মূলশব্দ: Temple-directory (মন্দির-পঞ্জি),Temple-tourism (মন্দির-পর্যটন), Hindu State (হিন্দুরাষ্ট্র)

ভারতবর্ষ মন্দির ও মহন্তের দেশ বলে পরিচিত। পৃথিবী নামক একটি বৃহৎ আলয়ে ভারতবর্ষ হচ্ছে তার ঠাকুরঘর। ভারতবর্ষের মতো দেবালয়-দেউলের দেশে মন্দির কেন্দ্রিক পর্যটন বহু জায়গায় রয়েছে। তাতে রয়েছে বহু মানুষের কর্মসংস্থান, কিন্তু তা কেবল বিখ্যাত মন্দিরগুলিকে কেন্দ্র করেই। তার বাইরেও দেশের আনাচে-কানাচে বহু উল্লেখযোগ্য স্থান রয়ে গেছে — যেখানে মন্দিরের আধিক্য, অবশেষ এবং তার সুস্পষ্ট ইতিহাস ও প্রাচীনত্ব। সেই মন্দির-ক্লাস্টারগুলির প্রবেশদ্বারকে সংযোজন করে আগামী দিনে মন্দির-পর্যটন স্থানীয়ভাবে দানা বাঁধতে পারে; মন্দিরকে কেন্দ্র করে হতে পারে বহু মানুষের রুজিরোজগার, ধর্ম-সংযোগ। তাছাড়া হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছেন যারা, তারা কি ভারতবর্ষ জুড়ে মন্দির-মেলা-উৎসবের যাবতীয় জরিপ করিয়েছেন? পঞ্চাশ বছর আগে বাংলার সীমান্তবর্তী জেলার নানান জায়গায় যে উৎসব, পালপার্বণ ও মেলা মিলন-মেজাজে বসতো, আজ তার কী হাল দেখা হয়েছে? কোথায়, কোন হিন্দু উৎসব ও পালপার্বণ একেবারেই বন্ধ হল! পশ্চিমবঙ্গ সমেত সারা ভারতের সর্বত্র মন্দির-দেবালয়গুলির তথ্য ভাণ্ডার নিয়ে টেম্পল-ডাইরেক্টরী তৈরি হোক। টেম্পল-ডেটাবেস সম্ভবত কারো কাছেই নেই, তৈরি করার উদ্যোগও চোখে পড়ে না। অথচ সময়ের নিরিখে কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের মন্দিরগুলি দেশের সমৃদ্ধ ধর্মীয়, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। ভারতে 2 মিলিয়নেরও বেশি মন্দির রয়েছে, যার মধ্যে অনেকগুলি সারা বিশ্বের অসংখ্য ভক্তকে আকর্ষণ করে। আমরা, ভারতীয়রা, আধুনিকতার এই যুগে কীভাবে আমাদের সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান এবং ধর্মকে রক্ষা করে জীবনচর্যায় গ্রহণ করতে হয় তা জানি।

প্রাচীন মন্দিরের গুরুত্ব

ভারতে, মন্দিরগুলি ছিল সামাজিক জীবনের ভিত্তি। প্রাচীনকাল থেকে মন্দিরগুলি বাণিজ্য, শিল্প, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং সামাজিক জীবনের কেন্দ্র ছিল। স্থানীয় মন্দির ছিল সম্প্রদায়ের কেন্দ্রবিন্দু। স্বাস্থ্য, সম্পদ, বংশধারা-রক্ষা, নির্দিষ্ট বাধা অপসারণ অথবা মূল্যবান কিছু অর্জনের জন্য দেব-দেবীদের কাছে প্রার্থনা করেছিল ভারতবাসী। মন্দির চত্বরে মানুষ মিলিত হয়েছিল, সংবাদ এবং মতামত বিনিময় করেছিল, অসুবিধাগুলি ভাগ করেছিল, একে অপরের পরামর্শ চেয়েছিল এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের পরিকল্পনা করেছিল — সে এক সীমাহীন গল্প!

