দেশের সময় : রাজনীতির ময়দানে তাঁরা যুযুধান দুই শিবিরের। একজন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপির ঘর ছুঁয়ে ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে। অন্যজন তৃণমূলের সঙ্গে সুসম্পর্কের স্মৃতিকে অতীত করে এখন মোদি-শাহের দলের বঙ্গ ব্রিগেডের সৈনিক। বর্তমানে দু’জনেই নিজেদের দলের জেলা সভাপতি। দু’জনেই নিজেদের পদ ধরে রাখতে মরিয়া। আর তাই দু’জনের কেউই একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছুড়তে এতটুকু পিছপা হচ্ছেন না। কখনও সাংবাদিক সম্মেলনে, কখনও আবার শহরে মাইক বেঁধে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানাচ্ছেন পরস্পরের বিরদ্ধে। একজন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। অন্যজন বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সাধারণ সম্পাদক থেকে সদ্য সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া দেবদাস মণ্ডল। এই দুই নেতার শব্দবাণে রীতিমতো সরগরম বনগাঁ। দুই নেতার দ্বৈরথে রীতিমতো তপ্ত এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ।

সম্প্রতি বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদে রামপদ দাসকে সরিয়ে বসানো হয়েছে দেবদাসকে। তারপর থেকেই যে কোনও মঞ্চে একসময়ের ‘বন্ধু’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎকে তুলোধনা করতে ছাড়ছেন না তিনি। দলের সভাপতি হওয়ার পরই সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্বজিতের নাম না করে দেবদাস বলেন, বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ ঠিক করা হয়েছে ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে। যে সবচেয়ে বেশি টাকা দিতে পেরেছেন, তিনিই সভাপতি হতে পেরেছেন। তাঁর এই অভিযোগের তির ছিল বিশ্বজিতের দিকেই। শুধু তাই নয়, কয়েকদিন আগে বনগাঁ শহরে মিছিল করে বিজেপি।

সেখানেও বিশ্বজিৎকে উদ্দেশ্য করে দেবদাস বলেন, ও তো একজন স্কুলের অশিক্ষিত কর্মী। কী করে বাড়িতে দু’কোটির বেশি খরচ করে মন্দির বানালেন? বাড়িই বা করলেন কীভাবে? সিন্দ্রাণীতে গিয়ে তৃণমূলকে বিঁধে তোপ দাগেন দেবদাস। বলেন, তৃণমূল এখন ব্যবসায়িক দলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বজিৎ নিজে বিধায়ক। বউমাকে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এবং ছেলেকে জেলা পরিষদের আসনে দাঁড় করিয়েছেন শুধুমাত্র ব্যবসা করার জন্য।

তবে দেবদাস একতরফা বলে চলেছেন এমনটা নয়। মুখ বন্ধ করে বসে নেই বিশ্বজিৎও।

পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলনে দেবদাসের নাম না করেই তিনি বলেন, একটা ‘অন্ধকার জগতের’ লোক, ‘দুষ্কৃতী’, ‘অসামাজিক লোক’ কী বলছেন, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।

কয়েকদিন আগেই বিজেপিকে নিজেদের শক্তি বুঝিয়ে দিতে বনগাঁ শহরে পাল্টা মিছিল করে তৃণমূল। ত্রিকোণ পার্ক থেকে শুরু হওয়া ওই মিছিল যশোর রোড হয়ে শেষ হয় মতিগঞ্জ ঘড়ির মোড়ে। ওই মিছিল থেকে দেবদাসকে একহাত নেন তৃণমূল নেতারা। যেখানে সভা করা হয়, তার কাছেই দেবদাসের বাড়ি। ওই সভা থেকে দেবদাসের নাম না করে বিশ্বজিৎ বলেন, ২০১১ সালের পর বনগাঁ শহর সন্ত্রাস ও দুষ্কৃতীমুক্ত করা হয়েছে। এখন একজন আবার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছেন বনগাঁয়। এতটা সোজা নয়।

দেবদাসের নাম না করেই ওই সভা থেকে তোপ দাগেন বিশ্বজিৎ। বলেন, সমাজবিরোধীরা সাবধান। যদি কেউ বনগাঁ শহরে অসামাজিক কার্যকলাপ চালানোর চেষ্টা করে, তাহলে বনগাঁর মানুষ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। বনগাঁর শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সেই সমাজবিরোধীর বাড়ি-ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে। তার দায় আমাদের থাকবে না। তখন কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়েও কিছুই করতে পারবেন না।

দুই নেতার এই শব্দবাণে বনগাঁয় সাধারণ মানুষের মনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, সামনেই লোকসভা নির্বাচন। এভাবে দুই শিবিরের নেতারা শব্দবাণ ছুড়তে থাকলে, বড় ধরনের গোলমালও বাধতে পারে। তখন কী হবে। সেই গোলমালের মধ্যে পড়ে উলুখাগড়ার মতো সাধারণ মানুষের হয়তো জীবন যাবে। বনগাঁর পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে। এটা মোটেই ঠিক নয়।

বনগাঁর তৃণমূল কাউন্সিলর পাপাই রাহা বলেন, বিজেপির এক সমাজবিরোধী একসময় মানুষজনকে ভয় দেখিয়েছে। মানুষজনের বাড়িঘর লুট করেছে। এখন ফের দুষ্কৃতীমূলক কার্যকলাপ শুরু করেছে। বনগাঁতে দুষ্কৃতীদের জায়গা নেই। এটা যেন তিনি ভালোভাবে মনে রাখেন। বিশ্বজিতের অভিযোগ, এক ব্যক্তি ওই সমাজবিরোধীকে জমি বিক্রি করে দিতে বলেছিল। সে জমি বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করে দিল্লিতে ফ্ল্যাট কিনেছে।

এদিকে, গাড়ি-বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া নিয়ে বিশ্বজিতের বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন দেবদাস। যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে দেখেনি ‘দেশের সময়’। দেবদাসের বক্তব্য, তৃণমূল নেতার বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, আমার উপর হামলার ছক কষা হচ্ছে। যদি আমি বা আমার বাড়ি আক্রান্ত হয়, তাহলে দায়ী থাকবে তৃণমূল।

বিশ্বজিতের বক্তব্য, আমার বিরুদ্ধে কেউ রাজনৈতিকভাবে বক্তব্য রাখতে পারেন। কিন্তু আমার ছেলে এবার প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধেও অশালীন কথা বলা হচ্ছে। এসব মেনে নেওয়া যায় না। দেবদাসের দাবি, আমি কোনও ব্যক্তি আক্রমণ করিনি। একটা পরিবার থেকে তিন জন ভোটে দাঁড়িয়েছেন। সেটাই বলেছি। আর এটা তো ঠিকই, তৃণমূল একটা ব্যবসায়িক দল। টাকা দিতে না পারলে পদ পাওয়া যায় না। পঞ্চায়েত ভোটে প্রধান নির্বাচনে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।   

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here