসঙ্গে এদিন ভোটকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সমন্বয়েরকারী নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। মূলত জেলা সভাপতি ও অন্যান্য পদাধিকারীর সঙ্গে কথা বলে ভোট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবেন এই কোঅর্ডিনেটররা।

উত্তর ২৪ পরগনার সকলের সঙ্গে কোঅর্ডিনেট করবেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং পার্থ ভৌমিক।

হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমানের দায়িত্বে পুলক রায়।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার দায়িত্বে শুভাশিস চক্রবর্তী, অরূপ বিশ্বাস।

ফিরহাদ হাকিম দেখবেন মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর।

কোচবিহার ও পূর্ব মেদিনীপুরের দায়িত্বে সুব্রত বক্সী।

ঝাড়গ্রামের দায়িত্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া মলয় ঘটকের হাতে।

আলিপুরদুয়ার দেখবেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও মলয় ঘটক।

জলপাইগুড়িতে থাকবেন সৌরভ চক্রবর্তী,

পশ্চিম মেদিনীপুরের ভার অজিত মাইতি ও মানস ভুঁইয়্যার হাতে।

দক্ষিণ দিনাজপুরে শশী পাঁজা,

দার্জিলিয়ে গৌতম দেব, নদিয়ায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুখেন্দুশেখর রায় ও ব্রাত্য বসু।

প্রসঙ্গত, রবিবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তৃণমূলকে সময়োপযোগী করার বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গে তিনি আইপ্যাকের কথাও বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, আইপ্যাক বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু পুরভোটে দুরকম প্রার্থী তালিকা, পাসওয়ার্ড বিতর্কে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে শাসকদলে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, আইপ্যাক নাকি তৃণমূলের সঙ্গে চুক্তিই প্যাকআপ করে নিয়েছে সেইপ্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট করে দিলেন, পার্টি আর আইপ্যাক এক নয়। তিনি পার্টি করেন। আইপ্যাকের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

এদিন নাকতলার বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করেন পার্থ। সেখানেই তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আই প্যাকের সঙ্গে যারা সম্পর্ক রেখেছে তারাই বলতে পারবেন ওই ব্যাপারে। আমি আই প্যাকের সঙ্গে ডিল করি না। আমি পার্টির সঙ্গে থাকি।’


সোমবার বিকেলে লখনউ যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকেও আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার গুঞ্জন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা পার্টির অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এনিয়ে এখানে আমি কিছু বলব না।’ সেইসঙ্গে প্রার্থী তালিকা নিয়েও মমতা পষ্টাপষ্টি বলে দেন, পার্থ-বক্সীদের তালিকাই চূড়ান্ত তালিকা।

গতকাল টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অভিষেক দেখাতে চেয়েছিলেন, বক্সী-পার্থদের তালিকাতেও ভুল রয়েছে। কেমন ভুল? যেমন বজবজের দুটি ওয়ার্ডের উদাহরণ দিয়ে অভিষেক বলেন, একটি ওয়ার্ডে মৃত মানুষকে প্রার্থী করে দেওয়া হয়েছে। অন্য একটি ওয়ার্ড যা এবার তফসিলি মহিলা সংরক্ষিত সেখানে পুরুষ প্রার্থী দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও অভিষেকের এই প্রসঙ্গ নিয়ে পার্থ কোনও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেননি। তিনি বলেন, ‘দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here