দেশের সময় ওয়েবডেস্ক : সন্দেশখালির ‘বাঘ’ খাচাবন্দি হতেই পদক্ষেপ করল তৃণমূল কংগ্রেস । দল থেকে সাসপেন্ড করা হল শেখ শাহজাহানকে । বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকে বসে এ কথা ঘোষণা করলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, ব্রাত্য বসু, কাকলি ঘোষ দস্তিদাররা। আগামী ৬ বছরের জন্য তৃণমূলের থেকে সাসপেন্ড করা হল শেখ শাহজাহানকে। ডেরেকের বক্তব্য, ‘দুই ধরনের দল থাকে। এক ধরনের রাজনৈতিক দল থেকে যারা শুধু মুখেই বলে যায়। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস যা বলে তা করে দেখায়। এটা আমরা এই প্রথমবার নয়। অতীতেও করেছি।’

শুধু দল থেকে বহিষ্কার করাই নয়, এর পাশাপাশি অন্যান্য যে পদে শাহজাহান রয়েছেন, সেগুলির বিষয়েও শীঘ্রই কড়া পদক্ষেপের চিন্তাভাবনা রয়েছে তৃণমূলের। ব্রাত্য় বসু এদিন বলেন,’যে সরকারি পদ যে সামান্য অবশিষ্ট পড়ে রয়েছে, সেটার বিষয়েও কী পদক্ষেপ হবে, তা খুব শীঘ্রই জানিয়ে দেব। বুঝতেই পারছেন, পদক্ষেপ কোন দিকে যেতে চলেছে।’ একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় এজেন্সি কেন এতদিন তাঁকে গ্রেফতার করতে পারেনি, সেই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ব্রাত্য বসু। পাশাপাশি সারদা কর্তাকে সুদীপ্ত সেনকেও যে এই রাজ্য পুলিশই গ্রেফতার করেছিল, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন ব্রাত্য।

কলকাতায় বসে যখন তৃণমূল নেতারা এই সাংবাদিক বৈঠক করে  শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে দলের কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখনই জেলা থেকে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসে। জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগণার জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে শাহজাহানকে। প্রসঙ্গত, ইডির উপর হামলার ঘটনার পর থেকেই মৎস্য কর্মধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী নিজে। এবার গ্রেফতারির পর পাকাপাকিকে কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল শেখ শাহজাহানকে।

শাহজাহানের শাগরেদ আমির আলিও পুলিশের জালে, ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেফতার । বসিরহাট পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে আমিরের খোঁজ পায় তারা। সঙ্গে সঙ্গে একটি টিম ঝাড়খণ্ড গিয়ে তাকে পাকড়াও করে। আমিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। সন্দেশখালির মানুষ জানিয়েছেন, উত্তম সর্দার এবং শিবু হাজরার সঙ্গে মিলে এলাকায় কার্যত তাণ্ডব চালাত আমির আলি। সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। শাহজাহানের পর সেও গ্রেফতার হওয়ায় খুশি সন্দেশখালির মানুষ। বসিরহাট আদালত আমির গাজি ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।

বিগত প্রায় ২ মাস ধরে সন্দেশখালির ত্রাসের গ্রেফতারির খবর শোনার অপেক্ষায় ছিল সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার সেই খবর আসার পর তৃণমূল ভবন থেকে আরও একটি বড় খবর আসে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, দুই সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং ডেরেক ও ব্রায়েন জানান, তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে ছয় বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। 

আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার আবার সন্দেশখালি গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে রওনা হওয়ার আগেই তিনি জেনে গিয়েছেন, সন্দেশখালিকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও তাকে ‘গ্রেফতার’ বলে মানতে নারাজ শুভেন্দু। সন্দেশখালি যাওয়ার পথে তিনি বলেন, ‘‘এটা গ্রেফতার নয়, মিউচ্যুয়াল অ্যাডজাস্টমেন্ট। রাজকীয় ভাবে থাকবেন শাহজাহান। মোবাইল ফোনে এলাকা কন্ট্রোল করবেন।’’ বিজেপি যে সন্দেশখালিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে, তা বোঝাতে শুভেন্দু বলেন, ‘‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়।’’