দেশের প্রতিটি রাজ্যে নিজস্ব স্বাতন্ত্র ও ঐতিহ্য রয়েছে। রয়েছে রাজ্যগুলির সমৃদ্ধ ইতিহাস। অসংখ্য মন্দির রয়েছে যা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে এসেছে। হিন্দুধর্ম, জাতির উন্নয়নে, তাদের বিশ্বদর্শন গঠনে এবং তাদের আধ্যাত্মিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। ভারতে মন্দিরগুলি যেন ধর্মীয়
স্থান-মাহাত্ম্যের চাইতেও বেশি। ভারতের অনেক ধনী মন্দির প্রতি বছর সমগ্র বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটকদের আকর্ষণ ও আমন্ত্রণ করে।

মন্দিরগুলি ভারতবাসীর অনুপম অস্মিতা। ব্যক্তি ও ব্যষ্টির জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি এবং সুখের খোঁজে প্রার্থনা করে মন্দিরের গর্ভগৃহে, নাটমঞ্চে, মন্দির চৌহদ্দির নান্দনিক উদ্যানে। মন্দিরগুলির মধ্যে অনেকগুলিই স্থাপত্যের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। তাদের মধ্যে অনেকগুলি প্রাচীনকালে নির্মিত হয়েছিল। এই মন্দির রচনার প্রেক্ষাপটে আকর্ষণীয় গল্প রয়েছে, যা শিকড়-সংস্কৃতির, লোকসংস্কৃতির উজ্জ্বল উদ্ধার৷ মন্দিরগুলির মধ্যে অনেকগুলি এতটাই ধনী যে সেগুলি বিশাল জমি এবং ধনসম্পত্তির মালিক। অনেক মন্দিরে মূল্যবান জিনিসপত্র এবং প্রাচীন জিনিসের ব্যাপক সংগ্রহ রয়েছে যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম সংরক্ষিত হয়ে এসেছে। বহু মন্দিরের গোপন গৃহে বহু মূল্যবান পুঁথি শালুতে মুড়ে আজও সংরক্ষিত আছে, যার পাঠোদ্ধার হলে ইতিহাস রচনার মূল্যবান উপাদান পাওয়া সম্ভব হবে৷

মন্দির-কেন্দ্রিক শক্তিশালী অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

তীর্থযাত্রীদের পথ পরিক্রমার পাশাপাশি পর্যটন-সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলির বিকাশ অবশ্যই সম্ভব। গবেষণায় জানা গেছে একদা প্রাচীন মন্দিরগুলি ছিল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির বার্টন স্টেইন 1960 সালে ‘দ্য ইকোনমিক ফাংশন অফ এ মিডিইভাল সাউথ ইন্ডিয়ান টেম্পল’ নামে একটি মূল গবেষণাপত্র লিখেছিলেন, যা এশিয়ান স্টাডিজ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল, তার মধ্যে এমনই সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশিত হয়েছে দেখা যায়।

ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অফিস (এনএসএসও) দ্বারা প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ৫৫ শতাংশ হিন্দু, যারা ধর্মীয় তীর্থযাত্রায় যান, তারা মাঝারি এবং ছোট আকারের হোটেলে অবস্থান করেন। ধর্মীয় ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন জন প্রতি খরচ হয় ২৭১৭ টাকা, সামাজিক ভ্রমণের খরচ প্রতি দিন জন প্রতি ১০৬৮ টাকা, এবং শিক্ষাগত ভ্রমণের খরচ প্রতি দিন জন প্রতি ২২৮৬ টাকা বলে জানা গেছে। এইভাবে দৈনিক ব্যয় ১৩১৬ কোটি টাকা এবং ধর্মীয় ভ্রমণে বার্ষিক ব্যয় ৪.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা।

এনএসএসও সমীক্ষা অনুসারে, মন্দির অর্থনীতির মূল্য ৩.০২ লক্ষ কোটি টাকা, বা প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার এবং জিডিপির ২.৩২ শতাংশ। বাস্তবে, এটি আরও বড় হতে পারে। পুজোর ফুল, তেল-সিঁদুর, প্রদীপ, সুগন্ধি ধূপ, মালা-চুড়ি, বিগ্রহের ছবি এবং পুজোর পোশাক সবই এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অনানুষ্ঠানিক শ্রমের একটা বড় অংশ মন্দির-দেবালয়গুলিকে চালিত করে। এটি অনুমান করা হয় যে ভ্রমণ এবং পর্যটন শিল্প একাই ভারতে ৮০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে নিযুক্ত করেছে, এতে রয়েছে বছরে ১৯ শতাংশের বেশি বৃদ্ধির এবং তার অঙ্কমূল্য শুধুমাত্র গত বছরেই ২৩৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব।

