দেশের সময় , উত্তর ২৪ পরগনা : সন্দেশখালিতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

এদিন ত্রিমোহিনী বাজার দিয়ে যাওয়ার সময়, রাজ্যপালের কাছে নিজেদের অভাব অভিযোগ জানান গ্রামের মহিলারা। শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরার অবিলম্বে গ্রেফতারির দাবি করে তাঁরা। শিবু হাজার, উত্তম হাজরার ফাঁসির দাবিও জানান গ্রামের মহিলারা। একইসঙ্গে থানার ওসি ও অন্যান্য আধিকারিকদের দ্রুত বদলি করে দেওয়ার দাবি জানান গ্রামের বাসিন্দারা।

গ্রামের মহিলাদের আশঙ্কা, শেখ শাহজাহান, শিবু হাজরা গ্রেফতার না হলে, পরবর্তীতে আরও অত্যাচার করা হবে।

তাঁদের অভিযোগের কথা  লিখিত ভাবেও জমা দেন তাঁরা। ক্ষোভ উগরে দেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বোসের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারদের কাতর আর্জি, “আমাদের বাঁচান।” রাজ্যপাল তাঁদের কথা শোনেন। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। রাজ্যপাল বলেন, “আমি আপনাদের পাশে আছি। আপনাদের সাহা্য্য করতে যা যা করতে হয় আমি করব । তিনি আরও বলেন, ‘এটা কালী মায়ের মাটি, দুর্গা মায়ের মাটি, এখানে সমস্ত নারী নিরাপত্তা পাবেন “।

এদিন রাজ্যপালের কনভয় যখন উত্তর ২৪ পরগণার মিনাখাঁর ওপর দিয়ে যাচ্ছিল সেই সময় প্ল্যাকার্ড নিয়ে কনভয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান বেশ কিছু লোক। কনভয়ের সামনে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকার দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিশ বেশ কিছুক্ষণের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। মিনাখাঁর পর বামনগাছির দিকে যাওয়ার পথে বামনপুকুর এলাকায় ফের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় রাজ্যপালকে। কয়েকশো মিটার দূরে কালীতলা এলাকায় ফের একই ছবি।

একাধিক বিক্ষোভ পেরিয়ে ধামাখালি পৌঁছন রাজ্যপাল বোস। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে লঞ্চে করে সন্দেশখালি পৌঁছেছেন তিনি। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখা গিয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় থাকতে। রাজ্যপালের কাছে একাধিক দাবি রয়েছে তাঁদের। এর আগে সন্দেশখালির ঘটনায় নবান্নের কাছে রিপোর্ট দাবি করেছিলেন তিনি। তবে, পরিস্থিতির অবনতি ঘটনায় এবার এলাকা পরিদর্শনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

কেরালা সফর কাঁটছাট করে সোমবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন বোস। সেখান থেকে সোজা সন্দেশখালির উদ্দেশে রওনা দেয় রাজ্যপালের কনভয়। বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘আমি এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কেরালা গিয়েছিলাম। সন্দেশখালিতে শিউরে ওঠার মত ঘটনা শুনে সফর কাঁটছাঁট করে চলে এসেছি। নিজের চোখে দেখতে চাই কী হচ্ছে সন্দেশখালিতে’। রাজ্যপালের কনভয় সন্দেশখালি যাওয়ার পথে একাধিকবার বিক্ষোভের মুখে পড়ে। আগে থেকেই জানা ছিল যে সোমবার সন্দেশখালি যাবেন রাজ্যপাল বোস। কিন্তু সব জানা সত্ত্বেও কীভাবে বিক্ষোভের মুখে পড়ল কনভয় তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

অন্যদিকে সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুললেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেশখালিতে যাঁরা অভিযুক্ত এবং যাঁরা বিক্ষোভে প্ররোচনা দিয়েছে সবাইকে গ্রেফতার করা হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন হুগলি জেলার আরামবাগে একটি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী হাওড়ার ডুমুরজেলা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টার ধরার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানেই তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় ইতিমধ্যে অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া যাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং যাঁরা ওখানে অশান্তি করেছে সবাইকে গ্রেফতার হবে।’

প্রসঙ্গত সন্দেশখালি নিয়ে গত কয়দিনের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে। গ্রামবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়েছে, মহিলাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে বলে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপের ব্যর্থতা নিয়ে আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলের একের পর এক নেতৃত্ব।

এর মধ্যেই সন্দেশখালি এলাকার তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সন্দেশখালি কাণ্ডে আরও দুই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান এবং শিবপ্রসাদ হাজরাকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার উত্তম সর্দারকে সাসপেন্ড করার পরেই সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর স্থানীয় বিজেপি নেতা বিক্রম সিং এবং পরবর্তীতে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে গ্রেফতার করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত অধরা রয়েছেন সন্দেশখালির প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিবপ্রসাদ হাজরা।

তবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সন্দেশখালি নিয়ে বিবৃতি দাবি করে এদিন বিধানসভায় তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিজেপি বিধায়করা। সন্দেশখালি তোমার সঙ্গে আছি লেখা টি শার্ট পরে বিধানসভা কক্ষে চলে প্রতিবাদ। এরপরেই শুভেন্দু অধিকারী সহ ছয়জন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here