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর রাজ্যে থাকার কথা শনিবারেও। সন্দেশখালির ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে গড়াচ্ছিল, তাতে বিজেপি ভেবে রেখেছিল, কেন শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদী। কিন্তু মোদীর সফরের আগের দিনই গ্রেফতার হয়ে গেলেন শাহজাহান! তবে এমনটা যে হতে পারে, সে ইঙ্গিত বুধবারেই দিয়েছিলেন শুভেন্দু। নিজস্ব এক্স হ্যান্ডেলে বিরোধী দলনেতা দাবি করেছিলেন, ‘‘চুক্তি হয়েছে পুলিশ এবং বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর (শাহজাহানের) যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে। কারাগারে থাকাকালীন তাঁকে বিলাসবহুল হোটেলের সুবিধা দেওয়া হবে এবং একটি মোবাইল ফোনও হাতে পাবেন।’’ শুভেন্দু আরও লেখেন, ‘‘এমনকি, উডবার্ন ওয়ার্ডের (এসএসকেএম হাসপাতালে) একটি শয্যা তাঁর জন্য প্রস্তুত এবং খালি রাখা হবে। যদি তিনি কিছু সময় সেখানে কাটাতে চান।’’

বৃহস্পতিবারেও একই সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশের যে দল পরশু দিন (মঙ্গলবার) রাত ১২টার সময়ে শাহজাহানকে তুলেছে, সেই দলে আমার লোক ছিল। সকালেই তারা আমায় খবর দেয় যে, ফলতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ডিআইজি বারাসত রেঞ্জ ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের গাড়িতে।’’ শুধু এটুকুই নয়, শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘ওঁকে (শাহজাহান) আবার এখানে বসিরহাটের মিনাখাঁতে আনে। তার আগে আকুঞ্জিবাগানে ওঁর বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করায়। এবং বাড়ির লোকেদের উনি বলেছেন, আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। তোমরা এখন শান্ত থাকো। আইনের উপরে ভরসা রাখো। আমি ফিরে এসে সব ঠিকঠাক করব।’’ শুভেন্দু বৃহস্পতিবার দাবি তুলেছেন, ইডির হেফাজতে চাই শাহজাহানকে। সিবিআই তদন্তেরও দাবি তুলেছেন।

একই সুর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও। তিনি বলেন, ‘‘শাহজাহান গ্রেফতার মানেই তো সব শেষ হয়ে গেলে না! সন্দেশখালির মা-বোনেরা তাঁদের সম্ভ্রম ফিরে পেলেন না। তাঁদের ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য বিজেপির লড়াই চলবে।’’ একই সঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘‘একা শাহজাহান কিছু করেনি। ওঁর দলবল রয়েছে। ওঁর মাথার উপরেও অনেকের হাত রয়েছে। তাঁদেরও গ্রেফতার করতে হবে।’’

সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেলে ইডির উপরে গ্রামবাসীরা চড়াও হয়েছিলেন। তার পরেই বিজেপি সরব হয়েছিল। এর পরে নতুন করে সন্দেশখালিতে উত্তাপ ছড়ালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হাতে পেয়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। তাদের মূল দাবি ছিল, শাহজাহানের গ্রেফতার। সেই দাবি মিটে গিয়েছে। তবে বিজেপি যে সন্দেশখালিকে ‘হাতছাড়া’ করতে চাইছে না, তা বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের দুই নেতা সুকান্ত-শুভেন্দু।

কলকাতায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বৃহস্পতিবারও চলছে বিজেপির ধর্না। অন্য দিকে, আগামী ৬ মার্চ মোদীর বারাসতের সভায় সন্দেশখালিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তোলা মহিলাদের নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বিজেপির। সেই সঙ্গে শুধু বাংলাতেই নয়, অন্য রাজ্যেও বাঙালি প্রধান এলাকাগুলিতে সন্দেশখালি নিয়ে প্রচার চায় পদ্মশিবির। সুকান্তের কথায়, ‘‘একটি জায়গার শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের সব জেলাতেই অনেক শাহজাহান রয়েছেন। মানুষ তৃণমূলকে ক্ষমা করবেন না। আর বিজেপিও মানুষের লড়াইয়ে সর্বত্র পাশে থাকবে।’’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here