মন্দির পরিদর্শনের বৈজ্ঞানিক কারণ

ভারত জুড়ে বিভিন্ন মাপের হাজার হাজার মন্দির রয়েছে, তার অনুপম বৈচিত্র্য। তার সবগুলি বৈদিক উপায়ে নির্মিত বলে মনে করা হয় না। কিংবদন্তি এই, প্রাচীনকালে এক একটি মন্দির এমন জায়গায় অবস্থিত হওয়া উচিত বলে মনে করা হত যেখানে পৃথিবীর চৌম্বকীয় তরঙ্গ পথটি ঘন হয়ে যায়। একটি স্থানের শক্তি ভাগফল কীভাবে পরিমাপ করা হয়েছিল তখন তা জানা যায়নি। হতে পারে ভারতবর্ষের প্রাচীন সাধুদের প্রাচীন বিজ্ঞানের তহবিলগুলিকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি, বা হারিয়ে ফেলা হয়েছে। এই প্রাচীন বিজ্ঞান হয়তো প্রাচীন পুঁথিগুলিতে সূত্রাকারে লেখা আছে, তা আজও নানান মন্দিরে সংরক্ষিত আছে।

মন্দিরগুলি কি যেখানে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছিল! মনে হয় না। মন্দিরগুলির অবস্থান যেখানে, সেখানে চৌম্বকীয় মেরু থ্রাস্টের এবং বৈদ্যুতিক তরঙ্গ বিতরণের ইতিবাচক শক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। যাবতীয় বৈজ্ঞানিক হিসেব করেই মূল মূর্তিটি মন্দিরের মূল কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছিল। আর প্রতিমা স্থাপনের পরেই মন্দিরের কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। দেবস্থান যেখানে সেখানেই পৃথিবীর চৌম্বক তরঙ্গ সর্বাধিক পাওয়া যায়। মূর্তির নীচের ধাতব প্লেটটির গুরুত্বও অসীম। বিশ্বাস করা হয় যে এই তামার প্লেট চৌম্বকীয় শক্তি শোষণ করে এবং চারপাশে বিকিরণ করে। লক্ষ্য এই, মন্দির পরিদর্শনকারী ভক্তমণ্ডলী চৌম্বকীয় তরঙ্গের সদর্থকতা গ্রহণ করবেন। এটি একটি খুব ধীর প্রক্রিয়া এবং একজন নিয়মিত দর্শক অবশেষে ইতিবাচক ভাব-অনুভব করতে শুরু করবেন।

মন্দিরের কাজে পবিত্রবারি (জল), দই, মধু, দুধ, শর্করা এবং নারকেলের জল যা দিয়ে আমরা তামার মূর্তি পরিষ্কার করি তারও সুনির্দিষ্ট কারণ আছে। অমৃতকে আশীর্বাদ করার বিশ্বাস আছে তাতে। এছাড়াও, তুলসী পাতা এবং কর্পূর সমন্বিত পবিত্র জল সর্দি এবং কাশির মতো অসংখ্য রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

প্রধানমন্ত্রী মন্দির পর্যটন শিল্পকে যেভাবে দেখেন

সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী পর্যটন সম্পর্কিত একটি বাজেট-উত্তর ওয়েবিনারে বক্তৃতা করেছিলেন যখন তিনি রামায়ণ সার্কিট, বুদ্ধ সার্কিট, কৃষ্ণ সার্কিট, উত্তর-পূর্ব সার্কিট ইত্যাদি এবং সমস্ত সাধুদের তীর্থযাত্রার কথা উল্লেখ করেছিলেন। দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে কাজ করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চারধাম যাত্রা, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ যাত্রা, এবং ৫১ শক্তিপীঠ যাত্রা ইত্যাদি ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থা যেমন সেইকাজের সহায়ক হবে, তেমনই জাতীয় ঐক্যকেও শক্তিশালী করবে। দেশের অনেক বড় শহরের পুরো অর্থনীতি ধর্মযাত্রার উপর নির্ভরশীল ছিল। তীর্থযাত্রার প্রাচীন ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও আধুনিক মানদণ্ডে তার পথ উন্নত করার এবং সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের অভাব ছিল এতগুলো বছর, তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্দির-জনপদ যোগাযোগের এই পুণ্য-পথের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন তিনি। বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির মূল কারণ ছিল স্বাধীনতার পরের দশকগুলোতে শত শত বছরের দাসত্ব এবং রাজনৈতিক অবহেলা চালিয়ে যাওয়া। আশার কথা আজকের ভারত এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী বলেছেন, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ফলে পর্যটকদের আকর্ষণ বরাবরই বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, সংস্কারের আগে আনুমানিক ৮০ লক্ষ মানুষ বছরে বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ ধাম পরিদর্শন করেছিলেন, কিন্তু পর্যটকদের সমাগম গত বছর ৭ কোটি ছাড়িয়েছে। পুনর্গঠনের কাজ শেষ হওয়ার আগে মাত্র ৪-৫ লক্ষ ভক্ত কেদারনাথ দেখতে গিয়েছিলেন, এখন সেই সংখ্যা অনেক গুণ বেশি। একইভাবে, ৮০ হাজার তীর্থযাত্রী মা কালিকে দেখতে গুজরাটের পাভাগড়ে যান, সংস্কারের আগে যেতেন মাত্র চার থেকে পাঁচ হাজার। সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণের ফলে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ে। এবং বেশি পর্যটক মানেই বেশি কর্মসংস্থান, আত্মনির্ভরতা ও আত্মকর্মসংস্থানের আরও বেশি সুযোগ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মন্দির-সম্পদকে নিয়ে আমরা কি করতে পারি?

বাংলার বুকে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাঙালী যুবক- যুবতীরা ভারতের অন্য রাজ্যে কর্ম সূত্রে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কলকাতার একজন প্রবীণ সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, বাংলা থেকে মোট পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩৮ লক্ষ হবে। টেম্পল ট্যুরিজম গতি পেলে, বাংলার মন্দির দেবালয়গুলি নিয়মিত সংস্কার সাধিত হবে, সাজসজ্জা ও অলংকরণ বাড়বে, তাতে বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে। মন্দিরের সৌধ নির্মাণ, অলংকরণ ও সংস্কারের কাজ হিন্দু কারিগর, মিস্ত্রি, আবাসন শিল্পীরাই করুন, যাদের মন্দির সম্পর্কে শ্রদ্ধাভক্তি আছে।

একটা বড় ভূমিকা থাকছে প্রবুদ্ধসমাজেরও। সমাজের এই শিক্ষিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন রাষ্ট্রবাদী সংগঠনের সহযোগিতা নিয়ে নির্মাণ করতে পারেন আঞ্চলিক মন্দির পঞ্জিকা। এগিয়ে আসতে পারে সংস্কার ভারতী ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত অভিজ্ঞ সংগঠন।

কি থাকবে সেই মন্দির পঞ্জিতে?

মন্দির-পঞ্জিকার জন্য যে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে, তা এইরকম।
১. মন্দিরের নাম,
২. অবস্থান ও ঠিকানা, যোগাযোগের ফোন নম্বর এবং ই-মেইল (যদি থাকে),
৩. কত সালে কবে/কোন তিথিতে প্রতিষ্ঠা,
৪. কোন কোন বিগ্রহের অধিষ্ঠান,
৫. মন্দিরের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত, কোন প্রাচীন/ ধর্মীয়/ বিখ্যাত গ্রন্থে মন্দিরের প্রাচীনত্বের উল্লেখ রয়েছে,
৬. কতটা পরিমাণ জায়গা/কক্ষ নিয়ে মন্দির, মন্দির ছাড়া আর কী কী সম্পদ (গোশালা/পুষ্করিণী/উদ্যান/বিল্ডিং/গ্রন্থাগার) ইত্যাদি আছে,
৭. মন্দিরের পরিচালন ব্যবস্থা/ পরিষদ/ বর্তমান মহন্ত/সন্ন্যাসীবৃন্দ,
৮. কোনো বিশেষ সেবাকাজে অংশগ্রহণ করা হলে তা কী কী,
৯. বার্ষিক বিশেষ অনুষ্ঠান/তিথি পালন/পূজা-উৎসব/ধর্মসভা/মেলার আয়োজন,
১০. মন্দিরের ভোগ নিবেদন, প্রসাদ পাবার জন্য কী ব্যবস্থা, কতজনের প্রসাদ পাবার আয়োজন, কীভাবে বুকিং,
১১. মন্দির চত্বরে বিশেষ সামাজিক অনুষ্ঠানের অনুমতি ও আয়োজন আছে কিনা, যেমন অন্নপ্রাশন, উপনয়ন, বিবাহ, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি,
১২. মন্দিরের নিজস্ব হলঘর/নাটমঞ্চ/মুক্তমঞ্চ আছে কিনা, কতজনের ব্যবস্থা, তা ভাড়ার অনুমতি রয়েছে কিনা,
১৩. মন্দিরে টাকা-পয়সা, দান সামগ্রী দেবার নিয়মাবলী,
১৪. অনুমতি সাপেক্ষে মন্দির ও তার বিগ্রহের ছবি,
১৫. গৃহস্থের বাড়িতে মন্দিরের ব্যবস্থাপনায় ধর্মসভা/কীর্তন/সামাজিক অনুষ্ঠান করানোর সুবিধা রয়েছে কিনা ইত্যাদি।
১৬. মন্দির সংক্রান্ত কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও নিদর্শন, ইত্যাদি।

এছাড়াও জেনে নিতে হবে মন্দিরের যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন, বর্তমানে কতটা চওড়া রাস্তা, মন্দির-পর্যটন হলে বিভিন্ন শকট, যানবাহনের সাময়িক গ্যারেজ করার সম্ভাব্য উপায় কী কী হতে পারে। এলাকার বিশেষ উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করার সুযোগ আছে কিনা, স্থানীয় লোকশিল্পের নিদর্শন প্রদর্শন ও বিপণনের সুবিধা আছে কিনা।

মন্দির-ক্লাস্টারকে নিয়ে পর্যটন হলে স্থানীয় মানুষ কীভাবে উপকৃত হতে পারবেন তাও অনুমান করা যেতে পারে।
সাধারণ মানুষের এ সম্পর্কে ধারণা আছে কিনা, তারা অজ্ঞ বা আগ্রহী কিনা, স্থানীয় প্রশাসক এ ব্যাপারে কখনও কোনো উদ্যোগ অতীতে নিয়েছেন কিনা, আগামী দিনে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কিনা সবটাই লিপিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

হিন্দু-রাষ্ট্র নির্মাণ করতে প্রথম যা প্রয়োজন তা হল হিন্দুদের হিন্দু বানানো। সকল সনাতনীর জীবনচারিতায় যতক্ষণ না পর্যন্ত শিকড় সন্ধানী ভাব আসছে ততক্ষণ হিন্দুরাষ্ট্রদর্শন কোন ভাবেই বাস্তবায়িত হতে পারে না। চাই মন্দির-কেন্দ্রিক সমাজ। মন্দির এ রাজ্যকে যোগীজীর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের যোগান দিতে পারে। স্বামী বিবেকানন্দ একসময় এদেশের উপযুক্ত নারীশক্তির সন্ধান না পেয়ে বিদেশী জাতির কাছ থেকে খুঁজে বার করে এনেছিলেন ভগিনী নিবেদিতাকে। কারণ স্বামীজির মতে ভারতে তখন জাগরিত সিংহীর মতো নারীশক্তির জন্ম হয় নি৷ বাংলায় পিছুটানহীন, সন্ন্যাসীসম নেতৃত্বের অভাব যদি অনুভূত হয়, তা মন্দির থেকে বেরিয়ে আসবে কিনা, ভবিষ্যৎ-ই বলবে। যদিও সন্ন্যাস আসে মনে, হয়তো পোষাকে নয়, দশনামেও নয়; রাজনৈতিক সন্ন্যাসী তিনিই, যিনি তার পুত্র, কন্যা, ভাইপো, ভাইঝি, জামাই, ভগ্নিপতি, দৌহিত্রকে দলের বকলমা দিয়ে বংশগতির ধারা বজায় রাখবেন না। নিঃস্বার্থ, নীরব অথচ বীরত্বের সঙ্গে মন্ত্রক চালাতে পারেন বিশুদ্ধ ত্যাগী মানুষ। বীর সন্ন্যাসীকে রাজনৈতিক দুনিয়াতেও দেখা যাবে। কিন্তু সেই সম্পর্ক আমরা তৈরি করেছি কি! শাস্ত্রে বলে ‘ধর্মো রক্ষতি রক্ষিতঃ’। তাই মন্দিরে চলুন, ধর্মকে রক্ষা করুন, ধর্মও আপনাকে রক্ষা করবে। মন্দির-পঞ্জিকা, মন্দির-পর্যটন — এই সবকিছুর মূল নিহিত রয়েছে ধর্মরক্ষার উপায় খোঁজার পথ অন্বেষণ করতে। তাই মন্দির পঞ্জিকার রচনার্থে হয়তো একজন এগিয়ে আসলে আমাদের এই চিন্তন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না, কিন্তু এক একজন এগিয়ে আসলে তা অবশ্যম্ভাবী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here